মোঃ নাজমুল ইসলাম , প্রেসিডেন্ট
সংগীতার স্কাই ইন্টারন্যাশনাল রেডিও লিসনার্স ক্লাব
চুয়াডাঙ্গা , বাংলাদেশ
১৯৮৩ সালের কোন এক মেঘলা সন্ধ্যায় স্থানীয় লাইব্রেরী থেকে কাগজ কলম কিনে বাড়ি ফিরছিলাম । লাইব্রেরী ছেড়ে কিছু দূর যাবার পর পথে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি । কাছে ছাতা না থাকায় আশ্রয় নিলাম রাস্তার পাশে একটি বাড়ির বারান্দায় । ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি ঝরে চলেছে একটানা। যেন আকাশ ভেঙ্গে বর্ষণ শুরু। রাস্তায় যে কয়টা রিক্সা চলছিল তাদেরও কেমন যেন নিঃশব্দ গতি । পীচঢালা পথে শুধু বৃষ্টি পতনের শব্দ আর দু-পাশে গড়িয়ে যাওয়া জলের ধারা । দীর্ঘসময় অতিক্রান্ত হবার পর বৃষ্টির ফোটাগুলো ছোট হয়ে এলো , গতি হলো ধীর । পড়তে শুরু করল টিপ টিপ করে।
আমি একা সেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিবিড় মনে বৃষ্টির ফোটার শব্দ শুনছিলাম । হঠাত্ বাড়ির ভিতর থেকে একটা মধুর আওয়াজ ভেসে আসাতে সেদিকে মনোনিবেশ করলাম । শুনতে পেলাম একজন বিদেশী মানুষ সুমধুর কন্ঠে বাংলায় বলছেন -রেডিও পিকিং ।
কী আশ্চর্য ! এক জন বিদেশী মানুষ এত সুন্দর উচ্চারন করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় খবর পাঠ করছেন । খবর প্রায় শেষ , এমন সময় আমার এক সহপাঠীর ডাকে সাড়া দিতে পথে নামতে বাধ্য হলাম তার ছাতার তলে আশ্রয় পেয়ে বাড়ি ফেরা যাবে বলে । সেই মুহুর্তে অনুষ্ঠান শোনা থেকে বঞ্চিত হলাম । পরদিন সকালে আমার একটাই চিন্তা রেডিও সংগ্রহ করতে হবে। কারণ তখন আমার কোন রেডিও ছিল না । একই পাড়ার আজাদ আলীর কাছে রেডিও চাইতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলাম । শেষে অনেক কষ্টে পুরানো বই-খাতা বিক্রির ২০০ টাকার বিনিময়ে এক জনের কাছ থেকে একটি পুরানো রেডিও কিনে ফেললাম । রেডিও কেনার প্রথম দিনই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম কখন ভেসে আসবে সেই মধুর আওয়াজ এবং কখন শুরু হবে অনুষ্ঠান । কিছু ক্ষন বাদেই ভেসে এলো সেই মধুর আওয়াজ , শুরু হলো অনুষ্ঠান । শুরু হলো আমার-রেডিও পিকিং এর অনুষ্ঠান শোনা ।
আর সেদিনই জীবনের স্বল্প পরিসরে আমি আমার মনে রচনা করলাম-আমার পথ চলার গর্বকে । নিয়মিত শুনতে শুরু করলাম "রেডিও পিকিং" এর অনুষ্ঠান-খবর , গল্প ছাড়াও চীনা শিল্পীদের কন্ঠে মজার মজার সব বাংলা গান । প্রাণের প্রসারিত মোহনায় মিলিত হবার প্রীতিময় আগ্রহ নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি পত্র যোগাযোগও শুরু করে দিলাম । সেই থেকে আজ অবধি যোগাযোগ-আমার এবং বর্তমান "সি আর আই " এর ।
উল্লেখ্য ১৯৮৪ সালের বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতা , ১৯৮৬ সালে আমি এবং "রেডিও পেইচিং" শিরোনামে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা , ১৯৮৮ সালে চীনের ড্রাগন বর্ষ উপলক্ষ্যে "আমার চোখে চীন" শীর্ষক পুরস্কারমূলক প্রতিযোগিতা , ১৯৯৬ সালে "আমি এবং সি আর আই " রচনা প্রতিযোগিতা, ১৯৯৭ সালে সেন সি প্রদেশের পর্যটন শিল্প আর অর্থ বিনিয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান যাচাইমূলক প্রতিযোগিতা ছাড়াও এ বছরের সদ্য শেষ হওয়া জরিপেও আমি অংশ গ্রহন করেছি। যত বার বর্তমান সি আর আই এর সাথে পত্র যোগাযোগ করেছি , তত বারই কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমার চিঠির জবাব দিয়েছেন । চীন সম্পর্কে যা যা জানতে চেয়েছি , প্রতিটি প্রশ্নের জবাব তারা রেডিওর মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে প্রচার করেছেন এবং করছেন ।
সি আর আই এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল - বিশ্ব ঘটনা সম্পর্কে তথ্য নিরপেক্ষভাবে শ্রোতাদের মাঝে তুলে ধরা । আর এ জন্যই দিনের পর দিন সি আর আই এর শ্রোতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে । যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে আমরা হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও সি আর আই এর বাংলা অনুষ্ঠান স্পষ্ট ভাবে শুনতে পারছি , তাদের প্রতি আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ । সবশেষে সি আর আইকে ভালবেসে , সি আর আই এবং আমার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যাবো আনন্দময় জীবনের প্রত্যাশায় ।
|