v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-08 15:58:12    
মান জাতির বসন্ত উত্সব

cri
     চীনের হান জাতি , মঙ্গোলিয়জাতি , মান জাতি ইত্যাদি জাতি চীনাদের সবচাইতে আড়ম্বরপূর্ণ ঐতিহ্যিক উত্সব- বসন্ত উত্সবকে একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক উত্সব বলে মনে করে । চীনে ভিন্ন ভিন্নজাতির বসন্ত উত্সব কাটানোর রীতিনীতিও ভিন্ন ভিন্ন।

    মান জাতি সুদীর্ঘকালীন ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যসম্পন্ন একটি জাতি। চীনের সর্বশেষ সামন্ততান্ত্রীক রাজবংশ- ছিং রাজবংশ মান জাতির শাসকরাই স্থাপন করেছিলেন। এখন অন্যান্য জাতির মতোই মান জাতি সমানভাবে চীনের বিরাট বহুজাতিক পরিবারে জীবনযাপন করছে। মান জাতির আচার ব্যবহার আর সংস্কৃতিও মর্যাদা আর রক্ষা পেয়েছে । মান জাতির বর্তমান লোকসংখ্যা ৯৮ লক্ষ । তাদের মধ্যে অর্ধেকাংশ উত্তর পূর্ব চীনের লিয়াওনিন প্রদেশে থাকেন । এটাই মান জাতির উত্সস্থল । সংবাদদাতা যে মান জাতির গ্রামে গিয়েছেন , তা লিয়াওনিন প্রদেশের মধ্যাংশে অবস্থিত ।

    এই মান জাতির গ্রামের নাম সিনছেং । গ্রামে যে কয়েক ডজন পরিবার থাকে , তারা সবাই মান জাতির মানুষ। গ্রামের আয়তন শুধু ১ বর্গ কিলোমিটার । ৪ শে বছর আগে ছিং রাজবংশের প্রথম সম্রাট সূরহাছ্ এই গ্রামকে রাজধানী হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন । এখন গ্রামের দক্ষিণ দিকে যে একটি উঁচু সিংহ দ্বার রয়েছে, তার উপরে তুং চিং ছেং নামে তিনটি বড় অক্ষর লেখা রয়েছে । এখন যদিও গ্রামের আশেপাশের প্রাচীর ধসে পড়েছে , কিন্তু তাতে ইতিহাসের অতীত আর তার সুখ দুঃখ দেখা দিয়েছে । গ্রামবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই তখনকার সৈন্যদের বংশধর । কয়েকশো বছর চলে গেছে । তাদের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । কিন্তু মান জাতির কিছু রীতি নীতি এখনো সংরক্ষিত রয়েছে । বিশেষ করে' জনসাধারণের আবাসের ব্যাপারে এখনো মান জাতির ঐতিহ্যিক স্থাপত্য শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও রীতি নীতি দেখা যায় । গ্রামের বৃদ্ধ কুয়েন তে সান বলেছেন, মান জাতির বাসার প্রাঙ্গনের দরজার সামনে ২ মিটার উঁচু যে একটি কাঠের লাঠী দাঁড়িয়ে আছে , তার উপর দিক একটি লাল কাপড়ে মোড়ানো আছে । উপর দিকের নীচে যে একটি ছোট লাঠী বাধা আছে , তার একটি প্রান্তে তিনটি পাথর রাখা আছে। তাকে বলা হয় "দেবতার পাথর" । দেবতার লাঠির পেছনে একটি প্রাচীর আছে । রুপ কথা অনুযায়ী , এগুলো তাদের পূর্বপুরুষ নূরহাছের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে । তিনি পাহাড়ে জিংসেন খনন করেছিলেন । দেবতার লাঠি তার জিংসেন খনন করার সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে , দেবতার পাথর বনভোজনের সময় ব্যবহৃত পাথর আর দেবতার প্রাচীর তার জিংসেন খননের সময়ে ব্যবহৃত ঝুড়ি ।

    মান জাতির বাড়ি সাধারণতঃ তিন কক্ষ নিয়ে গঠিত । পশ্চিম কক্ষ স্বাগতিক আর পূর্ব কক্ষ অতিথিদের শোয়ার কক্ষ এবং মাঝখানের কক্ষ রান্না বান্নার জন্য বন্দোবস্ত। মান জাতির ঐতিহ্যিক রীতি অনুসারে পশ্চিম দিক সবচেয়ে মর্যাদা বেশী বলে মনে করা হয় । সুতরাং বাসায় সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় লোকেরা সবাই পশ্চিমের কক্ষে থাকেন । শোয়ার কক্ষের দক্ষিণ , উত্তর ও পশ্চিম এই তিন দিকে খাং নামে বিছানার মতো বন্দোবস্ত করা হয় । অতিথিরা দক্ষিণ ও উত্তর দিকে বসাতে পারেন। শুধু পশ্চিমের দিকে বসা নিষিদ্ধ । ওখানে একটি ছোট কাঠের ফলক আছে । ফলকের উপরে যে লাল কাগজ মোড়ানো, তার উপরে মান জাতির পূর্বপুরুষদের নাম লেখা আছে । মান জাতির লোকেরা তাদের প্রতি খুব মর্যদা প্রদর্শন করেন ।

