v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-02 16:07:45    
একজন আমেরিকান থিয়ানজিন শহরে বার খুলেছেন

cri
    থিয়ানজিন উত্তর চীনের একটি উপকুলীয় শহর । থিয়ানজিনের মৈত্রী এভিনিউয়ে রয়েছে নানা ধরণের প্রায় ৩০টি বার । এগুলোর মধ্যে দি ব্রিটিস হেভেন বার খোলার এক মাস পর এর মুনাফা হয়েছে ।এই বারের মালিক একজন আমেরিকান ।

    তিনি বলেছেন :আমার নাম মি খাই ফেং ।আমার চীনা শিক্ষক আমার এই নাম দিয়েছে ।১৯৮৬ সালে আমি যখন চীনে আসি তখন আমার বয়স মাত্র তের বছর । প্রথম দিকে চীন আমার কাছে একটি অজানা অচেনা দেশ ।

    এই মার্কিনী থিয়ানজিনের আঞ্চলিক ভাষায় সাবলিলভাবে কথা বলতে লাগলেন । মি খাই ফেংয়ের আসল নাম ক্রিস হাগেন । তাঁর বাড়ি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোরিয়া রাজ্যে । ১৯৮৬ সালে তের বছর বয়সী ক্রিস হাগেন তাঁর বাবার সংগে থিয়ানজিনে আসেন ।তাঁর বাবা একজন বণিক।ছাত্র হিসেবে তিনি থিয়ানজিনের আন্তর্জাতিক স্কুলে পাঁচ বছর কাটিয়েছিলেন ।১৯৯১সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান । একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাত্তক হওয়ার পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করতে শুরু করেন ।

    কিন্তু ভাগ্যচক্রে ঘুরতে ঘুরতে মি খাই ফেং আবার থিয়ানজিনে এসে হাজির । ১৯৯৭ সালে তাঁর পিতার জোরালো প্রস্তাবে তিনি থিয়ানজিনে ভ্রমণ করতে আসেন । বিমান থেকে নেমে তিনি অবাক হলেন ।কেন না , গত কয়েক বছরে থিয়ানজিনে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে , তা তাঁর কল্পনার অতীত । মি খাই ফেং বলেন :থিয়ানজিনে এসে এক্সপ্রেস ওয়ে ও রংবেরংয়ের নিয়েন লাইট দেখে আমার বড়ো আশ্চর্য লাগল । থিয়ানজিনের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারিত হয়েছে । মাই গড , কী আকাশ-পাতাল পার্থক্য । চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতে দু সপ্তাহ কেটে গেল । যাওয়ার সময়ে আমি স্থীর করলাম , আমি এখানে কাজ করতে আসব ।

    তাঁর বাবার উত্সাহে ও সমর্থনে মি খাই ফেং১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত থিয়ানজিনে পর পর দুটো বার খুলেছেন । এই সময়ের মধ্যে তাঁর বাবার মৃত্যু হয় ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী মি খাই ফেংকে কিছু সময়ের জন্য দেশে ফিরে সৈন্যবাহিনীতেও ভর্তি হতে হয়েছেন । ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার অভাবে তাঁর দুটো বারের ব্যবসার মুনাফা আশানুরুপ হয় নি ।

    ২০০৪ সালের প্রথম দিকে ক্রিস হাগেন তাঁর ব্যবসাকে চাঙগা করে তোলার সংকল্প গ্রহণ করেন ।এবার তিনি তাঁর দৃষ্টি মৈত্রী এভিনিউয়ের উপরে নিবদ্ধ করলেন । পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার পর দুজন চীনা সহযোগী ও তার নামে নথিভুক্ত দি ব্রিটিস হেভেন বার খোলা হল । রাত নটা বাজতে না বাজতেই দি ব্রিটিস হেভেন বার ব্যস্ত হয়ে উঠল

    দি ব্রিটিস হেভেন বারে ঢুকে এখানকার মধুর পরিবেশে মুগ্ধ হতে হয় ।বারের কাউন্টারের পাশে আর ডান্স ফ্লোরে খদ্দেরদের মধ্যে কেউ মদ খাচছেন ,কেউ গল্পগুজব করছে , কেউ বা নাচ করছে ।তাঁরা আসেন বিভিন্ন দেশ থেকে । গায়ের রঙ আলাদা । কিন্তু তাঁদের সবাইয়ের মুখের ভাব থেকে বোঝা যায় যে তাঁরা দি ব্রিটিস হেভেন বারকে পছন্দ করেন । ডেনমার্ক থেকে আসা তরুনী গেরটির চুল সোনালী ,মুখে তাঁর লেগে আছে মিষ্টি হাসি ।তিনি একটি বৃহত আন্তর্জাতিক লোজিসটিক্স কম্পানির সার্ভিস বিভাগের প্রধান । প্রায় এক বছর হল তিনি থিয়ানজিনে চাকরি করেছেন । ব্রিটিস হেভেন বার খোলার সময় নাতিদীর্ঘ হলেও তিনি এইবারের নিয়মিত খদ্দের হয়েছেন ।তিনি বলেছেন , তিনি যে এখানে আসেন তার প্রধান কারণ , এই বারের বাইরে বসে যে অনুভুতির উদ্রেক হয় তা তার খুব ভালোলাগে । মুখরোচক বিয়ার খেয়ে বন্ধুবান্ধবীদের সংগে কথা বলতে বলতে তিনি যেন জন্মস্থানে ফিরে গেছেন । থিয়ানজিন শহর তাঁর ভালোলাগে ,তিনি মনে করেন , থিয়ানজিন শহর প্রাণশক্তিতে ভরপুর ।

