উত্তর-পশ্চিম চীনের সিন চিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তরাংশে আলেটাই এলাকায় একটি গল্প খুব জনপ্রিয়, একজন পশুপালক গিরিখাতে পশু চরাচ্ছিলেন, হঠাত্ অসাবধানে একটি পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছেন। রেগে তিনি পাথরটিকে লাথি মেরেছেন। লাথির আঘাতে অভাবনীয়ভাবে দেখা গেছে, ঐ পাথরটি কোনো সাদামাটা পাথর নয়। তা হলো একটি উঁচু মানের সোনার টুকরো। আর যায় কোথায়? পশুপালক আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। এ গল্পের সংগে আরেকটি প্রবাদ খুব প্রচলিত, "আলেটাইএর ৭২টি গিরিখাত, প্রত্যেকটিতে সোনা পাওয়া যায়। কল্পনাই করা যায় না, এখানকার সোনার সম্পদের মূল্য কত অপরিসীম।
প্রকৃত পক্ষে, সোনার খনি ছাড়াও বিশাল সিন চিয়াংয়ের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আরও রয়েছে তেল, গ্যাস, কয়লা, বায়ু শক্তি. সৌরশক্তি ইত্যাদি সম্পদের মজুদ, যা চীনে সবচেয়ে বেশী। সিন চিয়াংএর ভূতত্ত্ব ও খনিজ ব্যুরোর মহাপরিচালক থিয়ান চিয়ান রোং বলেছেন, বর্তমানে সিন চিয়াংয়ে ৮৫ ধরনের খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে একদিকে তেল ও গ্যাসের মজুদের পরিমান সারা দেশের মজুদের পরিমানের ৩০ শতাংশের বেশী, অন্যদিকে কয়লা সম্পদের মজুদের পরিমান সারা দেশের মজুদের পরিমানের ৪০ শতাংশের বেশী।
সিন চিয়াংয়ের খনিজ সম্পদ সংক্ষেপে পাঁচটি কথায় বর্ণনা করা যায়: ১, সিনচিয়াংয়ের খনিজ সম্পদের অনুকূল আবহাওয়া চমত্কার, সম্পদের পরিমানও অনেক বেশী। ২,সম্পদ বিস্তীর্ণ ছড়িয়ে আছে। ৩,খনিজ পদার্থের প্রকার সংখ্যা বেশী। ৪, সম্পদের মজুদের পরিমান সমৃদ্ধ। ৫, খনিজের গুণমান ভালো। সিন চিয়াং শুধু খনিজ সম্পদই সমৃদ্ধ নয়,উপরন্তু ওখানে আলো , তাপ ও বায়ুবিক শক্তিও খুব সমৃদ্ধ। ইউরেশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগে সিন চিয়াং অবস্থিত । দিনের তাপমাত্রা ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক এবং খরা, দীর্ঘকালীণ সূর্যের আলো ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে সিন চিয়াংএ অনেক সৌর শক্তি ও বায়ুবিক শক্তি আছে।
সিন চিয়াংয়ের নতুন শক্তির গবেষণা সংস্থার পরিচালক লুশাওচিং বলেছেন, এ কয়েক বছর ধরে সিনচিয়াং বরাবরই নতুন শক্তির ওপর গবেষণা ও উন্নয়ন করে আসছে। বর্তমানে সৌর শক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
সিনচিয়াংয়ে সৌরশক্তি থেকে তাপ ও বিদ্যুত্ উন্নয়ন ও ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।যেমন সৌরশক্তি চালিত হিটার,উত্তাপিত ঘর, উনুন ও বিদ্যুত্ ইত্যাদি। বর্তমানে সৌরশক্তি চালিত হিটারের ব্যবহার প্রতি বছর ৩০ শতাংশ করে বাড়ছে। সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত্ কারখানা কৃষক ও পশুপালকদের বিদ্যুত্ ব্যবহার, রেডিও শোনা ও টেলিভিশন দেখার কাজে লাগবে। বর্তমানে এটা সারা সিনচিয়াংএর ১৬টি অঞ্চলে ছাড়িয়ে পড়েছে। ফলে ৩০ লক্ষ কৃষক ও পশুপালকদের বিদ্যুত্ ব্যবহারের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।
এছাড়াও সিনচিয়াংএর বায়বিক শক্তিও খুব সমৃদ্ধ। যে বায়ুবিক শক্তি উন্নয়ন ও ব্যবহার করা যায় , তার মজুদের পরিমাণ সারা চীনের মজুদের পরিমাণের ৪০ শতাংশ। উত্তর সিনচিয়াংয়ে অবস্থিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় বায়ুবিক কারখানা হচ্ছে তাবান বায়বিক কারখানা। আপনি কারখানাটির পাশ দিয়া গেলে, চোখে পড়বে রাস্তার দু'পাশের গোবি মরু অঞ্চলে অগুনতি সাদা রঙের বড় বড় বায়ুচালিত কল। বায়ুচালিত কলের পাখা আস্তে আস্তে ঘুরছে। কি সুন্দর দৃশ্য! সংগে সংগে সিনচিয়াং -এর বিভিন্ন জায়গায় শিল্প ও কৃষির জন্য বিদ্যুত্ যুগিয়ে দেয়।