     বসন্ত উত্সবে মান জাতির বাড়িতে বাড়িতে আতশ বাজি পোড়ানো হয় । কিন্তু হান জাতির চেয়ে তাদের আতশ বাজি পোড়ানোর পদ্ধতির অনেক তফাত্ আছে । মান জাতির রীতি নীতি অনুসারে আতশ বাজি প্রাঙ্গনের মাঝখানের দিকে দেবতার লাঠির উপরে ঝুলানো হয় । পূর্ব পুরুষ ও স্বর্গীয় দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উপাসনার কাজ শেষ হওয়ার পর আতশ বাজি পোড়ানো হয় । আতশ বাজি পোড়ানোর পর বাচাল আর কাকের খাওয়ানোর জন্য মীলেট, টুকরো মাংস ইত্যাদি খাবার দেবতার লাঠির উপরে ঝুলানো কাঠের বাক্সে ফেলে দেয়া হয় । মান জাতির রুপ কথা অনুসারে বাচাল আর কাক দুটো দেবতার পাখী । সুতরাং মান জাতির লোকেরা তাদের প্রতি খুব যত্ন নেন ।

    আগে মান জাতির লোকেরা সামান ধর্মে বিশ্বাস করতেন। তারা মনে করতেন , পৃথিবীতে সূর্য , চাঁদ , পাহাড় , পানি , আগুণ , গাছ ইত্যাদি জিনিসের যার যার আত্মা আছে । তাই মান জাতির লোকেরা পরিবেশ সুরক্ষা করতেন আর প্রাণীকে আদর করতেন । এখন যদিও তারা সামান ধর্মে বিশ্বাস করেন না , কিন্তু তাদের প্রকৃতিতে মমত্ব প্রদর্শনের রীতি নীতি বজায় রয়েছে। এখন বসন্ত উত্সবে কৃষক পরিবারের জানালায় কাগজে কাটা চিত্র লাগানো হয় । এই সব চিত্রে পাহাড়ের বাঘ , বনের বাচাল ইত্যাদি রকমারি ডিজাইন দেখা দেয় । আগে দৈত্য তাড়ানো আর রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কাগজে কাটা চিত্র লাগানো হতো । এখন তো সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ।

    মান জাতির আচার ব্যবহার অনুযায়ী, বসন্ত উত্সবের প্রথম পাঁচ দিনে রান্না করা যায় না। সুতরাং বসন্ত উত্সবের আগের দিনে এই ৫ দিনের খাবার বন্দোবস্ত করা উচিত। শীত্কালে উত্তর পূর্ব চীনে খুব শীত পড়ে। তখন বাইরের তাপমাত্রা শূন্যের বিশাধিক ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে দাড়ায়। এটা যেন একটি বিরাট প্রাকৃতিক রিফ্রিজ্যারেটর। বাইরে এক মাসেরও বেশী সময় ধরে খাবার সংরক্ষণ করা যায়।

    পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা মান জাতির লোকদের বসন্ত উত্সবের অন্যতম প্রধান উদযাপনী তত্পরতা। বসন্ত উত্সবের আগের রাতে ভিন্ন প্রজন্ম অনুসারে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে উপাসনা জানানো দরকার। আগে ,মান জাতির লোকেরা মনে করতেন, নতুন বছরে জীবন যাপনের সুখ ও নিরাপত্তার জন্যে পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উপাসনা করা হতো। কিন্তু এখন তার গোপনীয় পরিবেশ পরিবর্তিত হয়েছে। গ্রামবাসীরা এক সাথে সম্মিলনীতে থাকেন।

    মান জাতির বসন্ত উত্সব ১৫ দিন একটানা উদযাপন করা হয়। এই সময়ে তাদের গ্রামে গেলে অবশ্যই প্রাণঢালা স্বাগত পাওয়া যায়। কারণ মান জাতির লোকেরা মনে করেন, নববর্ষে অতিথিদের আগমন গ্রামবাসীদের জন্য সৌভাগ্য আনবে।