থিয়ানজিন হচ্ছে চীনের অন্যতম কেন্দ্রীশাসিত মহানগর এবং চীনের তৃতীয় বৃহতম মহানগর।হাইওয়ে ধরে রাজধানী পেইচিং থেকে থিয়ানজিন যেতে মাত্র এক ঘন্টার কিছু বেশী সময় লাগে। গতবারের আসরে আমরা এই শহরের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চিত্রশিল্প আর খাবারের কিছু পরিচয় তুলে ধরেছি। আশা করি, চীনের থিয়ানজিন শহর সম্বন্ধে আপনাদের ধারণা কমবেশি বেড়েছে। আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আপনাদের থিয়ানজিন শহরের বিখ্যাত নদী---হাইহো নদীর তীরে বেড়াতে নিয়ে যাবো। সেখানে আপনারা এই নদীর দু পারের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নদী বরাবর এলাকার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে।
হাইহো নদী থিয়ানজিন শহরের কেন্দ্র ছুঁয়ে বয়ে গেছে এঁকেবেঁকে ।এই নদীকে থিয়ানজিনের মাতৃ নদী বলা হয়।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নদীর কারণে থিয়ানজিনের অনেক উন্নতি হয়েছে।ইতিমধ্যে হাইহো নদী থিয়ানজিন শহরের জন্য অনেক শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে।হাইহো নদীর মোট দৈর্ঘ্য এক হাজারেরও বেশী কিলোমিটার।হাইহো নদী উতর চীনের গুরুত্বপূর্ণ নদনদীগুলোর অন্যতম।হাইহো নদীর উচ্চ অববাহিকায় নয়টি শাখা আছে।এ নয়টি শাখা পাখার মতো ছড়িয়ে রয়েছে। তারপর এ নয়টি শাখার পানি সর্পিল গতিতে থিয়ানজিন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে মিশে গেছে।দীর্ঘকাল ধরে হাইহো নদীর দুই পার থিয়ানজিনের সবচেয়ে জন ব্যস্ত অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যও সবচেয়ে সুন্দর।জাহাজে চড়ে হাইহো নদীর দু তীরের সুন্দর সুন্দর দৃশ্য এবং সৈকত শহরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য উপভোগ করা অবসর কাটানো আর ভ্রমণ করার সময়ে অনেক থিয়ানজিন বাসী এবং পযর্টকদের প্রথম বাছাই। তা ছাড়া, জাহাজে চড়ে হাইহো নদীর দুই পারের বিদেশী স্থাপত্যের শৈলী অনুভব করা তো হাইহো নদীতে ভ্রমণ করার প্রধান বিষয়।ইতিহাসে থিয়ানজিন শহরে বিদেশী কনসুলেট আর বাণিজ্য সংস্থাগুলো সমাবেশিত হতো।সুতরাং হাইহো নদীর দুই তীরে বিপুল পরিমাণ বিদেশী শৈলীর স্থাপত্য আছে।এই নদীর দুই পারের এ সব ইউরোপীয় শৈলীর স্থাপত্যের ছায়া নদীর পানিতে বিম্বিত হয়।জাহাজ থেকে নদীর পানির সীমায় এ সব স্থাপত্যের ছায়া দেখে মনে হয় ইউরোপের কেনো একটি নদীতে পরিদর্শন করছি।সম্প্রতি হাইহো নদীর দুই তীরে ইতালির স্থাপত্য অঞ্চল, রাশিয়ার স্থাপত্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে ফরাসি শৈলী অঞ্চলের নির্মান কাজ পুরোদমে চলছে।থিয়ানজিন শহরের পর্যটন উন্নয়ন কমিটির কার্যলায়ের কর্মকর্তা মিস্টার চিন তিয়ে লীন ব্যাখ্যা করে বললেন, ফরাসি স্থাপত্য অঞ্চল নির্মিত হওয়ার পর, হাইহো নদীর দু পারের বিদেশী স্থাপত্য অঞ্চলের দৃশ্য আরো সুন্দর এবং আরো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হবে।
ফরাশি স্থাপত্য অঞ্চলের আয়তন ৬০০ একর।এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হবে হোমুফান আমোদ-প্রমোদ কেন্দ্র, ফরাসি শৈলীর উদ্যান, ফরাসী স্থাপত্যের সেতু আর সড়ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থিয়ানজিনের শহরের গঠনকাজে দ্রুত উন্নতি হয়েছে।হাইহো নদীর দুই তীরে অনেক আধুনিক উঁচু উঁচু অট্রালিকার আবির্ভাব হয়েছে। এগুলো হাইহো নদীর দু পাশের আধুনিক দৃশ্যের রূপ ধরেছে।পর্যটকরা এ সব থেকে চীনের তৃতীয় বৃহতম শহর---থিয়ানজিনের সম্মৃদ্ধি আর আধুনিককতা অনুভব করতে পারেন।হাইহো নদীর দুই পারের পরিবর্তন সম্বন্ধে বলতে গেলে, নি:সন্দেহে থিয়ানজিনবাসীদের অনুভূতি সবচেয়ে গভীর।উ লি মিন হলেন হাইহো নদীগামী একটি জাহাজের কাপ্তান।৩০ বছর ধরে তিনি হাইহো নদীতে জাহাজ চালিয়ে এসেছেন।সুতরাং তাকে হাইহো নদীর দু পারের পরিবর্তনের সাক্ষী বলে গণ্য করা যায়।তিনি সংবাদদাতাকে বললেন,