সিনচিয়াং-এর বায়ুবিক শক্তি কোম্পানির ম্যানেজার ওয়াং লিমিং বলেছেন, তাবান শহর বায়ুবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র চীনের প্রথম বায়বিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র। গত দশ বছরের উন্নয়নের ফলে বর্তমানে এই কেন্দ্রের ১শোটি বায়ুচালিত বৈদ্যুতিক যন্ত্র কেন্দ্রের আছে"। তিনি আরও বলেছেন, "তাবান শহরের বায়ুবিক এলাকা পলনালী ভূমিতে অবস্থিত। এটাই দক্ষিণ ও উত্তর সিনচিয়াংয়ের বায়ু চলাচলের পথ। বায়ুবিক শক্তি খুবই সমৃদ্ধ বলে সিনচিয়াংকে নয়টি বায়ুবিক এলাকার অন্যতম ও চীনের উত্তম বায়বিক শক্তির শর্তযুক্ত এলাকাগুলোর অন্যতম বলা হয়। এই এলাকায় ১ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশী এলাকায় বায়ুচালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন যন্ত্র বসানো যায়। এখানে উন্নয়নের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখা যায়"।
সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদকে অর্থনৈতিক কল্যাণে সদ্ব্যবহার করা সিনচিয়াংয়ের জনগণের সম্মুখীণ একটি বড় প্রকল্প। চার বছর আগে "চীনের পশ্চিমাঞ্চলের গ্যাস পূর্বাঞ্চলে পাঠানো" প্রকল্প সিনচিয়াংয়ে শুরু হয়েছে। একটি ৪হাজার ২শো কিলোমিটার লম্বা মোটা পাইপের মাধ্যমে সিনচিয়াংয়ের গ্যাস তারিমু থেকে পশ্চিম, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের নয়টি প্রদেশ হয়ে অবশেষে সাংহাইয়ে পৌছানো যায়। এ প্রকল্পের কল্যাণে সিনচিয়াংয়ে আরও ১শো কোটি রেনমিনপি'রও বেশী আয় হয়।
১৬লক্ষ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের সমৃদ্ধ খনিজ , জল, ভুমি, সৌরশক্তি ইত্যাদি সম্পদ এবং তা ছাড়াও প্রচুর পর্যটন সম্পদ নানা দেশ ও অঞ্চলের বন্ধুদের কাছে আকর্ষণীয়। চীনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত বলে সিনচিয়াং চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ দরজা। বর্তমান সিনচিয়াংয়ের সংগে সারা বিশ্বের ৯০টিরও বেশী দেশে আর্থ-বানিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চমত্কার যোগাযোগ ব্যবস্থা, জলসেচ, শক্তি ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ায় সিনচিয়াংয়ের অবকাঠামো ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। স্বশাসন সরকারের উপ-চেয়ারম্যান ওয়াং চিন সিয়াং সিন চিয়াংয়ের বিনিয়োগের পরিবেশ উল্লেখ করে বলেছেন, "অন্যান্য প্রদেশে যে সুবিধা জনক নীতি প্রবর্তিত হয়, সিনচিয়াংয়েও তা প্রবর্তিত হয়ে যাবে। যেমন কর, আদায়, দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতা, স্থল বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়া হয়। সিনচিয়াং প্রশাসন বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করবে। যেখনে পুজি আমদানি ও রপ্তানি খুবই সহজ, বিনিয়োগকারীদের নিজেদের নিরাপত্তা, তাদের নিয়োজিত উচ্চ প্রযুক্তিবিদদের নিরাপত্তা ও তাদের পণ্য পরিবহণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ শর্ত সৃষ্টি করতে হবে"।
বিশেষ আবহাওয়ার কারণে সিনচিয়াংয়ে উত্পন্ন ফলমূল খেতে খুব মজা। এখানে পোকার আক্রমণ প্রায় ঘটে না, কাজেই এখানকার সব পণ্য প্রাকৃতিক সবুজ খাবার। আপনি যদি আগ্রহী হন তাহলে এখানে চলে আসুন। আপনি হাতাশ হবেন না বলে আমরা আশাবাদী।
|