উত্তর-পশ্চিম চীনের সানসি প্রদেশের রাজধানী সি আন্ শহর প্রাচীন রেশমী পথের আরম্ভস্থল এবং এটি এমন একটি স্থানও, যেখানে চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার সবচাইতে আগে শুরু হয়েছে। সি আনে মোট বিশাধিক মসজিদ আছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ১ হাজার ২শো বছর পুরানো বড় মসজিদ-এর মেঝের আয়তন ১৩ হাজার বর্গ মিটার। সম্প্রতি সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা সি আন বড় মসজিদে গিয়ে চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলণের জাতীয় কমিটির সদস্য, সেই , মসজিদের ইমাম মিঃ মা লিয়াংচির সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
ইমাম মা লিয়াংচি বলেছেন, নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার আগে বড় মসজিদ গুরুত্বর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার পর চীন সরকার মুসলমানদের ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মের উপর বিশেষ মনোযোগ দেয় এবং এই মসজিদ মেরামত ও আরো মজবুকত করার জন্যে ২০ লক্ষ ইউয়ানের বেশী অর্থ বরাদ্দ করেছে। শুধু মসজিদের প্রধান ভবন মেরামত ও মজবুত করার জন্য মোট ২ হাজার ঘন মিটারের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তার জন্যে সি আনের মুসলমানরা খুব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মিঃ মা লিয়াং চি বলেছেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্ততা প্রবর্তিত হবার সুবাদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের লক্ষনীয় পরিবর্তন হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রাও অধিক থেকে অধিকতর স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সংগে সংগে মুসলমানদের ধর্মীয় জীবন স্বাভাবিক হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক গুণগত মানও উন্নত হয়েছে।
তিনি বলেছেন, এখন প্রতিবছর মক্কাগামী হজযাত্রীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। হজ পালনের সুবিধার জন্য সরকার হজযাত্রীদের যোগাযোগ, হোটেল, দোভাষী প্রভৃতি সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আগে মক্কায় হজ করতে যেতে অর্ধেক বছর লাগতে। এখর আসা-যাওয়ার জন্য মাত্র এক মাস লাগে। আগে খরচ বেশী বলে হজ পালন অকল্পনীয় ছিল। এখন অনেকের জন্যে এই খরচ কোনো সমস্যা নয়। এ থেকে বোঝা যায়, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্ততার কল্যাণে মুসলমানদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে।
এখন সি আনের মুসলমানরা যেমন ধর্ম ও দেশপ্রিয়, তেমনি দেশে স্বচ্ছলতা আনার জন্যও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সরকারের সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্ম বিষয়ক নীতির প্রযত্নে সি আনে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়িক ঐতিহ্যও পুরোদমে সম্প্রসারিত হয়েছে। মুসলিম বৈশিষ্টসম্পন্ন রেস্তরা শিল্প দ্রুত প্রসারিক হয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহ্যিক রেস্তরাঁর শাখা জাপান, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশের গড়ে তোলা হয়েছে।
ইমাম মা লিয়াংচি সংবাদদাতাকে আরো বলেছেন, চীনে মুসলমানরা যেমন সব ক'টি জাতির সমতা ও সংহতি বিষয়ক নীতি, তেমনি ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা বিষয়ক নীতিও উপভোগ করেন। চীনের খীষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম আর তাও ধর্মের সংগে চীনের ইসলাম ধর্ম মহলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই সব ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ভারবাসেন এবং মিলিতভাবে নিজেদের মাতৃভূমিকে উন্নত করছেন। তিনি আরো বলেছেনম অর্থনৈতিক অবস্থানও ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার, গণ কংগ্রেস ও রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলণ মুসলমানদের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, প্রতিনিধি ও সদস্য আছেন। তাদের মধ্যে নারী মুসলমার ক্যাডারও কম নন। রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলণে নিজের কাজকর্ম প্রসংগে তিনি অনুভূতির সংগে বলেছেন, আমি চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলণের নবম ও দশম জাতীয় কমিটির সদস্য। সেজন্য আমি খুব আনন্দিত আর উচ্ছ্বসিত বোধ করছি। আমি দেশ, জাতি ও মুসলমানদের জন্য আরো বেশী কাজ করতে পারবো। তিনি এ মত প্রকাশ করেছেন যে, তিনি অব্যাহতভাবে জাতি ও ধর্মের সংহতি বিষয়ক কাজ ভালভাবে করবেন, ভালভাবে দেশের সেবা করবেন এবং চীনের বিভিন্ন জাতির মধ্যেকার সংহতি জোরদার করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন।
|