চীন একটি বৃহত্ কৃষি উত্পাদনকারী দেশ, চীনে কৃষকদের সংখ্যা ৮০ কোটি । দীর্ঘকাল ধরে, চীনের গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের চিকিত্সার জন্যে পয়সার অভাব ছিল । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সমস্যায় সরকারের নিবিড় মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে । সরকার ইতিমধ্যেই সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে সমবায়মূলক চিকিত্সার নিশ্চয়তাব্যবস্থার প্রবর্তন শুরু করেছে । তাই আজকের এই বর্ণচ্ছটা অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে দেখাবে , সেখানে এই ব্যবস্থা কিভাবে চালু হয়েছে।
তিব্বত অঞ্চল এক সুবিশাল ও সু-উচ্চ মালভুমি ,জন্টিল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে ,সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি মন্হর । চীনসরকারের উদ্যোগে বরাবরই সেখানকার কৃষক্আর পশুপালকদের মধ্যে বিশেষ চিকিত্সা নিশ্চয়তাব্যবস্থা চালু রয়েছে । মানে প্রতিবছরই সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে মাথাপিছু কিছু চিকিত্সাভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় । অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংগে সংগে যদিও এই ভাতাও বাড়তে থাকে , তবুও তা তাদের চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজন মেটাতে পারছে না ।
১৯৯৭ সাল থেকে তিব্বত অঞ্চলে এই ব্যবস্থার উন্নতির জন্যে কৃষক ও পশুপালকদের মধ্যে এক নতুন ব্যবস্থা অর্থাত্ সমবায় চিকিত্সানিশ্চয়তা ব্যবস্থার প্রবর্তন শুরু হয়েছে । এই ব্যবস্থা আসলে হলো প্রতিটি ইউনিয়পরিষদের অধীনে সমবায় চিকিত্সা তহবিল গড়ে তোলা , অর্থাত্ প্রত্যেক কৃষক আর পশুপালককে দেয়া মাথাপিছু সরকারী চিকিত্সাভাতা একত্রিত করে মূল তহবিলটিতে রাখা হয় , আর কৃষক ও পশুপালকরা প্রতিবছর তাদের বিশুদ্ধ আয়ের দেড় থেকে তিন শতাংশ পর্যন্ত এই তহবিলে জমা রাখেন, আসলে বছরে মাথাপিছু মাত্র পনেরো ইউয়ান ,মানে দুই ডলারেরও কম অর্থ এই তহবিলে জমা রাখতে হয় । আর যারা গরীব, বেকার বা বিকলাঙ্গ তাদের জন্যে স্থানীয় সরকারই অর্থ তহবিলে জমা রাখে ।
তিব্বতী কৃষক আর পশুপালকরা স্বেচ্ছায় এই নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারেন এবং নাও নিতে পারেন । তাতে অংশগ্রহণকারীরা অসুস্থ হয়ে চিকিত্সার জন্যে খরচ করলে ক্লিনিক চিকিত্সার খরচের শতকরা সত্তর ভাগ ঐ তহবিল থেকে পান ,আর হাসপাতালে থাকার খরচের শতকরা ৫০ থেকে ৮৫ ভাগ তহবিলটি থেকে পান ।
প্রায় চার বছর হলো তিব্বতের দুইলোংতেছিং জেলায় এই তহবিল ব্যবস্থা চালু হয়েছে । প্রথম থেকে এ পর্যন্ত মোট তিরিশ হাজার কৃষক ও পশুপালকপরিবার এই তহবিলে যোগ দিয়েছেন , এই সংখ্যা সারা জেলার কৃষক ও পশুপালকপরিবারের মোট সংখ্যার নব্বই শতাংশেরও বেশী । জেলাটির ৬৫ বছরের বৃদ্ধা দজিচোমা বলেছেন
সমবায়র চিকিত্সা ব্যবস্থা স্থাপন হলো মায়েদের কল্যানে সরকারের দেয়া একটি বিরাট সহায়তা । গত পরশুবছর আমার ছেলের অসুখ হয়েছে , হাসপাতালে চিকিত্সার খরচ হয়েছে দশ হাজার ইউয়ানেরও বেশী । সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থাপনাকমিটি নিয়ম অনুসারে আমাদের খরচের নির্দিষ্ট অনুপাত বহন করেছে, ফলে আমাদের পরিবারের আর্থিক বোঝা অনেক লাঘব হয়েছে । তাই আমরা দৃড়ভাবে গ্রামাঞ্চলে সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থা স্থাপনকে সমর্থন করি এবং স্বাগত জানাই । আগে যারা এই ব্যবস্থায় অংশ নেয়নি তারাও এখন অংশ নিয়েছে এবং নিচ্ছে । তিব্বতে সমবায়চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রবর্তন থানা, ইউনিয়ন ,আর গ্রাম পর্যায়ের চিকিত্সাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে । তুই লোংতেছিং জেলার একটি ইউনিয়নপর্যায়ের চিকিত্সাকেন্দ্রের নারী ডাক্তার পোমাছিচি সংবাদদাতাকে বলেছেন :
এখন আমাদের চিকিত্সাকেন্দ্রে চিকিত্সা নিতে আসা লোকদের সংখ্যা বেড়েছে । চিকিত্সাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা জোরদার হয়েছে , ওষুধপত্রের রকমারিতাও বাড়ানো হয়েছে, ছোটখাটো অসুখ হলে আমাদের এই ইউনিয়ানের বাইরে গিয়ে চিকিত্সা করার আর দরকার হয় না, এখানে চিকিত্সা হয়ে যায় ।
চালু হবার কয়েক বছরের মধ্যে সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থা তিব্বতের কৃষি ও পশুচারণ এলাকায় সমাদৃত হয়েছে । বর্তমানে তিব্বত অঞ্চলের ছ' শো পঞ্চাশটিরও বেশি ইউনিয়নে সমবায় চিকিত্সাতহবিল গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে পনেরো লক্ষ কৃষক আর পশুপালক অংশ নিয়েছেন, মানে ইউনিয়নের মোট সংখ্যার ৮০ শতাংশ আর কৃষক ও পশুপালকদের মোটসংখ্যার ৭৫ শতাংশ এই তহবিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । তিব্বত অঞ্চলের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তা ওয়াং চিয়েনফেং বলেছেন
সমবায় চিকিত্সাব্যবস্থা তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের চিকিত্সার নিশ্চয়তাব্যবস্থার প্রধান পদ্ধতি হয়েছে , রাষ্ট্র আর ব্যক্তির যৌথ-অর্থবিনিয়োগে চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষার নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে কৃষক ও পশুপালকদের চিকিত্সাসমস্যার বেশ কার্যকর সমাধান হয়েছে, এবং ধাপে ধাপে তাদের স্বেচ্ছায় তহবিলে অংশ নেয়ার সচেতনতা বা আগ্রহ উন্নততর হচ্ছে । তাতে তাদের আরও পূর্ণাংগ চিকিত্সার নিশ্চয়তাব্যবস্থা গঠনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।
জানা গেছে, তিব্বতের সকল কৃষক আর পশুপালক যাতে সমবায় চিকিত্সার সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারেন , তার জন্যে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এই ব্যবস্থা আরও জনপ্রিয় ও পূর্ণাংগ করার প্রয়াস চলছে । আর চীনের অন্যান্য অঞ্চলেও এই ব্যবস্থা বিপুল প্রয়াসে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করা হয়েছে । দু'হাজার দশ সালে চীনের যাবতীয় পল্লিগ্রামেই এই ব্যবস্থা চালু হবে ।
|