অশীতিপরবৃদ্ধ খোং তেআন দন্পতি উজেনে থাকেন । তাঁরা শত বছর পুরনো বাড়িতে থাকেন ।তাঁদের একসময়কার শান্ত জীবনে পরিবর্তন ঘটেছে ।কারণ এই হাজার বছরের প্রাচীন শহর পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে।তাঁদের জীবনযাত্রার রীতিনীতি খুবই আশ্চর্যজনক।
আমরা পর্যটকদের পছন্দ করি ।পর্যটকদের দেখলে আমরা খুব খুশি হই । খোংয়ের পরিবার উজেনে থাকেন ।সম্ভবতঃ তাঁরা কখনো ভাবেননি তাদের জম্ম শহর এতো বিখ্যাত । প্রতিদিন অনেক পর্যটক তাঁদের বাড়ি দেখতে আসেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ চীনের অন্য প্রদেশ থেকে ,কেউ কেউ বিদেশ থেকে এসেছেন । উজেন পূর্বচীনে অবস্থিত। উজেন থেকে চীনের বিখ্যাত শহর হাংযৌ ,সাংহাই ,সুযৌ যাতে মাত্র দুঘন্টার লাগে । উজেনে অনেক সেতু আছে । সেতুগুলো সবুজ নদীর উপর স্থাপিত হয় । নদীতে অনেক ফেরী নৌকা আছে ।এই ছোট শহরের ইতিহাস ১৩০০ বছরের বেশী দীর্ঘ। শহরটি সুন্দর ছবি মতো । পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য শহর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৬ হেক্টর জমি দর্শনীয় স্থানে রুপান্তরিত করেছে ।
এই শহরের পর্যটন কাজে নিয়োজিত কর্মচারী নি আ মাও ব্যাখ্যা করে বলেছেন , উজেনে ঐতিহ্যিক বসতি সহ সমস্ত্ত দর্শনীয়স্থান,পুরনো আবাসিক পরিবেশ সংরক্ষিত হয় ; সুজলা সুফলা এলাকার দর্শনীয়স্থান ,ঐতিহ্যিক কারখানা আর ঐতিহ্যিক জলমাতৃক গ্রামের সংগে মিশে গেছে এমন কোনো কোনো ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি এলাকায় , পর্যটকদের জন্য কিছু কিছু ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি প্রতিকলিত হয়েছে ।আরেকটি জায়গা হলো ঐতিহ্যিক বাণিজ্য আর খাওয়া-দাওয়া এলাকা । পর্যটকরা উজেন এসে বিখ্যাত খাবার উপভোগ করতে পারেন ।পূর্ব সড়ক উজেনের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা । এটা একটি পুরনো সড়ক ,সবুজ প্রস্তরফলকে সাজানো এই রাস্তা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত । স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে অর্ধেক নদীর তীরে বাস করেন । অন্যরা জল থেকে দূরে থাকেন । গাইড গাও লি পিন বলেছেন ।
আপনারা যে সব বড় বড় উদ্যান দেখেছেন সেগুলোতে আগের স্থানীয় অধিবাসিরা থাকতেন । এখন পূর্ব সড়কে ৩৫০ টির বেশী পরিবার থাকে। পর্যটকরা এখানে আসলে অনেক সেতু ,নদী,গলি,ভবন দেখতে পারেন । তা ছাড়া পর্যটকরা দক্ষিণ চীনের জনসাধারনের জীবনযাত্রা এবং রীতিনীতি অনুভব করতে পারেন । উজেনের গলি আঁকাবাঁকা ছিল ।