v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-09 10:31:41    
চীনে বিশ্ব উত্তরাধিকার সম্পদ রক্ষা

cri
    সম্প্রতি জাতি সংঘ শিক্ষা , বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্ব উত্তরাধিকার সম্পদ কমিটির ২৮তমো অধিবেশন চীনের সু চৌ শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে । গত পয়লা জুলাই , এই কমিটি উত্তরপূর্ব চীনের লিয়াও নিন প্রদেশের হুয়ান রেন জেলা ও চিলিন প্রদেশের চিআন শহরের কাও কৌলি রাজ্য , রাজকীয় সমাধিস্থল আর অভিজাত ব্যক্তিদের সমাধিস্থলকে বিশ্ব উত্তরাধিকার সম্পদের তালিকাভুক্ত করেছে , এটাসহ চীনে বিশ্ব উত্তরাধিকার সম্পদের আইটেম ত্রিশ হয়েছে ।

    কাও কৌ লি রাজ্য খৃষ্টপূর্ব ৩৭ সাল থেকে খৃষ্টীয় ৬৬৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল , এই রাজ্য চীনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কয়েকটি অপেক্ষাকৃত বড় সংখ্যালঘু জাতির প্রশাসনের অন্যতম ছিল , রাজ্যটি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলো । কাও কৌলি রাজ্য প্রথমে আজকের চীনের লিয়াও নি প্রদেশের হুয়ান রেন জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় , খৃষ্টীয় তিন সালে রাজধানী কোনেই শহরে অর্থাত্ আজকের চিলিন প্রদেশের চিআনে স্থানান্তরিত করা হয় , খৃষ্টীয় ৪২৭ সালে আবার পিয়ংইয়নে স্থানান্তরিত হয় । হুয়ান রেন ও চিআন কাও কৌলি রাজ্যের প্রথম ও মধ্য যুগের রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র ,  এই সময় পর্ব ৪৬৫ বছর স্থায়ী ছিল , এই দুটি জায়গায় কাও কৌলি রাজ্যের সবচেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক সম্পত্তি আছে।

    বিশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে চীনের প্রত্নতত্ববিদরা চিআন ও হুয়ারেনের কাওকৌলি রাজ্য আর রাজপরিবার ও অভিজাত ব্যক্তির সমাধিস্থল আবিষ্কার করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত সমাধিস্থল মেরামত করেছেন । কাও কৌলি রাজ্য ও রাজকীয় সমাধিস্থলের পুরার্কীতি ক্রমে ক্রমে লোকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ।

    ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞদের ধারনা , চীনের কাও কৌলি প্রাচীন রাজ্য ও রাজকীয় সমাধিস্থল প্রাচীনকালের সভ্যতা অথবা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিশেষ সাক্ষী । কাও কৌলি প্রাচীন রাজ্যের পুরাকীর্তি চীনা জাতির পুর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সম্পদ ।

    কাও কৌলি রাজ্য , রাজকীয় সমাধিস্থল ও অভিজাত পরিবারের সমাধিস্থল রক্ষার জন্য চীন সরকার ২০০২ সালে চি আন শহরে এই সব পুরাকীর্তি রক্ষা সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছে । ২০০২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী এই পরিকল্পনায় কোনেই ও ওয়ান তু সান নগর নামে কাও কৌলি রাজ্যের দুটি রাজধানী , ১২টি রাজকীয় সমাধিস্থল , দুটি আনুষঙ্গিক স্থাপত্য আর ২৭টি অভিজাত পরিবারের সমাধিস্থলসহ মোট ৪৩টি সংরক্ষন অঞ্চল নির্ধারন করা হয়েছে । কাও কৌলি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির আসল ও অখন্ড রুপ রক্ষা ইতিমধ্যে চি আন শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

    চীন সরকার কাও কৌলি প্রাচীন নগরের পুরাকীর্তি সংরক্ষনের যে প্রয়াস চালিয়েছে , তাতে প্রতিফলিত হয়েছে যে চীনের মতো এক প্রাচীন সভ্যতাসম্পন্ন দেশ আধুনিকায়নের পথ ধরে এগিয়ে চলার সংগে সংগে সংখ্যালঘু জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর মর্যাদা প্রদর্শন করছে এবং পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা করছে ।

