 আপনারা জানেন গত ৫ ও ৬ই আক্টোবর ভারতের সুবিখ্যাত আধুনিক ও ঐতিহ্যিক চলচ্চিত্র নাচগান শিল্পী দল চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে দুটি চমত্কার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে। আমি আর আমার সহকর্মী মিস খোং চিয়া চিয়া একসংগে পেইচিং প্রদর্শনী হলে গিয়ে গোটা অনুষ্ঠান দেখেছিলাম, অপুর্ব সুন্দর লেগেছে। তাদের নাচ-গানে আমি কিন্তু শুধু প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি দেখেছি তা নয়, আধুনিক ভারতের ঐশ্বর্যও উপভোগ করেছি।
আচ্ছা, আর কথা নয়। চলুন, আজ আমরা একসংগে এই অনুষ্ঠানের সংগীত সাগরে একটু অবগাহন করবে।
ভারতের শিল্পীদের এবারকার অনুষ্ঠান চীনে খুব সমাদৃত হয়েচে। সব টিকিট অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিক্রী হয়েছে। হলের ভেতরে গিয়ে দেখলাম, তিল ঠাঁই নেই। এই দৃশ্য দেখে বোঝা যায় ভারতের নাচগান চীনা জনগণের মধ্যে কী যে জনপ্রিয়। আমরা একটি খুব মজার দৃশ্যও দেখেছি: মঞ্চের নৃত্য শিল্পীদের সুন্দর নাচ দেখে, দর্শকদের মধ্যে একজন ৪ বা ৫ বয়সের পুতুলের মতো তুলতুলে মেয়েও তাঁদের সংগে সংগে নাচে, পরে মেয়েটি তার মাকে টেনে নিয়ে তার সংগে সংগে নাচে, অন্য দর্শকরাও তাদের উচ্ছ্বাসে মুগ্ধ হয়ে তাদের জন্য ঊষ্ণকরতালি দিয়েছে। বন্ধুরা, এই দৃশ্য দেখে আপনারা মুগ্ধ হবেন না?
আসলে চীন আর ভারতের সংস্কৃতিতে অনেক মিল আছে, সংগীতের পার্থক্যও খুব স্পষ্ট নয়। কারন আমরা একই ইতিহাস ভাগাভাগি করি। অনেক দিন আগে, চীন আর ভারতের সংস্কৃতি একে অপরকে প্রভাবিত করেছিলো , যেন জল আর দুধের মতো একসংগে মিশে যায়।
এই দলের কন্ঠশিল্পী শ্রী রবী কে ত্রিপতী তাঁর চীনা বন্ধুর সাথে একটি চীনা গান শিখেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি চীনা গানের আকর্ষণে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছেন।
এই গানের অর্থ হলো:
太阳下山明天依旧爬上来
পাহাড়ের ওপাশে সূর্য ডুবে যায় আগামীকাল আবার উঠে আসবে
花儿谢了明年还是一样的开
ফুল বিবর্ণ হয়েছে কিন্তু আগামী বসন্তে আবার সুন্দর হয়ে ফুটবে
美丽小鸟一去无影踪
সুন্দর পাখিটি উড়ে যায় দৃষ্টির আড়ালে
我的青春小鸟一去不回来,我的青春小鸟一去不回来
আমার কৈশোরও পাখিটির মতোই চলে গেছে, ফিরবে না কোনো দিন
এই দলের অন্যতম প্রধান নৃত্য-শিল্পী সোনারীর বড় ভাই সুধির চীনের সাংহাই শহরে কাজ করেন, তিনি তাঁর বোনের অনুষ্ঠান দেখার জন্য পেইচিংয়ে এসেছেন। আমাদের সাক্ষাতকার দেয়ার সময় তিনি একটি গল্প বলেছেন, আমি এখানেই আপনাদের গল্পটি শুনাবো।চীন আর ভারতের সীমান্তে মোতায়েন দু'দেশের সেনাবাহিনী। এখানে দু'দেশের সীমান্ত বিরোধ আছে, আর মাঝে মাঝে গুলি-বিনিময়ও হয়।পয়লা অক্টোবর –চীনের জাতীয় দিবসে একটি মজার ঘটনা ঘটেছে ঠিক এখানেই। চীনের বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল অফিসার চীনের সীমান্ত পার হয়ে ভারতের ভূভাগে প্রবেশ করেছেন। ভারতের সৈন্যরা খুব নার্ভাসভাবে তাদের বন্দুক উঠিয়ে নিয়ে চীনা অফিসারের দিকে তাক করেছেন। কিন্তু তাদেরকে অবাক করে দিয়ে চীনা অফিসার তাদের প্রতি চীনের জাতীয় দিবস একসংগে উদযাপন করার আমন্ত্রন জানিয়েয়েন।পরে চীনা আর ভারতীয় সৈন্যরা আনন্দ-ফুর্তিতে একসংগে উদযাপন করেছেন। ভারতীয় সৈন্যরা কখনো চিন্তা করেন নি যে চীনা মানুষ এত বন্ধুত্বপূর্র্। প্রিয় বন্ধুরা যদি এই ঘটনা দু'দেশের সৈন্যদের মধ্যে সম্ভব, তাহলে অসম্ভব বলে কিছু কি আছে?
এই পরিবেশনার মর্ম কথা হচ্ছে প্রেম। প্রেম হচ্ছে বিশুদ্ধতম প্রকাশ-ভংগী। আমরা উভয়েই হৃদয়-বিহারী জাতি। আমাদের আরো বেশী আদান-প্রদান দরকার। এই পৃথিবী সুখে ভরে থাক-এ আমাদের অভিন্ন স্বপ্ন।
|