গলির দুই পাশে খুবই উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন আস্টানা ,সবুজ বা বেগুনী রঙের গুল্মলতা দেয়াল বেয়ে ওঠেছে , মাঝে মাঝে কিছু ফুল দেয়ালের উপরে থাকে ,খুব সুন্দর দেখায় । হলঘরের মাঝখানে ছাদ নেই আর পেছনের বাগানে গৃহকর্তা অনেক ফুল ,বাঁশ বা কদলী লাগিয়েছেন । তাঁরা অবসর সময় আঙ্গুরের - চাষ করেছেন। আঙ্গুর-লতার নীচে চা খাওয়া কত আরামদায়ক! উজেন নদীর তীরের একটি প্যাডিলিয়ান অন্য নদী এলাকা থেকে পার্থক্য।প্যাভিলিয়ান খুব মজবুত , মানুষ থাকতে পারে আর বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাজাতেও পারে । উজেনের সব জিনিস পানির সংগে সম্পর্কিত ।পানি উজেনের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উজেনের বাড়ি নদীর তীরে নির্মান করা হয়েছে , নদীর উপরে সেতু বসানো হয় । উজেনের মানুষ বাইরের সংগে নদীপথে যোগাযোগ করে । উজেনের নদীর দুই তীরে সেতু আছে বলে দূরত্ব কমেছে । কারণ সেতু তাই এই নগরের শোভা বাড়িয়েছে । উজেনের অধিকাংশ সেতু পাথরের তৈরি ।এই প্রসংগে গাইডা কাও লিফিং আমাকে বলেছেন ,উজেনের সেতু একটি পরিবহন এবং কোনো বেসরকারী সমিতি বোঝা চাপাছে । এখানে আপনি বিভিন্ন রকমের সেতু দেখতে পারেন । সেতু আর জীবনের রীতিনীতির সংগে সম্পর্কিত। চান্দ্র বর্ষের প্রথম মাসের ১৫ তারিখে চীনের লন্ঠন উত্সব,এইদিনে রঙিন লন্ঠন উসব উদযাপন করা হয় । আমাদের ১০ টি বিভিন্ন সেতু অতিক্রম করতে হবে । তার মানে , সারা বছরের খুবই নির্বিঘ্নে আর শান্তিতে কেটেছে। তাই আমাদের ভালভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে ।পুনরাবৃত্তির পথ ধরে -যাওয়া যায় না । উজেনের সেতু খুবই সাধারণ । ৭০০ কিলোমিটারের কম দীর্ঘ-এই নদীর উপরে ৮টি প্রাচীন সেতু আছে । এসব সেতু আলাদা আলাদা , সেতু -জাদুঘরের মতো । বিভিন্ন সেতু নদীর উপরে অবস্থিত , যেন দু তীরের রীতি-নীতির মিলন । নদীর তীরের রেস্টুরেন্টে চা খাবার সময় বুড়ো দাদাদের হাসি-খুশী কথাবার্তা শুনতে পারেন । সেং পাও চিয়াং দাদার বয়স প্রায় ৯০ । দুপুরের খাবার শেষ করে তিনি নিয়মিত নদীর পাড়ের সর্পিল করিডোরে আসেন , তিনি পুরনো বন্ধুদের সংগে কথাবার্তা বলেন । তিনি আমাকে বলেছেন , তিনি উজেনে জম্ম গ্রহন করেছেন । প্রথমে তিনি কৃষক ছিলেন । ১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ,তিনি ব্যবসা করেছেন অবসর নেয়ার আগে পর্যন্ত।
"অবসর নেয়ার পর থেকে এখানে বসি এবং বন্ধুদের সংগে গল্প করি ।এখন আমার জীবন খুব ভালো । উজেন দর্শনীয়স্থান নির্মান করার পর , পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । উজেন একটি প্রাচীন জেলা , খুব সুন্দর জায়গা । " উজেন যেন আস্তে আস্তে খুলতে থাকা একটি ক্যামেরার ফিল্মের মতো । ফেরী নৌকা আস্তে আস্তে এসেছে , সেতু ,জল এবং বাড়ির সুন্দর দৃশ্য সবকিছুই আলোকচিত্র শিল্পীদের ক্যামেরার লেন্স এবং পর্যটকদের চোখের সামনে চমত্কার রূপ তুলে ধরেছে । এটাই উজেন । একটি স্বপ্নের জলমাতৃক এলাকা , যা আদৌ ভোলা যায় না ।
|