চীনের দক্ষিণাংশের কুয়াংসি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে প্রায় বিশ হাজার লোকের একটি সংখ্যালঘু জাতি অর্থাত্ চিন জাতি বসবাস করে। তারা প্রধানতঃ কুয়াংসিং'র পিয়েন ছেন জেলার অভ্যন্তরের ওয়ান উই, উথৌ ও সান্সিং এই তিনটি দ্বীপে থাকেন এবং আধা-কৃষক আধা-জেলের জীবনযাপন করেন। চিন জাতির লোকেরা নাচগান ও বাদ্যযন্ত্রে খুবই নিপুন। বিশেষ করে একতারা হচ্ছে চিন জাতির স্বতন্ত্র বাদ্যযন্ত্র।
একতারা হচ্ছে এক ধরণের তারবিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র। তার দৈঘ্য প্রায় এক মিটারের মতো। এটা বাঁশের চোঙা দিয়ে তৈরী। তার মাথার হাতল থেকে লেজ পর্যন্ত একটি ধাতুর তার বাধাঁনো। বাজানোর সময়ে বাম হাতে ছোট হাতল নিয়ন্ত্রণন করে ডান হাতর পাতলা বাঁশের ফালি দিয়ে একতারার তারে টান মারতে হয়। এর থেকে সৃষ্টি সুব ঠিক যেন মানুষের নীচুস্বরে গান গাওয়ার মতো।
চিন জাতির ঐতিহ্যিক উত্সব কিংবা গুরুত্বপূর্ণ উদযাপনী তত্পরতার সময়ে চিন জাতির লোকেরা একতারা বাজানো সংগে সংগে গান গাইতে পছন্দ করেন। যুবক যুবতীরা প্রেম করার সময়েও একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গেয়ে ভালবাসা ব্যক্ত করেন।
২৯ বছর বয়স্কা সু হাই চেন একতারার সুবের মধ্য দিয়েই বড় হয়েছেন। এগারো-বারো বছর বয়সের সময়ে তিনি মনকর্ডের তারে প্রথমবারের মতো সুর তোলেন। তিনি বলেছেন, "আমি ছোটবেলা থেকেই আমার বাড়ীর লোকেদের আর আমার জন্মভূমির লোকেদের বাজানো একতারা সুর শুনে এসেছি। এগারো বারো বছর বয়সের সময়ে আমার মা আমাকে একতারা বাজানো শেখাতে শুরু করেন। বলা যায় আমার মা'ই আমার প্রথম শিক্ষক"।
সু হাই চেন বলেছেন, একতারা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের মতো নয়। কারণ তার শুধু একটি তার থাকে। তার সুর সহজেই একঘেঁয়ে হয়ে যেতে পারে। তাই সঠিকভাবে একতারা বাজানো বেশ ব্যাপার।
সু হাই চেন বলেছেনম ঠিক এই কারণেই তাদের চিন জাতির লোকেদের মধ্যে ভাল একতারা বাদকের সংখ্যা কম। অথচ তার মা তাদের মধ্যে একজন। তার মা ছোটবেলা থেকেই সু হাই চেনের পিতামাতা কাছে একতারা বাজানো শিখেছেন এবং অনেক ঐতিহ্যিক সুর বাজাতে পেরেছেন। পরে সু হাই চেনের মা আবার নিজের একতারা বাজানোর কৌশল নিজের মেয়ে সু হাই চেনকে শিখিয়েছেন।
১৯৮৭ সালে চৌদ্দ বছর বয়স্কা সু হাই চেনের একতারা বাজানোর কৌশল উন্নত করার একটি আকস্মিক সুযোগ ঘটে। সু হাই চেন বলেছেন, "১৯৮৭ সালে আমি কুয়াংসির ছিন্চো অঞ্চলের নৃত্যনাট্য দলে ভর্তি হই। দলটি চেয়েছে এমন একজন লোক যিনি একতারা বাজাতে পারেন। তারপর দলটি আমাকে কুয়াংসি শিল্পকলা বিদ্যালয়ে পাঠায়। তখন ওয়াং নং নামে একজন শিক্ষক একতারা বেশ ভাল বাজাতে পারেন। ছিন্চো নৃত্যনাট্য দল তাকেই আমার বিশেষ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করে। তার কাছেই আমি তিন বছব একতারা বাজানো শিখেছি।
এরপর সু হাই চেনের একতারা বাজানোর কৌশল দিন দিন পরিপূর্ণতা লাভ করে। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি চিন জাতির প্রতিনিধি হিসেবে চীনের তৃতীয় শিল্পকলা উত্সবে অংশ নিয়েছেন। তার একতারায় বাজানো সংগীত লোকের কাছে চিন জাতির খাঁটি সংগীত তুলে ধরেছে। এরপর সু হাই চেন ও তার একতারা পেইচিং, সাংহাই, হংকং ও তাইওয়ানসহ চীনের অনেক জায়গায় গিয়েছে। তিনি পেইচিংয়ে আয়োজিত চীনের সংখ্যালঘু জাতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং দর্শকদের সাদর অভ্যর্থনা পেয়েছেন। চিন জাতির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি লোকেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং চীনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট চিয়াং জে মিনের সাক্ষাত্ পেয়েছেন।
সু হাই চেন বলেছেন, চিন জাতির স্বতন্ত্র বাদ্যযন্ত্র একতারা বংশধর হিসেবে তিনি বেশী উত্তরাধিকারী গড়ে তোলার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবেন, যাতে এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাদ্যযন্ত্র বংশপরম্পরায় চলতে থাকে এবং নতুনত্ব লাভ করতে পারে।
|