v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-10-28 20:00:21    
লিচিয়াংএর কিছু পরিচয় তুলে ধরবো।

cri
    চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশে অনেক দর্শনীয়স্থান আছে।সেখানকার অদ্বিতীয় দৃশ্য সব সময় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আর্কষণ করে থাকে।প্রত্যেক বছর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক ইয়ুন্নান প্রদেশের বিভিন্ন দর্শনীয়স্থানে ভ্রমণ করতে যান।আজকের এই আসরে আমরা আপনাদের কাছে ইয়ুন্নান প্রদেশে অবস্থিত লিচিয়াংএর কিছু পরিচয় তুলে ধরবো।লিচিয়াংএর পুরানো নগর হলো চীনের সুসংক্ষরিত একগুচ্ছ প্রাচীন স্থাপত্য।সেখাকার কাঠের সুচারু ভাস্কর্য, বাতাসে দোলায়মান ঘন্টার ঢংঢং আওয়াজ, পাথর দিয়ে সাজানো সড়কে নৃত্যরত নাসি জাতির মানুষ, এই ছোট নগরে বসবাসরত জনসাধারণের জীবনে পরিপূর্ণ রহস্যময় ডংপা সংস্কৃতি এবং উচ্চ স্বরে পুরানো নাসি জাতির গান গাওয়া নাসি জাতির বৃদ্ধরা সবাই পর্যটকের কাছে সপ্ন আর রহস্যের মতো ।যদি আপনারা লিচিয়াং সম্বন্ধে জানতে চান তাহলে লিচিয়াং সম্বন্ধে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি রেকডিংভিতিক রিপোট শুনবেন।উপস্থাপন করছেন আপনাদের বন্ধু চিয়াং চিন ছেন--।

    সাত বছর আগে, ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুসারে লিচিয়াং বিশ্ব সাংস্কৃতিক উতরাধিকার তালিকায় অন্তভূর্ক্ত হয়।এর পর চীনের পশ্চিমাংশের ইয়ুন্নান প্রদেশে অবস্থিত লিচিয়াং পুরানো নগর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসেছে।সারা বছর লিচিয়াং পুরানো নগরের সড়কে অধিক থেকে অধিকতর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দেখা যায়।সামান্যভাবে সাজিয়ে-দেয়া পুরানো শৈলীর ঘরগুলোতে বাস করে লিচিয়াং-প্রেমী জনসাধারণ।ওখানে আছে বিভিন্ন ধরনের রোমানটিক আমেজসম্পন্ন বার, কফির দোকান।সে সব দোকান দুপুরের পর পর্যটকদের জন্য অবসর নেওয়ার সুন্তোষজনক জায়গায় পরিণত হয়েছে।লিচিয়াংএর সমস্ত জিনিস মনে হয় বিশেষভাবে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।দীর্ঘকাল ধরে লিচিয়াংএ পর্যটন সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত হো গুয়ে লিন বলেছেন, ইতিহাসে লিচিয়াং ছিল দক্ষিণ-উতর সংযুক্ত জায়গা।

