v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-02 08:47:22    
মহামানব লুসুন ও তাঁর জন্ম স্থান

cri
    লুসুন চীনের আধুনিক যুগের বিখ্যাত লেখক , চীনারা তাঁকে জাতির আত্মাবলে আখ্যায়িত করেন । গ্যেটে যেমন জার্মানদের আর ইয়াসুনারি কায়াবাটা যেমন জাপানীদের শ্রদ্ধার পাত্র , লুসুনও ঠিক তেমনই চীনাদের শ্রদ্ধার পাত্র । লুসুনের জন্য তাঁর জন্ম স্থান সাওসিংও চীনে বিশেষখ্যাতি পেয়েছে ।

    লুসুন যদিও গত শতাব্দির তিরিশের দশকে মৃত্যু বরন করেছেন তথাপি চীনারা আজো তাঁকে ভালোবাসেন। ২০০৩ সালে চীনের একটি জনপ্রিয় ওয়েব সাইটে নেট নাত্তারিকদের জন্যে একটি প্রশ্ন ছিলো : আপনার চোখে কে চীনের সুখ্যাত ব্যক্তি? অধিকাংশ তরুণ তরুণী উত্তর দিয়েছেন : অর্ধশতাব্দির আগেকার সাহিত্যিক লুসুন । লুসুন গবেষক, পেইচিংয়ের লুসুন যাদুঘরের উপপরিচালক মি: ছেন সু ইয়ু মনে করেন, লুসুন শুধু একজন লেখক নন, চীনের আধুনিক সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে তিনি চীনাদের মননে পরিব্যাপ্ত রয়েছেন ।

    চীনের আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসে লুসুনের স্থান অতুলনীয় । লুসুন তাঁর রচনায় গত কয়েক হাজার বছর ধরে নিপীড়ন ও অবমাননায় জর্জরিত চীনা জাতির দু:খবেদনা, প্রতিরোধ , সাধনা এবং নতুন পথের সন্ধানে চীনাদের মনন, স্বভাব আর কৃষ্টির ইতিহাস চিত্রিত করেছেন ।

    লুসুনের কারণেই তাঁর জন্মস্থান: দক্ষিণ পুর্ব চীনের জে জিয়াং প্রদেশের একটি ছোটো শহর সাওসিংও বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে । ।

    ১৮৮১ সালে লুসুন সাওসিং শহরে জন্ম গ্রহণ করেন ।

    ছেলেবেলায় অবস্থাপন্ন পরিবারে তিনি সুখী ছিলেন , অন্নবস্ত্রের অভাব যে কী তিনি তা জানতেন না । কিন্তু তাঁর বয়স যখন তের বছর তখন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য দারিদ্র্যের কালো ছায়া নেমে আসে তার পরিবারের উপরে । তিনি বাধ্য হয়ে তাঁর বাবামাকে ছেড়ে একটি আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন । শৈশবে তিনি সমাজের নিষ্ঠুরতা ও মানুষের ঔদাসীন্যের পরিচয় পেয়েছেন । তখন ছিল চীনের সর্বশেষ সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশ -- ছিং রাজবংশের রাজত্বকালের শেষভাগ। চীন ছিল নিতান্ত দুর্বল । চীনাদের মন ছিল নিষ্তেজ । একটি কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে সাওসিংয়ের সর্বত্রই অভাব অনটনের চিহ্ন । কৃষকরা বৈষয়িক আর মানসিক উভয় দিক থেকে সামন্ততান্ত্রিক শক্তির অত্যাচারে দু:সহ জীবন যাপন করতেন ।

    সাওসিং শহরের লুসুন স্মৃতিভবনের পরিচালক সু তং চুয়ান মনে করেন , লুসুনের প্রগতিশীল চিন্তাধারার উপরে তাঁর জন্মভুমির প্রভাব অত্যন্ত গভীর । ছোটো বেলায় তাঁর পরিবারের আর্থিক অবনতি ও জন্মভুমির কৃষকদের দুংখদুর্দশা তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ যুগিয়েছে ।

