চীনের দক্ষিণ-পূবাঞ্চলের ফুচিয়েন প্রদেশে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে আপনি নদীর স্বচ্ছ পানির প্রবাহের সংগে সংগে যেমন দু পারের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন, তেমনি সুগন্ধ পাহাড়ী চা খেয়ে চীনের সুদীর্ঘকালের চা সংস্কৃতি অনুভব করতে পারেন।এই জায়গা হলো ইউনেস্কোরনির্বাচিত প্রাকৃতিক আর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের উই পাহাড়।এই পাহাড়ের যে অঞ্চল বিশ্ব উত্তরাধিকারতালিকাভূক্ত হয়েছে আয়তন প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার।আয়তনের দিক থেকে এটা হলো বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার-ভুক্ত অঞ্চল।তবে বর্তমানে পর্যটকরা এই পাহাড়ের যে সব জায়গায় যেতে পারেন সে সব জায়গা হলো প্রধানত উই পাহাড়ের প্রধান দর্শনীয়স্থান।এই অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটার।সেখানে গুহা, উপত্যকা, শৃংগ আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদনদী প্রভৃতি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে আছে ।সুতরাং ইউ পাহাড় বলে "সবুজ পানি লাল পাহাড়কে" আখ্যায়িত করা হয়।এই দৃর্শনীয়স্থানে আছে, নয় বাঁক নদী, তিয়েনইউ শৃংগ, ঠাওয়ান গুহা এবং আরো কতকি।যদি উই পাহাড়ের সার্বিক প্রাকৃতিক সৌদর্য্য অনুভব করতে চান তাহলে নয় বাঁক নদী থেকে আমাদের ভ্রমন শুরু করি।
নৌকার মাঝি ম্যাডাম লিন শিও ইয়েনের গানের মধ্যে আআদের নদীতে ভেসে যাওয়ার যাত্রা শুরু হল।বাঁশের ভেলায় চড়ে নয় বাঁক নদীতে ভেসে যাওয়ার সময়ে পর্যটকরা মাথা উপরে তুলে পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে পারেন, আবার মাথা নীচে নামিয়ে স্বচ্ছ পানি উপভোগ করতে পারেন।নদীর পানির কুলুকুলু আওয়াজ কানে সংগীতের মতো বাজে এবং সহজেই নদীর পানি হাত দিয়ে র্ষ্পশ করা যায়। বাঁশের ভেলা কখনো কখনো প্রচন্ড জলস্রোতেসামনের দিকে এগিয়ে যায় , আবার কখনো কখনো শান্ত আর আয়নার মতো জলের ওপর ভেসে যায়।এই বাঁশের ভেলায় চড়ে নদীতে ভাসার সময়ে লোকেরা যেমন বিপদপূর্ণ আমোদ-প্রমোদ অনুভব করতে পারেন , তেমনি ছবিতে মানুষের ভ্রমনের আনন্দও অনুভব করতে পারেন।পন্ডিত সু সু ইয়াং বলেছেন, নয় বাঁক নদীর দৃশ্য এক সময় অনেক লোককে অভীভুত করেছে।
ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা উই পাহাড় পরিদর্শন করার সময়ে এই নদীতে ভ্রমন করেছিলেন।এর পর তারা আবেগের সংগে বলেছেন, এই সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য , চীনের ছবির মতোসংস্কৃতি সত্যই পৃথিবীর স্বর্গ।বাঁশের ভেলা ভেসে যাবার সময় নদীর দু পারের পাহাড় আস্তে আস্তে পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে। নৌকার মাঝির চিত্তাকর্ষক কিংবদন্তী শুনতে শুনতে অজান্তে আমাদের যাত্রার সমাপ্তি হল।