১৯৭০ সাল থেকে আমি এখানে জাহাজ চালাতে শুরু করি। হাইহো নদীর দু পারের পরিবর্তন সত্যি খুব বিরাট।তখন এই নদীর দুই পারে উচু উচু অট্রালিকা প্রায় দেখা যেত না। অতীতে লিজা নামক ভ্রাম্যমান সেতু এত জীর্ণ ছিল যে, তা দেখলে খুব খারাপ লাগতো।দেখুন, এখন এই সেতু খুব সুন্দরভাবে পূণর্নিমিত হয়েছে।দূর থেকে দেখলে সত্যি অত্যন্ত চমতকার।হাইহো নদীর দুই পারে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা নিয়ে থিয়ানজিনবাসীরা খুব গর্বিত বোধ করেন। সুতরাং থিয়ানজিনের স্থানীয় লোকেরা এই নদীতে পরির্দশন করতে পছন্দ করেন। এই নদীর দু পারের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্থানীয় লোকেরা গোটা থিয়ানজিন শহরের পরিবর্তনও দেখতে পারেন।প্রত্যেক সপ্তাহের শেষে হাইহো নদী বরাবর পযর্টন এলাকায় অজস্র পর্যটকদের আকর্ষণ করা হয়।পর্যটকদের মধ্যে যেমন রয়েছে বয়স্ক দম্পতি, তেমনি রয়েছে বাবা-মায়ের সংগে থাকা ইস্কুলে সদ্য ভর্তি হওয়া ছেলে-মেয়েরা। জাহাজ থেকে তারা হাইহো নদির দু পারের দৃশ্য দেখার সংগে সংগে দুই তীরের সড়ক আর সেতুর নামও খাতায় বা কাগজে লিখে নিয়েছে।থিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর কর্মচারী মিস লি শিয়েন এক জন পুরাতন থিয়ানজিনবাসী, কারণ তিনি থিয়ানজিন শহরে জম্মেছেন আর বড় হয়েছেন।তিনি বললেন, নদীর বুকে জাহাজে চড়ে পরিদর্শন করার সময়ে তিনি লক্ষ্য করেছেন, থিয়ানজিন শহরের পরির্বতন সত্যি বিরাট।
হাইহো নদীর দুই পারে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যায়না।আমার হাইহো নদীতে জাহাজে ভ্রমণ করার লক্ষ্য হলো এই যে, এক দিকে আমি থিয়ানজিন শহরের পরিবর্তন দেখতে চাই, অন্য দিকে আমি সমুদ্রের কয়েকটি দর্শনীয়স্থানে যেতে চাই। কারণ আমি শুনেছি, বতর্মানে সমুদ্রে বেশ কয়েকটি দর্শনীয়স্থান খোলা হয়েছে।এক কথায় আমি থিয়ানজিন শহরের পরিবর্তন স্বচক্ষে দেখতে চাই।হাইহো নদী যাতে একটি প্রকৃত পর্য্টনের নদীতে পরিণত হতে পারে, সেই জন্য হাইহো নদীর দুই পারে থিয়ানজিন শহরের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প পুরোদমে চলছে।ভবিষ্যতে হাইহো নদীর দু পারে ধারাবাহিক পার্ক ও চত্বর নির্মান করা হবে, তা ছাড়া নদীতে বেশ কয়েকটি পর্যটন প্রকল্প নতুন করে নির্মিত হবে।তখন পর্যটকরা এখানে আরো বেশী দৃশ্য উপভোগ করতে পাকবেন।থিয়ানজিন শহরের হাইহো নদীর পযর্টন কেন্দ্রের পরিচালক লিও চিন ইয়ুন সাংবাদদাতাকে বললেন, হাইহো নদীর দুই পারে বহুমুখী উন্নয়ন আর সংস্কার প্রকল্প সম্পন্ন হবার পর নদী বরাবর দৃশ্য আরো সুন্দর হবে , এ সব দর্শনীয় স্থানের টানে আরো বেশী পযর্টক হাইহো নদী বরাবর পযর্টন এলাকায় দেখতে আসবেন।তিনি সংবাদদাতাকে বললেন,
হাইহো নদীকে পৃথিবীর বিখ্যাত নদীতে পরিণত করার জন্য থিয়ানজিন মহানগর সরকার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে।২০০৫ সাল অবধি অর্থাত হাইহো নদীর পূণবিন্যাসের কাজ শেষ হওয়ার পর হাইহো নদীর দুই পারের দৃশ্য আরো সুন্দর হবে।যার ফলে , কাককাআকাকাকাকাআকক হাইহো নদীর পযর্টন শিল্প নতুন সুযোগ বয়ে আনবে।তখন হাইহো নদী বরাবর এলাকার সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য আরো বেশী পযর্টকরা শিয়ানজিন শহরে আসবেন।পযর্টকদের চাহিদা অনুযায়ী, আমরা হাইহো নদীকে কেন্দ্র করে আরো কয়েকটি পযর্টন লাইল সংযুক্ত করবো।আমরা থিয়ানজিনের সুন্দর দৃশ্যের আরো বিশদ পরিচয় পযর্টকদের কাছে তুলে ধরবো।জানা গেছে, হাইহো নদীর পর্যটন লাইন হয়তো থিয়ানজিন শহরের কেন্দ্র স্থান থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।সুতরাং ভবিষ্যতে পযর্টকরা যেমন থিয়ানজিন শহরের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন, তেমনি সমূদ্রের সুন্দর দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন। সাগরের মোহনায়, নীল আকাশ, বিশাল সমূদ্র, সমূদ্রে ফুলে ফুলে ফেনিয়ে উঠা সাদা সাদা ঢেউ এবং উড্ডয়নশীল পাখিগুলো , সমুদ্রের সুন্দর পরিবেশ পযর্টকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি এনে দিয়েছে।
|