    লুসুনের অনেক রচনায় সাধারণ মানুষকে উপজীব্য হিসেবে গ্রহণকরে প্রগাড় অর্থ ব্যক্ত করা হয়েছে । তাঁর অনেক ছোটো গল্পে তাঁর জন্মস্থানকে পটভুমি হিসেবে ব্যবহার করে তার দৃষ্টিভংগী প্রকাশ করা হয়েছে ।তিনি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে চীনের সমাজ পর্যবেক্ষন করেছেন , তিনি তদানিন্দন সমাজের অনাচার বিশেষ করে সামন্ততান্ত্রিক সমাজের মনুষ্যত্ব নাশক প্রথা ঘৃনা করতেন এবং স্বরচিত ছোটো গল্পে তিনি তার কঠোর সমালোচনা করেছেন ।কাজেই তাঁর রচনা পাঠকদের মনে প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তুলতে পেরেছে ।

    লুসুন তাঁর ধারালো লেখনি দিয়ে চীনের পুরোনো সমাজের কপটতা, কদর্যতা আর পাপ উদঘাটন করেছেন এবং জাতীয় চরিত্রের দুর্বলতা দেখিয়েছেন । তিনি নীচু স্তরের জনসাধারনের প্রতি আন্তরিক সহানুভুতি জানিয়েছেন । বিশেষ করে তারঁ প্রবন্ধকে সমালোচনার মোক্ষম শক্তির জন্য বর্শা ও চাকু বলে অভিহিত করা হয় ।তাঁর রচনাবলী চীনের আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসের গুরুত্বপুর্ণচিহ্নফলক ।

    সাওসিং শহরের লুসুন স্মৃতিভবনের পরিচালক সু তং চুয়ান বলেছেন , লুসুনের রচনা জন্মস্থানের প্রতি তাঁর মায়া-মমতায় পরিপুর্ণ ।

    তিনি বলেছেন , লু সুনের রচিত একটি ছোটো গল্পের নাম: জন্মস্থান , ছোটোবেলায় তাঁর সংগী রুনথু ছোটো গল্পটির প্রধান চরিত্র । গল্পটির উপসংহারে লু সিং লিখেছেন : তিনি ও রুনথু উভয়ই এখন মাঝবয়সী । তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নেই । তিনি আশা করেন , রুনথুর ছেলেমেয়ে আর নাতিনাতনি নতুন জীবন যাপন করতে পারবে ।

    লুসুনের বাড়ির একজন চাকরানীর ছেলের অবলম্বনে ছোটো গল্পটির চরিত্র রুনথু সৃষ্টি করা হয়েছে । সেই ছেলে লু সুনের ভালো বন্ধু,ছেলেটি শান্ত স্বভাবের , কিন্তু বুদ্ধিমান , । দুজনের পরিবারের পটভুমি আলাদা । ছেলেটি বড় হওয়ার পর জীবনের চাপে নিষ্প্রাণ ও স্বল্পভাষী হয়েছে । দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মনোমালিন্য । একদিন হঠাত দেখা হলে কি কথা যে বলবে ভেবেচিন্তে তা খুঁজে পাওয়া গেল না । তার বিমর্ষ মলিন মুখ দেথে লুসুনের মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে ।

    তখনকার সাওসিং পুরনো চীনের অসীম অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল । জন্মস্থনর কৃষকদের বংশধরদের ভবিষ্যত নিয়ে লুসুন গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন । নীরবে তিনি প্রার্থনা করেন , যেমন কৃষকদের বংশধররা সুখের মুখ দেখতে পায় ।

    সৌভাগ্যবশত: তিনি যা চেয়েছেন বাস্তবে তাই হল । সেই ছেলের নাতনী জাং গুই হয়েছেন সাওসিং শহরের লুসুনের স্মৃতিভবনের উপপ্রধান । সি আর আইয়ের সংবাদদাতার নেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন: লুসুনের সেই ছোটো গল্প তাঁর জীবনের পরিবতন ঘটিয়েছে :

    সতি কথা বলতে কি , লুসুনের পরিবারের সংগে আমার দাদার সম্বন্ধ ছিল বলে ১৯৫২ সালে সাওসিং শহরের লুসুন স্মৃতিভবন নির্মানের পর আমি তার কর্মচারী হয়েছি । লুসুনের উপরে গবেষনা করে আমি অনেক প্রবন্ধও প্রকাশ করেছি ।

    সাওসিং শহর এখন জে জিয়াং প্রদেশের অন্যতম ঐশ্বর্যময় শহর । লুসুনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কোনো কোনো রাস্তা , ময়দান ,স্কুল ও সিনেমাহল তার নামে নামকরণ করা হয়েছে ।

    লুসুন আজ সাও সিংয়ের প্রতীক ও চীনের গৌরব ।