    ৯০ পৃষ্ঠার এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে , চিআন একটি জেলা শহর , সেখানে পাহাড়-পর্বত বেশী , আবাদী জমি কম । কাও কৌলি পুরাকীর্তি অঞ্চলের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ জমি স্থানীয় নাগরিকদের আবাদী জমি বা বসতবাড়ি , প্রাচীন নগর ও রাজকীয় সমাধিস্থলগুলোর সংরক্ষণ এই শহরের উন্নয়নের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত । চি আন শহরে কাও কৌলি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে এই প্রাচীন নগরের অনেক নাগরিককের জীবন ও উত্পাদনের আমূল পরিবর্তন হবে । বাস্তব ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন ইতিমধ্যে ১৪০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সংরক্ষণ অঞ্চলে থাকা দুই লক্ষ ৩০ হাজার নাগরিকের জীবনে ঘটেছে । গত বছরের আগষ্ট মাস পর্যন্ত চি আন সরকার সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে নাগরিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার মাধ্যমে এক শ' ৮৫ একর জমি খালি করার ব্যবস্থা নিয়েছে , বার শটি পরিবার , কলকারখানা , স্কুল ও সরকারী সংস্থা সংরক্ষণ অঞ্চল থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে । তা ছাড়া , চি আন সরকার কাও কৌলি পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্য মোট ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মান বা পুনর্নিমান করেছে । এই ধরনের বড় প্রকল্প চি আনের ইতিহাসে প্রথম ।

    চি আনের কাও কৌলি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চলের মা সিয়েন গ্রামের অধিবাসী সুন হাই ছিন ও তার পরিবার-পরিজন সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরনের অর্থ নিয়ে নতুন নির্মিত আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছেন । ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রতি বর্গমিটারে ৪৪৫ ইউয়ান চীনা মুদ্রা । সুন হাই ছিন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আমি কোনো মতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার বাসার চার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই সব পাথরগুলো মূল্যবান জিনিস ! মা সিয়েন গ্রামের মোট ৪৬টি পরিবার অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে , তাদের বসতবাড়ী এখন সংরক্ষণ অঞ্চলের প্রাচীন সমাধিস্থলের বিস্তীর্ণ তৃণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে , এর আগে সুন হাই ছিন চাষ করতেন , এখন তিনি সংরক্ষণ অঞ্চলের মালি হয়েছেন ।

    স্থানীয় অধিবাসীদের ধারনা ছিল বসতবাড়ী ও কলকারখানা স্থানান্তরিত হওয়ার পর চিআনের কাও কৌলি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চল একটা বড় বাগানের মতো হবে , কিন্তু পুননির্মিত পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চল আগের চেয়ে আরো নির্জন ও পতিত হয়েছে । অনেক রাজকীয় সমাধিস্থল ও অভিজাত ব্যক্তির সমাধিস্থলের চার পাশের বসতবাড়ি , কলকারখানা ও স্কুল সরিয়ে দেয়া হয়েছে , আগেকার আবাদী জমি বড় আকারের তৃণভূমিতে পরিণত হয়েছে , পিরামিড আকারের প্রাচীনকালের সামরিক অফিসারদের সমাধিস্তুপের সামনে একটি পাকা রাস্তা পর্যন্ত নির্মান করা হয় নি , সেখানে মাত্র একটি আঁকাবাকাঁ কাঁচা পথ আছে । চি আন শহরের কাও কৌলি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চলের পরিকল্পনা কমিটির প্রধান মিঃ ছেন থোন পিন বলেছেন , প্রত্নতত্ববিদদের আবিষ্কার আর ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে সংরক্ষণ অঞ্চলের বিন্যাস পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে , কাও কৌলির রাজপরিবারের সমাধিস্থল ও অভিজাত ব্যক্তির সমাধিস্থল থেকে প্রাচীনকালের সমাধিস্থল ব্যবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে , কাজেই প্রত্নতত্ববিদদের নতুন আবিষ্কার পাওয়ার আগে কোনো কাল্পনিক সাজানো উচিত নয় ।

    স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে পুরাকীর্তির সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যাও ব্যবহার করা হয়েছে । যেমন ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে চার ও পাঁচ নম্বর সমাধিস্থলের দেওয়াল চিত্রগুলো দর্শকদের দেখানোর ব্যবস্থা করা ,সমাধিস্থলগুলো রক্ষার জন্য ক্ষতিকর বায়ু -নিরোধক সুড়ঙ্গপথ খনন করা , সমাধিস্থলগুলোতে ঠান্ডা রশ্মির বাতি লাগানো , পুরাকীর্তির আদ্রতা ও নিরাপত্তা তত্তাবধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা আর দেড় হাজার বছর আগেকার হাওথাইওয়াং নামে একটি সমাধিস্থলের স্মৃতিপ্রস্তরের উপর তিন সেন্টিমিটার মোটা বুলেট-প্রতিরোধক কাঁচ লাগানো ইত্যাদি । জাপানের একজন পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ চি আন ও হুয়ান রেনের কাও কৌলি পুরাকীর্তী সংরক্ষণ অঞ্চল পরিদর্শন করে পুরাকীর্তি সংরক্ষণে চীন সরকারের জোর প্রয়াসের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন । চি আন পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চলের পরিকল্পনা কমিটির প্রধান মিঃ ছেন থোন পিন বলেছেন , চি আন শহর পুননির্মান ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় অধিবাসী ও তাদের ছেলেমেয়েদের জানানোঃ কাও কৌলি পুরাকীর্তি তাদের জন্মস্থানের এক বৃহত্তমো সম্পত্তি , এই সম্পত্তির যত্ন নেয়া উচিত ।