বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির সংগে সংগে চীনের সানতুং প্রদেশের গ্রামান্চলে অধিক থেকে অধিকতর কৃষকরা আর সহজভাবে প্রযুক্তি অধ্যয়নে সন্তুষ্ট হচ্ছেন না । বরং তারা নিজেদের উদ্যোগে "পারিবারিক বৈজ্ঞানিক গবেষনাগার" খুলে বৈজ্ঞানিক গবেষনা চালাচ্ছেন । যাতে তাদের নিজেদের বৈজ্ঞানিক গবেষনায় লব্ধ সাফল্য সচ্ছল জীবনের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা পালন করতে পারে ।
নিন্নান জেলার সি ফু রং গ্রামের অধিবাসী ছুন হোন লি -প্রতিষ্ঠিত ভোজ্য ছত্রাক গবেষনাগার সম্প্রতি পাই লিন কু নামে এক ধরণের নতুন ছত্রাক লালন করেছে। বাজারে এই ধরণের ছত্রাক বিক্রিহওয়ার সংগে সংগেই তার বিরাট চাহিদা পড়ে । এখন তার চাহিদা মেটানোই যাচ্ছে না । স্থানীয় কৃষকদের জন্য ধনী হওয়ার আরেকটি পথ উন্মুচিত হয়েছে । ছুন হোন লি সবসময় কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধ্যয়ন করতে খুব ভালবাসেন । নিজের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত মান উন্নত করার জন্য তিনি উনিশশো চুরানব্বই সালে ভোজ্য ছত্রাক গবেষনাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের বাড়ীতে পরীক্ষাগার খুলেন । গত দশ বছরের প্রতিটি বছরেই তিনি মোটামুটি গড়পড়তা একটি করে নতুন ধরণের ছত্রাক উদ্ভাবন করেছেন । তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে শুধু নিজেই ধনী হন নি , বরং তার আশেপাশের অনেক গ্রামের কৃষকদেরও উপকার হয়েছে ।
নিন্নান জেলায় ছুন হোন লি'র মতো কৃষক আরো অনেক রয়েছেন । গোটা জেলায় কৃষকদের নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ধান গবেষণাগার , চা গবেষণাগার , শাকসব্জী গবেষণাগার , ফলমূল গবেষণাগার ইত্যাদি "পারিবারিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারের সংখ্যা হয়েছে চুয়াল্লিশটি । নিন্নান জেলা সরকার জেলা , মহকুমা ও গ্রাম পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেসরকারী বৈজ্ঞানিক গবেষনা শক্তির বিকাশের উপর গুরুত্ব দেয় এবং যাতে কৃষকরা নিজের উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক গবেষনাগার খোলা , দৃষ্টান্তমূলক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ঘাঁটি স্থাপন আর পরীক্ষা ঘাঁটি প্রতিষ্ঠায় উত্সাহ-উদ্দীপনা পান সেজন্য তাদের অনুকূল নীতি প্রকাশ করে পুজি ও প্রযুক্তিগত সমর্থন দেয় । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা জেলায় কৃষকদের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারগুলোর একশোটিরও বেশী বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ সাফল্য জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে এবং আশাপ্রদ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ফলপ্রসূতা পাওয়া গিয়েছে ।
সানতুং প্রদেশে কৃষকদের নিজেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক গবেষনাগারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি হচ্ছেন চীনের বিখ্যাত "ভুট্টা-রাজ" লি তেন হাই প্রতিষ্ঠিত লাইচৌ শহরের ভুট্টা গবেষনাগার । এই বৈজ্ঞানিক গবেষনাগার পরে সম্প্রসারিত হয়ে লাইচৌ শহরের কৃষিবিজ্ঞান একাডেমীতে পরিণত হয়েছে । লি তেন হাই'ও একজন সাধারণ কৃষক থেকে তেন হাই বীজ শিল্প কোম্পানির ডিরেক্টর , জাতীয় ভুট্টা প্রকল্প প্রযুক্তি গবেষনা কেন্দ্রের সানতুং প্রদেশের পরিচিলক এবং কাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়েছেন । সংকর ভুট্টা ক্ষেত্রে , বিশেষ করে উচ্চফলনশীল ভুট্টা লালন ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন । যে বছরে সারাদেশের সবচেয়ে বেশী জমিতে লি তেন লি'র স্বহস্তে লালিত চল্লিশটিরও বেশী শ্রেষ্ঠ ভুট্টার বীজ বপন করা হয়েছে সে বছর সারাদেশের একতৃতীয়াংশেরও বেশী আবাদী জমিতে সেই বীজগুলো বপন করা হয়েছে ।
|