v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-10-27 12:54:56    
পেইচিংয়ের নিউ চিয়ে সড়ক

cri
    পেইচিং শহরের দক্ষিণাংশে অবস্থিত নিউ চিয়ে স্ট্রিট হচ্ছে পেইচিং শহরের সবচেয়ে বেশী বিশিষ্টতাসম্পন্ন সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকা। গত কয়েক বছর ধরে পেইচিং শহরের নিউ চিয়ে স্ট্রিট অবকাঠামো, অধ্যবাসীদের বসতবাড়ী ইত্যাদি ক্ষেত্রের সংস্কার চালানোর পর নিউ চিয়ে স্টিটের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন পেইচিং পৌর সরকার নিউ চিয়ে স্টিট অবস্থিত সমজিদের ব্যাপক মেরামতের পরিকল্পনাও আটঁছে।

    পেইচিংয়ের ছাংআন স্ট্রিটের বিখ্যাত বানিজ্যিক কেন্দ্র সিতান থেকে দক্ষিণ দিকে গেলে দুটা রাস্তা পার হওয়ার পর একটির পর একটি হলুদ রঙের দালান দেখতে পাওয়া যায়। এটাই হুই জাতি অধ্যুষিত নিউ চিয়ে স্ট্রিট। নিউ চিয়ে স্ট্রিটের দৈর্ঘ্য ছয়শো মিটার আর চওড়া চল্লিশ মিটারের বেশী। নিউ চিয়ে স্ট্রিটের দুপাশে আছে নিউ চিয়ে মসজিদ ও তেতাল্লিশটি প্রাচীন গাছ এবং মুসলিম স্থাপত্যরীতির বেশ কিছু দোকানপাট। দোকারপাটের মধ্যে বিভিন্ন জাতীর পোশাকের দোকান, শিল্পকর্মের দোকান, মুসলিম খাবার সহ নানা খাবারের দোকান আর রেস্তোঁরেন্টের সংখ্যাই বেশী। পেইচিং শহরের প্রথম খাসীর মাংসের সুপারমার্কেট এবং মুসলিম খাবারের সুপারমার্কেটও এখানে অবস্থিত।

    নিউ চিয়ে এলাকায় হুই জাতির দশ সহস্রাধিক অধিবাসী সহ মোট বাইশটি সংখ্যালঘু জাতির পঞ্চশ সহম্রাধিক লোক বসবাস করেন। তাই নিউ চিয়ে স্ট্রিটকে হুই জাতির অধ্যুষিত এলাকা বলেই গণ্য করা হয়ে থাকে।

    কল্পনা করা মুশকিল যে, কয়েক বছর আগেও এই সুন্দর রাস্তা ছিল সংকার্ণ জরাজীর্ণ। উনিশ শো সাতানব্বই সালের আগে এই এলাকায় মোট তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভাঙা জীর্ণ একতলা বাড়ীঘর ছিল। অধিবাসীদের মাথাপিছু আবাসিক স্থানের আয়তন ছিল মাত্র পাঁচ বর্গমিটারের মতো। জীবনযাত্রার অবস্থা আর আবাসিক পরিবেশের উন্নতি সাধনের জন্যো উনিশ শো সাতানব্বই সাল থেকে পেইচিং পৌর সরকার এই এলাকায় সংস্কার করেছে। বর্তমানে সংস্কার প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিন হাজার তিন শো পরিবার নতুন বাড়ীতে স্থানান্তরিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ দুই হাজার চার সালে সম্পন্ন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তখন সকল অধিবাসী নতুন বাড়ীতে স্থানান্তরিত হবেন।

    নিউ চিয়ে এলাকার প্রায় অর্ধশতাব্দীর অধিবাসী, সত্তর বছর বয়স্ক ফোং কুয়ান ইন সবেমাত্র নতুন বাড়ীতে স্থানান্তরিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, পেইচিং পৌর সরকার নিউ চিয়ে স্ট্রিটের ভাঙাচোরা বিপজ্জনক বাড়ীগুলো সংস্কার করে এই এলাকায় আমুল পরিবর্তন সাধন করেছে এবং এই এলাকার ব্যাপক হুই জাতির জনসাধারণের উপকার করেছে।

    নিউ চিয়ে স্ট্রিটে বসবাসকারী হুই জাতির লোকেরা এখনো তাদের ঐতিহ্যগত অভ্যাসগুলো বজায় রেখেছেন। তাঁরা রোজ সমজিদে নামাজ পড়তে যান। তাই নিউ চিয়ে মসজিদ এখানকার অধিবাসীদের প্রাত্যহিক মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে।

    নিউ চিয়ে মসজিদ নির্মিত হয় নয়শো ছিয়ানব্বই খৃষ্টাব্দে চীনের সুং রাজবংশের আমলে। পরে ইউয়ান, মিং ও ছিং রাজবংশের সময়ে এটিকে মেরামত ও সম্প্রাসারণ করে উত্তর চীনের মুসলমানদের প্রধান প্রার্থনাস্থলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চীন সরকার তিন তিনবার নিউ চিয়ে মসজিদের ব্যাপক মেরামত করে। এখন মসজিদের আয়তন দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার বর্গমিটারে।

    নিউ চিয়ে মসজিদের ইমাম ইন কো ফাং সংবাদদাতাকে বলেছেন, নিউ চিয়ে মসজিদে রোজ পাঁচবার নামাজের প্রতিবারেট প্রায় একশো থেকে দেড়শো লোক নামাজ পড়েন। জুম্মার নামাজের সময়ে এখানে প্রায় পাঁচ ছয় শোজন লোক কোনো কোনো সময়ে সাত আট শোজন লোক জমায়েত হন। গত বছর ঈদের সময়ে জমায়েত হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশী লোক। যদিও নিউ চিয়ে মসজিদ শত শত বছর অতিক্রম করেছে তবুও নামাজ পড়ার বিশাল প্রাসাদ, চাঁদ অবলোকন প্রাসাদ, ধর্মীয় শাস্ত্র অধ্যয়ন প্রাসাদ, ধর্মীয় শাস্ত্র খচিত প্রস্তরফলক রাখা প্যাভিলিয়ন ইত্যাদি স্থাপত্যকর্ম এখনো ভালভাবে সুরক্ষিত আছে। বিশেষ স্থাপত্যরীতির প্রাসাদের ছাদের সবখানেই কোরানশরীফ এবং আরব ধরণের মসজিদের সংগে চীনের প্রাচীন প্রাসাদ ধরণের স্থাপত্যকর্মের নিখুঁত সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।

    পরিকল্পনা অনুসারে ২০০৩ সালে পেইচিং পৌর সরকার প্রায় দুই কোটি ইউয়ান রেনমিনপি বরাদ্দ করে মসজিদের ভেতরকার স্থাপত্যলোর ব্যাপক সংরক্ষণ ও মেরামত করবে এবং নারী মুসলমান উপাসনালয় ও স্নানাগার নির্মান করেছে এবং পানি, বিদ্যুত্ ও পুরাকীতি রক্ষা ইত্যাদি আনুষংগিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করেছে।

    সত্তর বছর বয়স্ক ফোং কুয়ান ইন মসজিদটি মেরামতের সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা জানার পর আন্নদের সংগে বলেছেন, নিউ চিয়ে স্ট্রিটের মুসলমানরা এই দিনের প্রতীক্ষায় আছেন। তারা মনেপ্রাণে পাটিঁর ধর্মনীতি ও জাতিতত্ত্ব নীতির জন্যে কৃতজ্ঞ।