তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল "পৃথিবীর ছাদ" বলে পরিচিত ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত। তা চীনের বহু নদীর উত্পত্তিস্থল। ওখানে বহু বরফে ঢাকা উঁচু পর্বত আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব ভাল নয়। প্রতিকূল ভৌগলিক গঠনপ্রকৃতির দরুন তিব্বতের কৃষি ও শিল্প উন্নয়নের মান অনুন্নত ছিল। ১৯৫১ সালে তিব্বত শান্তিপূর্ণভাবে মুক্ত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে তিব্বতে সড়ক নির্মান করা হয়েছে এবং বিদ্যুত্, খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াকরন প্রভৃতি শিল্প উন্নয়ন করা হয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রা হাজার পরিবারে প্রবেশ করেছে।
তিব্বতের বেশির ভাগ জনসংখ্যা আর প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান রাজধানী লাসা, ইটখাচা প্রভৃতি কয়েকটি প্রধান নগরে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। আগে লোকদের পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক ধারনা দুর্বল ছিল বলে লাসা শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ গুরুত্বভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত লালু ভিজামাটির আয়তন ৬.২ বর্গ কিলোমিটার।তা লাসার মোট আয়তনের ১১ শতাংশেরও বেশি। ভিজামাটিতে ৯৫ শতাংশেরও বেশি স্থান উদ্ভিদে আবৃত। কাজেই সেখানে প্রচুর অক্সিজেন পাওয়া যায়। এটা লাসার প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা করতে সাহায্য করেছে। তাতে যেমন শহরাঞ্চলের আর্দ্রতা বেড়েছে, তেমনি ধূলো ও বালি নিবারণ করা হয়েছে আর সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। ভিজামটির আশেপাশে বসবাসকারী অধিবাসী ম্যাদাম পারাম সংবাদদাতাকে বলেছেন, আগে আমাদের জ্বালানীর দারুন অভাব ছিল। জীবনযাত্রার নিত্য চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা বাধা হয়ে পাহাড়ে ঝোপ কাটতাম আর ভিজামাটিতে ঘাস সংগ্রহ করতাম। ফলে পরিবেশ গুরুত্বরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৯৯৫ সাল থেকে স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল সরকার ভিজামাটিতে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল সরকার ভিজামাটিতে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল স্থাপন করেছে এবং এই অঞ্চল সুরক্ষা করার জন্য প্রায় ১০ কোটি ইউয়ান রেনমিনবি অর্থবরাদ্দ করেছে। পারাম বলেছেন, এখন জ্বালানী ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করার প্রয়োজন নেই। আমরা গ্যান ও সৌরশক্তি চালিত ওয়াটার হিটার ব্যবহার করছি। নানা জাতের পাখীও পুনরায় ভিজামাটিতে ফিরে এসেছে।
তিব্বত বিস্তীর্ণ১২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার মাটিতে হাজার হাজার জাতের বিরল প্রানী ও উদ্ভিদ আছে। এ সব প্রানী ও উদ্ভিদ সম্পদ সুরক্ষা করার জন্য স্থানীয় সরকার বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্থাপন করেছে এবং বাইরে তদন্ত চালাবার জন্য নিয়মিতভাবে বিজ্ঞানীদের পাঠায়, যাতে বিস্তারিত রক্ষার ব্যবস্থা প্রনয়ন করা যায়। তিব্বতের প্রাকৃতিক পরিবেশ গবেষণাগারের অধ্যাপক ম্যাদম ছানচ্যুজুমা বলেছেন, পৃথিবীতে তিব্বত এমন একটি অঞ্চল, যেখানে প্রানী ও উদ্ভিদের প্রকার সংখ্যা সবচাইতে বেশি। দেশ ও সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রযত্নে তিব্বতে এখনো সকল জাতের প্রানী ও উদ্ভিদ সংরক্ষিত আছে। প্রানী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য কার্যকরভাবে রক্ষা পেয়েছে। কিছু কিছু অদৃশ্য বন্য প্রানী আবারও এ অঞ্চলে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেছেন, আগে তিব্বতে কৃক্ষ কণ্ঠী সারস ছিলো মাত্র ৫ শো। এখন এই সংখ্যা ৮ হাজার ২ শোতে দাঁড়িয়েছে।
তিব্বতের বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বৈচিত্র্যময় প্রানী ও উদ্ভিদ সম্পদ রক্ষা করার জন্য চীনের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল স্থাপন করেছে। ২০০২ সালের শেষ দিকে তিব্বতে ১৮টি প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সব অঞ্চলের আয়তন তিব্বতের মোট আয়তনের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি।
আজ তিব্বতে পাহাড় সুন্দর, নদ-নদী স্বচ্ছ, প্রানী ও উদ্ভিদের প্রকার সংখ্যা বৈচিত্র্যময়। এই অঞ্চলে বনাঞ্চল ও হ্রদ মোটেই দূষিত হয় নি। জনসংখ্যা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীভূত লাসা শহরে গাছ ও ঘাস লাগানোর মাথাপিছু গড়পড়তা আয়তন ১২ বর্গমিটারে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে লাসা এমন একটি শহর, যার পানি ও বায়ু সবচেয়ে বিশুদ্ধ।
ছ্যুচা নামে সাতষট্টি বছর বয়স্ক একজন লাসাবাসী নিজের জন্মস্থলের পরিবেশের পরিবর্তন প্রসংগে বলেছেন, "আমি ইটখাজে, সান্নান, চিয়াংজি, ছ্যুইসুই, নিমু প্রভৃতি বহু অঞ্চলে গিয়েছিলাম। তখন সড়কের দুই পাশের কৃষিক্ষেত্র কোনো গাছ ও তৃণভূমি দেখা যেত না। ভূমির মরুকরনের অবস্থা খুব গুরুতর ছিল। এখন আগের চেয়ে এ সব জায়গার জায়গার পরিবেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সড়কের দুই পাশ গাছপালায় ঘেরা। আগেকার বালুকাময় পতিত জমিতে বনায়ন হয়েছে এবং নদীর তীরে নানা জাতের পাখী স্বচ্ছন্দে উড়ে।
|