v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-11 12:36:59    
পাহাড়ী গ্রামের সচ্ছলতার পথের অগ্রগামী উ দাও গুও

cri

    উ দাও গুও পুর্বচীনের সান তং প্রদেশের একজন সাধারণ কৃষক , তিনি যে দুটো কাজ করে সুখ্যাতি অর্জন করেছে তা হল ,এক , তিনি তাঁর জন্মস্থানের সবচেয়ে গরীব গ্রামকে খ্যাতনামা সচ্ছল গ্রামে পরিণত করেছেন ,দুই ,তিনি তাঁর জন্মস্থানে একটি জাতীয় পর্যায়ের পর্যটন এলাকা গড়ে তুলেছেন। আমাদের সংবাদাদাতার নেয়া সাক্ষাতকারে তিনি প্রথমেবললেন:আমার নাম উ দাও গুও ,ডাক নাম গুএ ছিং , ১৯৪৯ সালের পয়লা অক্টবর আমার জন্ম ।

    উ দাও গুওকে দেখতে৫৫ বছরের কম বয়সী মনে হয় ।তার চুল কালো , কায় ঋজু , কন্ঠস্বর ঈষত রুক্ষ,কিন্তু জোরালো । ওয়েহাই শহরের উপকন্ঠের জু ফে গ্রামে তাঁর দুতলা বাড়ি ।আঙ্গিনায় নানা রঙের ফুল । বসার ঘর আর শোবার ঘরে এয়ারকনডিশনার , রঙিন টি ভি সেট সহ নানা রকম বাস্তু বৈদ্যুতিক যন্ত্র সাজানো।

    প্রজাতন্ত্রের সমবয়সী উ দাও গুওয়ের জীবনযাত্রাকে নয়াচীনের পল্লিগ্রামের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বলা যায় । ছোটোবেলায় তাঁর পরিবার খুবই গরীব ।তাঁর জন্মের ৩৬দিন পর তাঁর বাবা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান । তাঁর মা আটটি ছেলেমেয়ে নিয়ে কুঁড়ে ঘরে থাকতেন ।অভাব-অনটন যে তাদের নিত্যসংগী তা উ দাও গুওয়ের মনে গভীর দাগ কেটেছে ।

    তিনি বলেছেন ,বয়স যখন অল্প ছিল তখন মোজা পরতাম না , সারা বছরে শুধু একবার মাংস খাওয়ার সুযোগ মিলত ।তখন দেশের নির্মানকাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে । পল্লিগ্রামে যে কঠিন জীবন কাটাতে হয় তা বোধগম্য ।তবে আমাদের জুফু গ্রামঅনুন্নত পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত । কৃষি উন্নয়নের গতি অতি মন্থর ।

    গত শতাব্দীর সত্তরের দশকেও জুফু গ্রামের দারিদ্র্য ঘোচে নি , কোনো কোনো যুবক অর্থাভাবে বিয়ে করতে পারতেন না ।উ দাও গুও গন মুক্তিফৌজে যোগদান করে ছয় বছর মাতৃভুমি রক্ষার দায়িত্ব পালনের পর যখন অবসর গ্রহণ করেন , তখনো জুফু গ্রামের চেহারার তেমন কোনো পরিবতন হয় নি ।তাঁর বিয়ে হয় ছোটো একটি কুঁড়ে ঘরে ।স্বামী- স্ত্রী এক বছর চাষ করে যে ১৩৮ ইউয়ানের আয় হয় তা দিয়ে একটি সাইকেলও কেনা যায় না ।

    গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে চীনের গ্রমাঞ্চলে সংস্কার অভিযান আরম্ভ হয় ।উ দাও গুও প্রথমছত্রাকের চাষ করে , মুরগী পালন করে , ঝাড়ু তৈরী করে সচ্ছলতার পথ সন্ধানে আত্মনিয়োগ করেন ।পরে তিনি সাহসের সংগে ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে লোকসান জর্জরিত একটি গাড়ি মেরামতের কারখানার ঠিকা গ্রহণ করেন।তখনকার দিনে গ্রামাঞ্চলের ট্রাক্টরের চাহিদা উপর্যুপরি বাড়ছিল ,তদন্ত চালানোর ভিত্তিতেতিনি ট্রাক্টরের ওয়েল পাম্প তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন ।তার কারখানের তৈরী প্রচুর ওয়েল পাম্প বাজারে বিক্রি হয় এবং প্রথম বছরেই তাঁর কারখান লাভের মুখ দেখে ।

    উ দাও গুওয়ের নেতৃত্বে জুফু গ্রামের কৃষকের জীবনযাত্রার মান যখন দিনদিন উন্নত হচ্ছিল তখন উ দাও গুও টের পেলেন পর্যটন শিল্পতাদের উপাজনের একটি নতুন প্রশস্তপথ ।

