v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-01 18:10:33    
কয়েক দশকের আগে চীনের তিব্বতে সৌরশক্তি কাজে লাগাতে শুরু

cri
    ছিংহাই-তিব্বত মালভুমি বিশ্বের শীর্ষস্থল, যেখানে সূর্য থেকে সবচাউতে কাছাকাছি । ওখানে সৌরশক্তি প্রাচুর্যময এবং বছরে সূর্য আলো পাওয়ার সময় তিন হাজার ঘন্টা ছাড়িয়ে যায় । ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে কয়েক দশকের আগে সৌরশক্তি কাজে লাগাতে শুরু হয়েছে । এখন শহর হোক পার্বত্য অঞ্চল হোক না কেন , সর্বত্রই রকমারি সৌরশক্তি ব্যবস্থা দেখা যায় ।

    তুই না থানা তিব্বতের দক্ষিণ পশ্চিমের ইট্ খা জে অঞ্চলেরএকটি ছোট গ্রাম । এই গ্রাম সমুদ্র সমতলের তুলনায় ৪৫০০ মিটার উচুঁ । গ্রামবাসীদের সংখ্যা মাত্র ২৪০০ , তারা যেমন কৃষি কাজ তেমনি পশু লালন পালন করেন । জল সম্পদের অভাব আর আলাদা আলাদা থাকার দরুণ ওখানকার কৃষক আর পশুপালকরা কুপি বাতি ব্যবহার করতেন । দু বছর আগে থানা সরকার একটি ছোট সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মান করেছে । ফলে তুইনা থানার লোকেরা বিদ্যুত ব্যবহার করতে শুরু করেছেন ।

    পাসানছিরেন তুইনা থানার একজন অধিবাসী , তিনি বলেছেন ,

    ২০০২ সালে গ্রামে সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ার পর আমরা টেলিভিশন , ভি সি ডি , সি ডি ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স পন্য ব্যবহার করেছি । মাখন চা তৈরী করার জন্যও যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে ।

    পাসানছিরেনের মতো তুইনা থানায় বহু কৃষক ও পশুপালকের জীবনযাত্রা বৈচিত্র্যময় হয়েছে । তারা দিনের বেলায় কৃষি কাজ করেন , রাতে সপরিবারে একসাথে টেলিভিশন দেখেন , গান গান । কখনো কখনো তারা টেলিভিশনের তথ্যের উপর নির্ভর করে পাশ্ববৃত্তিজাত শিল্প প্রসারিত করেছেন । তুইনা থানার প্রধান ম্যাদাম নিমাজুগা বলেছেন , বিদ্যুত ব্যবহারের কারনে আধুনিক জীনেরর সংগে কৃষক আর পশুপালকদের ব্যবধান দূর করা হচছে ।

    আগে যখন বিদ্যুত ছিল না , তখন কৃষক আর পশুপালকরা শুধু কাছাকাছির ব্যাপার জানতেন , বাইরের অবস্থা খুব কম জানতেন । সৌর শক্তিচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ার পর কৃষক আর পশুপালকরা বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেছেন , টেলিভিশনের মাধ্যমে তারা বহিরাগত বিশ্ব জেনে নিয়েছেন এবং সাংস্কৃতিক জীবণও বৈচিত্র্যময় হয়েছে ।

    পার্বত্য অঞ্চলে সৌরশক্তি ব্যাপক কৃষক আর পশুপালকের জীবণযাত্রার পরিবর্তন করছে । সৌরশক্তি শুধু বিদ্যুত তৈরী আর বাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা নয় , শীত্কালে গরম লালানো , রান্না করা , গোসল করা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে । কিছু কিছু কৃষক ও পশুপালকের বাড়িতে সৌরশক্তি চালিত উনুন , হিটার , পানি হিটার ইত্যাদি সৌরশক্তি চালিত ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার করা হচছে । পরিসংখ্যান অনুযায়ী , এ পর্যন্ত তিব্বতে সাতটি দশ থেকে এক শো কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে । ফলে দু লক্ষের বেশি লোকের বিদ্যুত্ ব্যবহারের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে ।তা ছাড়া তিব্বতে সৌরশক্তি চালিত উনুনের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে , সৌরশক্তি চালিত হিটিং ব্যবস্থার আয়তন দু লক্ষ বর্গ মিটারে দাঁড়িয়েছে এবং এক লক্ষ বর্গ মিটার সৌরশক্তি পানি হিটার জনপ্রিয় করা হয়েছে । বলা যায় , তিব্বতে সৌরশক্তি জনসাধারনের জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে ।

    ফলে যেমন কৃষক ও পশুপালকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে , তেমনি ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির পরিবেশও সংরক্ষন করা হয়েছে । সৌরশক্তি কাজে লাগানোর আগে পার্বত্য এলাকাগুলোতে কৃষক আর পশুপালকরা গাছ আর ঘাস কাটার উপর নির্ভর করে জীবনযাপনের শক্তি সম্পদ লাভ করতেন ।ফলে ছিংহাই-তিব্বত মালভুমিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । যেমন লাসা শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত লালু জলাভূমিতে বসবাসকারী কৃষক ও পশুপালকরা ব্যাপকভাবে ঘাস কাটার ফলে এই জলাভুমির প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । ১৯৯৫ সাল থেকে স্বায়ত্ত শাসিত অন্চল সরকার এই জলাভুমিতে প্রায় দশ কোটি ইউয়ান অর্থবরাদ্দ করে স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য সৌরশক্তি পানি হিটার ও সৌরশক্তি চালিত উনুন বসিয়েছে । এখন লালু জলাভুমির প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে ।

    এই প্রসংগে সাতষট্টি বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ছুইকা বলেছেন , আমি ইটখাজে , সাননান , চিয়াংচি , ছুইসুই , নিমো সহ বহু জায়গায় গিয়েছিলাম । তখন পথের দুপাশে কোনো গাছ আর ঘাস চোখে পড়ল না । ভূমির মরুকরনের অবস্থা খুব গুরুতর ছিল । এখন এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । সড়কের দুপাশে সবুজ গাছপালায় ঘেরা । এই সব অন্চলে গাছ লাগানো হয়েছে এবং বহু জায়গা বনান্চলে পরিনত হয়েছে । এখন নদীর দু পাশে নানা জাতের পাখী স্বাচ্ছন্দে উড়ছে ।

    সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী , প্রতি বছর তিব্বতে সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে যে জ্বালানী বাঁচানো হয়েছে , তা এক লক্ষ তেতাল্লিশ টন কয়লার সমান ।অর্থাত্ দশ কোটি ইউয়ান মিতব্যয়ী হয়েছে ।

    বহু কাল ধরে তিব্বতের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরাও ব্যাপকভাবে সৌরশক্তি কাজে লাগানোর আহবান জানিয়ে আসছেন । তাদের প্রচেষ্টায় তিব্বতের উন্নয়ন সাহায্য নামে একটি বেসরকারী তহবিল সংস্থা প্রতিষ্ঠত হয়েছে । এই তহবিলের উপ মহাসচিব আফেই চিংইউয়ান বলেছেন ,

    এই তহবিল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য তিব্বতে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষনের অভিযান তরান্বিত করা , তিব্বতের দরিদ্র অন্চলগুলোর পয়ঁষট্টি হাজার কৃষক ও পশুপালকের পরিবারের জন্য সৌরশক্তি সরন্জাম বসানো , তাদের জ্বালানী , বিদ্যুত্ ব্যবহার , শীত্কালে গরম লাগানো , টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি সমস্যা দূর করা এবং তাদের জীবনযাপনের মান উন্নত করা ।