ছিংহাই-তিব্বত মালভুমি বিশ্বের শীর্ষস্থল, যেখানে সূর্য থেকে সবচাউতে কাছাকাছি । ওখানে সৌরশক্তি প্রাচুর্যময এবং বছরে সূর্য আলো পাওয়ার সময় তিন হাজার ঘন্টা ছাড়িয়ে যায় । ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে কয়েক দশকের আগে সৌরশক্তি কাজে লাগাতে শুরু হয়েছে । এখন শহর হোক পার্বত্য অঞ্চল হোক না কেন , সর্বত্রই রকমারি সৌরশক্তি ব্যবস্থা দেখা যায় ।
তুই না থানা তিব্বতের দক্ষিণ পশ্চিমের ইট্ খা জে অঞ্চলেরএকটি ছোট গ্রাম । এই গ্রাম সমুদ্র সমতলের তুলনায় ৪৫০০ মিটার উচুঁ । গ্রামবাসীদের সংখ্যা মাত্র ২৪০০ , তারা যেমন কৃষি কাজ তেমনি পশু লালন পালন করেন । জল সম্পদের অভাব আর আলাদা আলাদা থাকার দরুণ ওখানকার কৃষক আর পশুপালকরা কুপি বাতি ব্যবহার করতেন । দু বছর আগে থানা সরকার একটি ছোট সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মান করেছে । ফলে তুইনা থানার লোকেরা বিদ্যুত ব্যবহার করতে শুরু করেছেন ।
পাসানছিরেন তুইনা থানার একজন অধিবাসী , তিনি বলেছেন ,
২০০২ সালে গ্রামে সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ার পর আমরা টেলিভিশন , ভি সি ডি , সি ডি ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স পন্য ব্যবহার করেছি । মাখন চা তৈরী করার জন্যও যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে ।
পাসানছিরেনের মতো তুইনা থানায় বহু কৃষক ও পশুপালকের জীবনযাত্রা বৈচিত্র্যময় হয়েছে । তারা দিনের বেলায় কৃষি কাজ করেন , রাতে সপরিবারে একসাথে টেলিভিশন দেখেন , গান গান । কখনো কখনো তারা টেলিভিশনের তথ্যের উপর নির্ভর করে পাশ্ববৃত্তিজাত শিল্প প্রসারিত করেছেন । তুইনা থানার প্রধান ম্যাদাম নিমাজুগা বলেছেন , বিদ্যুত ব্যবহারের কারনে আধুনিক জীনেরর সংগে কৃষক আর পশুপালকদের ব্যবধান দূর করা হচছে ।
আগে যখন বিদ্যুত ছিল না , তখন কৃষক আর পশুপালকরা শুধু কাছাকাছির ব্যাপার জানতেন , বাইরের অবস্থা খুব কম জানতেন । সৌর শক্তিচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ার পর কৃষক আর পশুপালকরা বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেছেন , টেলিভিশনের মাধ্যমে তারা বহিরাগত বিশ্ব জেনে নিয়েছেন এবং সাংস্কৃতিক জীবণও বৈচিত্র্যময় হয়েছে ।
পার্বত্য অঞ্চলে সৌরশক্তি ব্যাপক কৃষক আর পশুপালকের জীবণযাত্রার পরিবর্তন করছে । সৌরশক্তি শুধু বিদ্যুত তৈরী আর বাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা নয় , শীত্কালে গরম লালানো , রান্না করা , গোসল করা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে । কিছু কিছু কৃষক ও পশুপালকের বাড়িতে সৌরশক্তি চালিত উনুন , হিটার , পানি হিটার ইত্যাদি সৌরশক্তি চালিত ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার করা হচছে । পরিসংখ্যান অনুযায়ী , এ পর্যন্ত তিব্বতে সাতটি দশ থেকে এক শো কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে । ফলে দু লক্ষের বেশি লোকের বিদ্যুত্ ব্যবহারের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে ।তা ছাড়া তিব্বতে সৌরশক্তি চালিত উনুনের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে , সৌরশক্তি চালিত হিটিং ব্যবস্থার আয়তন দু লক্ষ বর্গ মিটারে দাঁড়িয়েছে এবং এক লক্ষ বর্গ মিটার সৌরশক্তি পানি হিটার জনপ্রিয় করা হয়েছে । বলা যায় , তিব্বতে সৌরশক্তি জনসাধারনের জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে ।
ফলে যেমন কৃষক ও পশুপালকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে , তেমনি ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির পরিবেশও সংরক্ষন করা হয়েছে । সৌরশক্তি কাজে লাগানোর আগে পার্বত্য এলাকাগুলোতে কৃষক আর পশুপালকরা গাছ আর ঘাস কাটার উপর নির্ভর করে জীবনযাপনের শক্তি সম্পদ লাভ করতেন ।ফলে ছিংহাই-তিব্বত মালভুমিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । যেমন লাসা শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত লালু জলাভূমিতে বসবাসকারী কৃষক ও পশুপালকরা ব্যাপকভাবে ঘাস কাটার ফলে এই জলাভুমির প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । ১৯৯৫ সাল থেকে স্বায়ত্ত শাসিত অন্চল সরকার এই জলাভুমিতে প্রায় দশ কোটি ইউয়ান অর্থবরাদ্দ করে স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য সৌরশক্তি পানি হিটার ও সৌরশক্তি চালিত উনুন বসিয়েছে । এখন লালু জলাভুমির প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে ।
এই প্রসংগে সাতষট্টি বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ছুইকা বলেছেন , আমি ইটখাজে , সাননান , চিয়াংচি , ছুইসুই , নিমো সহ বহু জায়গায় গিয়েছিলাম । তখন পথের দুপাশে কোনো গাছ আর ঘাস চোখে পড়ল না । ভূমির মরুকরনের অবস্থা খুব গুরুতর ছিল । এখন এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । সড়কের দুপাশে সবুজ গাছপালায় ঘেরা । এই সব অন্চলে গাছ লাগানো হয়েছে এবং বহু জায়গা বনান্চলে পরিনত হয়েছে । এখন নদীর দু পাশে নানা জাতের পাখী স্বাচ্ছন্দে উড়ছে ।
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী , প্রতি বছর তিব্বতে সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে যে জ্বালানী বাঁচানো হয়েছে , তা এক লক্ষ তেতাল্লিশ টন কয়লার সমান ।অর্থাত্ দশ কোটি ইউয়ান মিতব্যয়ী হয়েছে ।
বহু কাল ধরে তিব্বতের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরাও ব্যাপকভাবে সৌরশক্তি কাজে লাগানোর আহবান জানিয়ে আসছেন । তাদের প্রচেষ্টায় তিব্বতের উন্নয়ন সাহায্য নামে একটি বেসরকারী তহবিল সংস্থা প্রতিষ্ঠত হয়েছে । এই তহবিলের উপ মহাসচিব আফেই চিংইউয়ান বলেছেন ,
এই তহবিল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য তিব্বতে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষনের অভিযান তরান্বিত করা , তিব্বতের দরিদ্র অন্চলগুলোর পয়ঁষট্টি হাজার কৃষক ও পশুপালকের পরিবারের জন্য সৌরশক্তি সরন্জাম বসানো , তাদের জ্বালানী , বিদ্যুত্ ব্যবহার , শীত্কালে গরম লাগানো , টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি সমস্যা দূর করা এবং তাদের জীবনযাপনের মান উন্নত করা ।
|