    পর্যটন শিল্প সমাজ উন্নয়নের প্রতীক । আমাদের এখানে দুটো প্রাচীন কীর্তি আছে । একটা হলো , একটি হাজার বছরের গিঙকো গাছ , অন্যটি হলে পাহাড়ী ঝরনা ।

    জাফু গ্রামের পেছনের সেনসুই গুয়ান পাহাড়ে দাও ধর্মের একটি মন্দির ছিল । গত শতাব্দীর নববইয়ের দশকের প্রথম দিকে উ দাও গুও ও জুফু গ্রামের কৃষকরে মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে পর্যটন এলাকা গড়ার উদ্যোগ নেন । দশ বছর কেটে যাওয়ার পর সেনসুই গুয়ান পাহাড় জাতীয় পর্যায়ের তৃতীয় শ্রেণীর পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে ।পাহাড়ী পথ বেয়ে উপরে গেলে গাছগাছালির মধ্যে সেনসুই ঝরনা , মহিমাময় সানছিন মন্দির , হাজার বছর বয়সী গিঙকো গাছ , নয়টি সোনালী ড্রাগনশোভিত প্যাভিলিয়ন এবং শতাধিক জেনারেলের হস্তলিপি সম্বলিত টানা বারান্দা একে একে চোখে পড়বে ।প্রতিবছর দেশবিদেশের কয়েক লক্ষ পর্যটক এখানে ভ্রমন করতে আসেন ।কৃষকদের মধ্যে কেউ কেউ গাইডের কাজ করেন ,কেউ কেউ স্থানীয় পন্যদ্রব্য বিক্রয় করেন , কেবল পর্যটনশিল্পে তাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার ইউয়ানেরও বেশী । গত বছর পর্যটনশিল্পে জুফু গ্রামের আয় প্রায় ৭০ লক্ষ ইউয়ান । এখন আশেপাশের গ্রামেরমেয়েরা জুফু গ্রামের জোয়ান ছেলেদের বিয়ে করতে উদ্গ্রীব ।

    কৃষক উ ইয়ুন সং গর্বের সংগে সি আর আইয়োর সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন :উ দাও গুও নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে হাত দিতে কখনো দ্বিধাবোধ করেন না।আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি ।তিনি যা বলেন আমরা তাই করি ।তার পরিচালনায় আমারা ওয়েল পাম্প তৈরী করেছি এবং পর্যটন এলাকা গড়ে তুলেছি । দুটো প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় আমাদের অভাব অনটন ঘুচেছে ,আমাদের গ্রামেরপরিবেশের উন্নতিও হয়েছে । তাই আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ

    তবে উ দাও গুও মনে করেন , চীন সরকারের নির্ভুল নীতির কল্যানেই তাঁর গ্রাম নতুন রুপ ধারন করতে পেরেছে ।

    তিনি বলেছেন :আমার এখনো মনে আছে সরকারের তখনকার একটি শ্লোগান, দারিদ্র্যকে বিদায় দেয়ার জন্য কারখানা স্থাপন করুন ! সরকারের নীতির আলোকে আমরা ওয়েল পাম্প তৈরীর কারখানা স্থাপন করেছি । চীনের প্রয়াত নেতা তেংসিয়াও পিং তাঁর ভাষনে যে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের গুরুত্ব উল্লেখ বলেছেন তা থেকে আমরা স্থানীয় পর্যটন এলাকা গড়ার উত্সাহ পেয়েছি । দশ বারো বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে ,আমরা সঠিক পথ ধরে চলেছি ।

    উ দাও গুও উত্ফুল্ল হয়ে সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন যে ,তাঁর ৯৮বছর বয়স্ক মায়ের স্বাস্থ্য এখনো খুবই ভালো ।তাঁর একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সুশিক্ষা লাভ করে ছোটো পাহাড়ী গ্রাম ছেড়ে ওয়ে হাই শহরে কাজ করছেন ।তাঁর ছেলে উ হাই ছিং নতুন ক্ষেত্রউন্মোচনে পিতার দু:সাহসের উত্তরাধিকারী হয়ে একটি খাদ্যদ্রব্যের কম্পানি নিবন্ধন করেছেন ।তাঁর বাবার প্রসংগ তুলে তিনি শ্রদ্ধাভরা চিত্তে বলেছেন :ছেলেবেলা থেকে আমার উপরে বাবার প্রভাব অত্যন্ত গভীর । তাঁর প্রভাবেই আমি অনেক কিছু করেছি এবং করছি ।এখন আমার কীর্তি তাঁর মত অত বেশী হয় নি ।তবে তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়াই আমার জীবন সংগ্রামের লক্ষ্য ।আমার দৃঢ় বিশ্বাস, একদিন না একদিন আমি আমার লক্ষ্যস্থলে পৌঁছব ।