    অতীতে লিচিয়াং ইয়ুন্নান প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল।দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ এখানে বিভিন্ন কাজে আসতো।চীনের দক্ষিণ আর উতরাঞ্চলের জলবায়ুর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে বলে এবং পাহাড়ের ত্রি মাত্রিক জলবায়ুর দরুণ, ইতিহাসে দক্ষিণ চীনের অনেক লোক লিচিয়াং গেলে আর উতর চীনে যাবেন না ।আবার উতর চীনের লোকেরা লিচিয়াং আসলে আর উতর চীনে ফিরে যেতে যান না।যার ফলে লিচিয়াং একটি বহুমুখী সংস্কৃতির মিলন স্থালে পরিণত হয়েছে।সুতরাং লিচিয়াং একটি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জায়গা।যেমন ধরুন লিচিয়াং পুরানো নগরে প্রত্যেক পরিবারের সামনে পানি থাকে , প্রত্যেকটি কাড়ীঘরের চার দিকে ভিল গাছ লাগানো হয় ।লিচিয়াং পুরানো নগর সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ২৪০০ মিটারের বেশী উচু মালভূমিতে অবস্থিত।তা সত্বেও মালভূমিতে অবস্থিত এই নগর দক্ষিন-উতর আদান-প্রদানের দরুণ সংরক্ষিণ হয়েছে।বর্তমানে গোটা নগরের আয়তন তিন দশমিক আট বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি।ওখানে ৬২০০টি পরিবার বাস করে।তাদের মধ্যে অধিকাংশ হলো নাসি জাতি।লিচিয়াং পুরানো নগরে শতকরা ৩০ ভাগ অধিবাসী রৌপ্য ও পিতলের যন্ত্রপাতি , রেশম ও চামড়া , বস্ত্রবয়ন আর ভিনিগা, মত প্রভৃতি তৈরী ঐতিহ্যিক হস্তশিল্প আর বাণিজ্যিক পেশায় নিয়োজিত হয়।লিচিয়াং পুরানো নগরের কেন্দ্রে অবস্থিত বর্গাকারের সড়ক লিচিয়াং পুরানো নগরের প্রতিনিধি হিসেবে বলা যায়।এই সড়ক ঠিক পুরানো নগরের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত।এই সড়ক আসলে হলো প্রায় এক শো বর্গ মিটারের একটি মই আকারের ছোট চত্বর । মাটির উপরে পাথরের আস্তরন ।সড়কের দু পাশে কেবল ছোট-বড় দোকানের সারি।এই সড়ক লিচিয়াং নগরের সমস্ত সড়কের উত্স।কারণ এই সড়ক নগরের চারটি প্রধান সড়কের দিকে বিস্তারিত হয়।আবার এ চারটি প্রধান সড়ক থেকে আরো বেশ কয়েকটি ছোট গলি বিস্তৃত হয়েছে। সড়ক মাকড়সার জালের মতো নগরের চার দিকে বিস্তৃত হয়েছে।সুতরাং এই নগরে চলাফেলা সুবিধাজনক। লিচিয়াং পুরানো নগর সেতুর জাদুঘর।নগরের ভিতরে ইয়েহো নদীর উপর ৩৫০টিরও বেশী সেতু নির্মান করা হয়েছে।যেমন. বাতাস-বৃষ্টি সেতু, পাথরের খিলান সেতু, পাথরের স্লাব সেতু , কাঠের সেতু ইত্যাদি।এসব সেতুর ইতিহাস ৪ থেকে ৫ শো বছরের বেশী দীর্ঘ।এই বর্গাকারের সড়ক থেকে ১০০ মিটার দূরের পাথরের সেতুর উপর দাঁড়ালে সেতুর নিচে পানিতে লিচিয়াংয়ের বিখ্যাত তুষার পাহাড়---ইয়েলন পাহাড়ের ছায়া দেখা যায় ।কাঠের প্রাসাদ যেখানে নাসি জাতির সর্বোচ্চ শাসক, ঠুস বসবাস করতেন সেখানে এখন নির্জন।তবে ছোট-বড় ১৬০টি ঘর, আসবাবপত্র এবং উদ্যানে ফোটা ফুল থেকে বুঝা যায় তখনকার শাসকরা কিভাবে বিলাসী জীবনযাপন করতেন।লিচিয়াং পুরানো নগরে আপনি হয়তো অজানতে তার অতীত দেখতে পারেন। আপনি রাস্তায় হেঁটে বেড়ালে যেমন অবশেষে বর্গাকারের সড়কে পৌছতে পারেন, তেমনি অজানতে আপনি নাসি জাতির ডংপা ভাষা দেখতে পারেন এবং নাসি জাতির মনোরম ঐতিহ্যিক সংগীত শুনতে পারেন।তাহলে নাসি জাতির ঐতিহ্যিক সংগীত শুনুন।

    চীনে পুরানো নগরের রস পরিপূর্ণ ছোট শহর আরো আছে। যেমন চিয়াংসু প্রদেশের চোও টাউন, বাই জাতির রীতিনীতিসম্পন্ন তালি।অথচ লিচিয়াং পুরানো নগরের বৈশিষ্ট্য তার বিশিষ্ট ডংপা সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয়।ছবির মতো ডংপা ভাষার শব্দ , প্রাকৃতিক সংগীত---নাসি জাতির ঐতিহ্যিক সংগীত সবাইকে মগ্ধ করে তুলে এবং মনে গভীর ছাপ রেখে দেয়।ইসুয়েসে নামে ডংপা গ্রাম এমন একটি গ্রাম যেখানে ডংপা সংস্কৃতি সম্পূর্ণভাবে অনুভব করা যায়।হো জান চিয়াং নাসি জাতির বংশধর যিনি ডংপা সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ডংপা গ্রাম নির্মান করেছেন।সেখানে কয়েক শো বছর আগের নাসি জাতি বসবাস বাড়ীঘর এবং ডংপা অধিবাসিদের ঐতিহ্যিক জীবন আর পড়াশুনার পদ্ধতি সংরক্ষিত রয়েছে।হো জান চিয়াং বলেছেন,

    ডংপা গ্রাম হলো ডংপা পুজা পালন করার জায়গা।এই পুজা ততপরতা ডংপা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ।উয়েসুজে প্রত্যেক বছর এক বার করে এই পুজা ততপরতা পালিত হয়।এই ততপরতাকে ডংপা মেলা ডাকা হয়।তিনি বলেছেন, বতর্মানে ডংপা সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানেন এমন বৃদ্ধের সংখ্যা আর বেশি নেই।ডংপা সংস্কৃতি রক্ষার জন্য সম্প্রতি ডংপা গ্রামে ৪০ জনেরও বেশী যুবক-যুবতী ডংপা সংস্কৃতি শিখছেন।তিনি সংবাদদাতাকে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে বললেন, এখন লিচিয়াংএর ডংপা সংস্কৃতির উতরাধিকারী আছে।ডংপা সংস্কৃতির দরুণ লিচিয়াং পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।এটা সম্ভবত: অনেক পর্যটক লিচিয়াংকে ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বেছে নেয়ার প্রধান কারণ।