হয়তো উই পাহাড়ের কল্যাণে স্থানীয় উদ্ভিদ এত সুন্দর। সেখানকার ইয়ান চা অত্যন্ত ভাল।সুতরাং দৃশ্য উপভোগ করার সংগে সংগে অনেক পর্যটককে চাও আস্বাদন করতে হবে।উই পাহাড়ের ডাহোপাও নামে চা দেশ-বিদেশে বিখ্যাত।এই চা চাষ করার ইতিহাস ৩৫০ বছরেরও বেশী দীর্ঘ বলে এই চাকে খুবই মূল্যবান বলে মনে করা হয়।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ওখানে এই ধরনের চা গাছ মাত্র কয়েকটি আছে।বছরে এ সব গাছ থেকে মাত্র ৪০০ গ্রামের মতো কাছাকাছি চা উদপাদিত হয়। বর্তমানে এই বিশিষ্ট চায়ের কৃত্রিম প্রজনন হচ্ছে। এক কাপ উই পাহাড়ের চায়ের অসীম স্বাদ।ফোচিয়েন প্রদেশের চা সংস্কৃতি গবেষণালয়ের চেয়ারমান ওয়াং শিয়েন গান সংবাদদাতাকে বললেন, উই পাহাড়ে চা খাওয়া একটি অত্যন্ত জটিল ব্যাপার।
উই পাহাড়ে বসবাসরত লোকদের চা খাওয়ার অভ্যস আছে।তাদের চা খাওয়া শুধু যে এক রকমের বস্তুগত উপভোগ তাই নয়, একটি আত্মিক উপভোগও বলেও মনে করা হয় ।চা আস্বাদন করার সময় সরাসরি গিলে ফেললে চলবে না।চা মুখে কয়েক বার গলগলা করতে হবে, যাতে মুখের বিভিন্ন অংশে চার স্পর্শ লাগে।শুধু এভাবে আস্বাদন করলেই এই চায়ের স্বদ পুরোপুরি পাওয়া যায়।উই পাহাড়ে প্রত্যেক দিন বেশ কয়েকটি আর্দশমূলক চা বানানোর প্রদর্শনী পরিবশন করা হয়।পর্যটকরা প্রদর্শনী দেখে উই পাহাড়ের চা বানানোর প্রণালী জেনে নিতে পারেন।
উই পাহাড়ের চা সত্যই অদ্বিতীয়।তা ছাড়া এখানকার প্রাণী ও উদ্ভিদের রকমারিতাও পৃথিবীতে কম দেখা যায় না।স্থানীয় কর্মচারী চো শিন ছিও সাংবাদদাতাদের বলেছেন , উনবিংশ শতাব্দীতে ফ্রান্সের মিশিনারি আরমানড ডাভিড যিনি এক সময় চীনের সিছুয়ান প্রদেশে মূল্যবান প্রাণী ---প্যান্ডা আবিষ্কার করেছিলেন তিনি উই পাহাড়ে এসে পড়েন।গুওয়াডেন নামে একটি ছোট গ্রামে তিনি একটি গীর্জা গড়ে তুলেন।তিনি ধর্ম প্রচার করার পাশাপাশি প্রাণী আর উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন।তিনি এখানে অজস্র নতুন প্রাণী আর উদ্ভিদের রকমারিতা আবিষ্কার করেছেন। এগুলোর মধ্যে পাখির নতুন প্রজাতিরসবচেয়ে বেশী।সুতরাং এই ছোট ছোট গ্রাম বিশ্বের অত্যন্ত বিখ্যাত পাখির নমুনা উত্পাদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে।মিষ্টার চৌ স্মরন করে বলেছেন,
ডাভিড ১ লক্ষ ৫০ হাজার প্রাণী আর উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে ইউরোপে ফিরে যান । তখন ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি হল।যার ফলে গুওয়াডেন গ্রাম বিশ্বের একটি অত্যন্ত বিখ্যাত জায়গায় পরিণত হয়েছে।এ কথা বলা যায় যে, বিশ্বের জীববিদ্যা মহলে ফোচিয়েন সম্বন্ধে অজ্ঞাতএমন লোক অনেক , কিন্তু গুওয়াডেন গ্রাম না জানেন এমন লোকসংখ্যা খুম কম।
|