    ব্রিটিস হেভেন বার বস্তুত একটি মার্কিনধর্মী বার . ভেতরের পরিবেশ আনন্দদায়ক। খদ্দের এলে বারের মালিক হিসেবে মি খাই ফেং তাঁকে স্বগত জানান এবং তার সংগে দুইএকটি কথা বলেন যাতে খদ্দেরের মন হালকা হয়,এবং মনে হয় যেন পুরনো বন্ধুর বাড়িতে এসেছে ।প্রতিদিন রাতে বারের ভেতরে ও বাইরে খদ্দেরদের ভীড় । মি খাই ফেং তখন ভীষন ব্যস্ত ।তিন-চার ঘন্টা সময় যে দ্রুত কেটে গেল তাঁর খেয়াল নেই ।

    আজ বিকেলে মি খাই ফেং সকালে-সকালে বারে এসে সন্ধ্যাবেলার ব্যবসার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন ।তাঁর স্ত্রী কাও ছিং দুটো তরমুজ কেটে বারে কর্মরত শ্রমিকদের খাওয়াচ্ছেন । থিয়ানজিন শহরে কাও ছিংয়ের জন্ম ।আগে তিনি মি খাই ফেংয়ের বারের পরিচারিকা ছিলেন । ২০০০সালে মি খাই ফেংয়ের সংগে তাঁর বিয়ে হয় ।কাও ছিং ঠাট্টা করে বলেন , চেহারা ছাড়া মি খাই ফেংয়ের আচার ব্যবহার , খাওয়া দাওয়ার অভ্যাস ও কথা বলার ঢং সবই থিয়ানজিনবাসীদের মত ।কাজেই তাঁকে একজন সুযোগ্য থিয়ানজিনবাসী বলা যায় ।এক দিন সন্ধ্যায় ও আমাকে ফোনে জানাল , আজ ও একটু আগে বাড়িতে ফিরে আসবে ।তার জন্য আমি নুডলস তৈরী করতে পারব কিনা ।উত্তরে বললাম : পারব । সন্ধ্যা নেমে এলো।ও ফিরে বলল, রান্না করতে আমাকে সাহায্য করতে চায় । আমি বললাম, ঠিক আছে , নুডলস তৈরী যে জিয়াং নামক মসলা লাগে , তা কিনে এসো ।নীচের তলার কাছে সুপার মার্কেটে যেতে ফিরতে মাত্র দশ মিনিট লাগবে ।

    আধ ঘন্টা কেটে গেল , সে ফিরে এল না ।আরো কিছু ক্ষণ পর সে ফিরে এল।তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ,এত সময়ে তুমি কোথায় ছিলে ? উত্তরে সে বলল ,নীচে গিয়ে দেখলাম ,দুজন চীনা দাবা খেলছে ,তাই তাদের দাবা খেলা দেখলাম ।

    কালক্রমে মি খাই ফেংয়ের স্থানীয় নাগরিকদের জীবনে মিশে গেছেন ।তাঁর জীবনের শিকড় থিয়ানজিনের মাটিতে গেড়ে বসেছে ।কিন্তু তিনি এখনো সন্তুষ্ট নন।তিনি চীনা বন্ধুদের সামনে নিজেকে থিয়ানজিনের পুনরো শহরবাসী বলে অভিহিত করেন ।তিনি মনে করেন , থিয়ানজিন একটি মনোরম শহর , এই কথা বিদেশের বন্ধুদের জানরিয়ে দেয়া তাঁর পালনীয় দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন।

    তিনি বলেছেন :থিয়ানজিন একটি বড় শহর ,থিয়ানজিনের মানুষ খুবই ভাল ।থিয়ানজিনে থাকতে আমার ভাললাগে ।থিয়ানজিনে পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সন্তোষজনক । এক বৃটিশ বা অষ্ট্রেলিয়ান এখানে এলে আমি নিশ্চয় তাঁকে বলব , থিয়ানজিন একটি আন্তর্জাতিক নগর । গত কয়েক বছরে চীনের যে সব শহরের চেহারা পাল্টে গেছে থিয়ানজিন সেগুলোর অন্যতম । আগামী দিনে থিয়ানজিন শহর আরো সুন্দর হবে ।

    দুরদুরান্তের বন্ধু ,আপনি যদি থিয়ানজিন শহরে ভ্রমন করতে আসেন, সন্ধ্যা নেমে আসার সময়ে ,আসুন , ব্রিটিস হেভেন বারে কিছুক্ষণ বসবেন , দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে একজন দীর্ঘদেহী সুদর্শন মার্কিনী আপনার চোখে পড়বে ,আপনাকে দেখা মাত্র তিনি সোত্সাহে আপনাকে স্বাগত জানাবেন , এবং থিয়ানজিনের আঞ্চলিক ভাষায় আপনাকে বলবেন :থিয়ানজিনে আসা দুরদুরান্তের বন্ধু, আপনাকে স্বাগতম !