ইউয়ানসিয়াও উত্সব উদযাপিত হয় চীনা বর্ষের প্রথম মাসের পূর্ণিমা রাতে । এই রাতে চীনারা ঘরে ঘরে লন্ঠন টাঙিয়ে রাখেন বলে এই উত্সবকে লন্ঠন উত্সবও বলা হয় । নানা রকম লন্ঠন দেখা এবং সাদা রঙের ইউয়ানসিয়াও উত্সবে লন্ঠন টাঙাতে হয় কেন ? অনেকের ধারণা এই যে , খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০ সালে চীনের হান রাজবংশের সম্রাট "হান ওয়েনতি"চীনা বর্ষের ঠিক প্রথম মাসের ১৫ তারিখেই সম্রাট হান ওয়েনতি প্রথম সাসের ১৫ তারিখকে ইউয়ানসিয়াও উত্সব বলে ধার্য করেন । প্রতি বছর এই দিন রাতে তিনি রাজপ্রাসাদের বাইরে গিয়ে জনগণের সংগে আনন্দ উত্সব উদযাপন করে ঘুরে বেড়ান । এই দিন চিনাদের ঘরে ঘরে , রাস্তাঘাটে , অলিত-গলিতে আনাচেকানাচে নানা রকম বৈচিত্র্যময় আনুষ্ঠানিকভাবেই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উত্সব বলে নির্ধারণ করা হয় । এর পর থেকে ইউয়ানসিয়াও উত্সবটি উদযাপনের আওতা আর আড়ম্বর আরও বেড়ে যায় । নিয়ম অনুযায়ী পাবলিক জায়গাগুলোতে আর প্রতিটি ঘরেই লন্ঠন আর অন্যান্য বৈচিত্র্যময় সাজসজ্জা দিয়ে উত্সবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় । বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রস্থলের বিপনিপাড়াগুলোতে আর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মহাসমারোহে লন্ঠনপ্রদর্শনির আয়োজন করতে হয় । আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে সবাই সারারাত এই লন্ঠনপ্রদর্শনি দেশেন । ধাঁধা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে , আর ড্র্যাগণলন্ঠন নিয়ে নাচ ইত্যাদি তত্পরতার আয়োজন করে । তার পর বছর বছর এই প্রথা বংশপরম্পরায় চলে এসেছে । ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী খ্রীষ্টীয় ৯১৩ সালে থাং রাজবংশের আমলে রাজধানী ছাংআন মহানগরে বিরাট আকারের লন্ঠনপাহাড় তৈরী করে এই উত্সব উদযাপন করা হয় , লন্ঠনপাহাড়ের উচ্চতা সাত মিটার তাতে রঙবেরঙের পঞ্চাশ হাজার লন্ঠন দেখানো হয় ।
লন্ঠনগুলো সাধারনত ঝকঝকে উজ্জ্বল রঙিণ কাগজ দিয়ে তৈরী , কাগজের লন্ঠনগুলোতে নয়নাভিরাম পাহাড়পর্বত , নদনদীর দৃশ্যাবলী , বিশেষ স্থাপত্যকির্তি, খ্যাতনামা ব্যক্তিবিশেষ , ফুল , গাছ পশুপাখি ইত্যাদির ছবি আঁকা হয় । এক রকম বিশেষ লন্ঠনের নাম ঘোড়া-লন্ঠন । এই ঘোড়ালন্ঠনের ইতিহাস এক হাজার বছরেরও বেশী দীর্ঘ । লন্ঠনে সুনিপুণভাবে তৈরী বিশেষ সরঞ্জাম থাকায় লন্ঠনের ভেতর মৌমবাতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলে তাতে সৃষ্ট তপ্ত বাষ্পের শক্তিতে এক রকম চাকা ঘুরতে শুরু করে , এই সব চাকার ওপর স্থাপিত কাগজের ঘোড়া দ্রুত ছুটে যাওয়ার মতো ঘুরতে থাকে । কাগজের ঘোড়ার ছায়া লন্ঠনের খোলসে প্রতিফলিত হয় চমত্কারভাবে । লন্ঠনের বাইরে থেকে দেখতে গেলে যেন সত্যিই ভেতরে শতশত ঘোড়া ছুটছে ।
ইউয়ানসিয়াও উত্সবে ইউয়ানসিয়াও -পিঠা খাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন । নইলে তা ইউয়ানসিয়াও উত্সব বলা হয় কেন ? খ্রীষ্টীয় ৯৬০ থেকে ১২৭৯ সাল পর্যন্ত চীনের সোং রাজবংশীয় আমলে জনসাধারণের মধ্যে এই উত্সবরের সময়ে এক রকম বিশেষ খাদ্যবস্তু খাওয়া বিশেষ রেওয়াজ হয়ে যায় । এটাই ইউয়ানসিয়াও পিঠা । তা সাধারনত নানা রকম ফলমুল , বিশেষ করে আখরোট ইত্যাদি শুকনো ফল বা মোরব্বা গুড়ো করে পুর তৈরী করে রাখা হয় । তার পর বিনি চালের গুড়ো দিয়ে ছোট ছোট দলা পাকিয়ে তা চ্যাপ্টা করে তার ভেতর পুর দেয়া হয় । তার পর গোটা জিনিসটা গোল আকার করে একটি ছোট সাদা বলের মতো তৈরী করা হয় , তা দেখতে কিছুটা রসগোলার মতো । এটাই সাধারণ ইউয়ানসিয়াও পিঠা । উত্তরচীনের ব্যাপক অঞ্চলে এটাকে ইউয়ানসিয়াও বলা হয় , তবে দক্ষিণচীনে থানইউয়ান বলা হয় ।
|