v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-10-18 13:21:13    
রন্ধনগৃহ দেবতা পুজা

cri

    চীনের আদিম অধিবাসীরা বিশ্বাস করতেন , চান্দ্রবর্ষের দ্বাদশ মাসের ২৩ তারিখ রন্ধনগৃহ দেবতা স্বর্গে যান , চিরাচরিত রেওয়াজ অনুযায়ী এই দিন তাঁর জন্যে বিশেষ বিদায় সম্বর্ধনার আয়োজন করতে হয় । অতীতে চীনের প্রায় প্রতিটি পরিবারের রান্নাঘরে রন্ধনগৃহ দেবতার পীঠ ছিল । দেওয়ালে লাগানো তার প্রতিকৃতির উপরে লেখা হতোঃ স্বর্গে গিয়ে সুকর্মের কথা বলুন , মর্ত্যে ফিরে নিরাপত্তা রক্ষা করুন । কথিত আছে , রন্ধনগৃহ দেবতা প্রভুর নিযুক্ত অগ্নি-দেব । মর্ত্যের যাবতীয় পরিবারের রান্নাঘরের চুল্লী দেখাশোনা করা তাঁর দায়িত্ব । তাই বাড়ির রক্ষক হিসেবে তাকে পুজা করা হয় । পুর্ববর্তী বছরের শেষ দিন থেকে রন্ধনগৃহ দেবতা সারা বছর পরিবারের সবাইকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন এবং তাদের আচরণেরউপরে নজর রাখেন । চান্দ্রবর্ষের দ্বাদশ মাসের ২৩ তারিখ তিনি স্বর্গে উঠে , প্রভুর কাছে যাবতীয় পরিবারের সকলের সুকর্ম আর কুকর্মের রিপোর্ট পেশ করেন । তার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রভু নতুন বছরে প্রতিটি পরিবারের প্রাপ্য সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য স্থীর করেন । তাই তার রিপোর্ট সকল পরিবারের স্বার্থের সংগে ঘরিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত । সুতরাং চান্দ্রবর্ষের এই দিনে বিপুল সমারোহ তাকে বিদায় সম্বর্ধনা জানানো হয় । তাকে খাওয়াতে হয় তাংগুয়া নামে এক ধরনের মিষ্টি । এই মিষ্টি খুবই আঠালো , খেলে রন্ধনগৃহ দেবতার দুটো ঠোঁট যুক্ত হয় । প্রভুর সামনে তিনি গৃহকর্তা সম্পর্কে ভারাপ কথা আর বলতে পারবেন না । সেই দিন তার ছবি চুল্লীর আগুনে পুড়ানো হয় , চিমনির মধ্য দিয়ে ধোয়াযোগে তিনি স্বর্গে যান । বছরের শেষদিন , রান্নাঘরে তার নতুন প্রতিকৃতি টাংগিয়ে তাকে স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।
    চীনের ঐতিহাসিক গ্রন্থ অনুযায়ী খৃষ্টপুর্ব বাইশ শতাব্দি থেকে চীনে রন্ধনগৃহ দেবতার পুজা শুরু  হয় । অর্থাত্ রন্ধনগৃহ দেবতা চীনের অন্যতম প্রাচীনতম দেবতা । রন্ধনগৃহ দেবতার জন্ম সম্পর্কে চীনে অনেক উপকথা মুখেমুখে প্রচলিত । এখন শুনুন এগুলোর অন্যতম উপকথা।
    অনেক অনেক দিন আগে দুই ভাই ছিলো , বড়ভাই জাংতান ছিল রাজমিস্ত্রী , ছোটো ভাই ছিল চিত্রশিল্পী । জাংতান রান্নাঘরের চুল্লী বানাতে পারদর্শী । যাদের জন্য তিনি মাটির চুল্লী বানাতেন , তাদের পরিবারের বিবাদ মেটানোর চেষ্টাও করতেন । এই জন্য গ্রামবাসীরা তাকে শ্রদ্ধা করতেন । সত্তর বছর বয়সে চান্দ্রবর্ষের দ্বাদশ মাসের ২৩ তারিখ জাংতান মৃত্যু বরণ করেন । তাঁর ছেলেরা তাঁর সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে সারাদিন ঝগড়া করে , তা দেখে তাঁর ছোটো ভাই চিত্রশিল্পী উত্কন্ঠায় অস্থির হয়ে পড়লেন । তিনি ভাবতে লাগলেন , কিভাবে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায় । অবশেষে তিনি একটা উপায় বের করলেন। জাংতানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীর দিন গভীর রাতে চিত্রশিল্পী হঠাত্ চিত্কার করে উঠলেনঃ বড় ভাই আমাকে দেখতে এসেছেন , তারপর তিনি পরিবারের সবাইকে রান্নাঘরে নিয়ে গেলেন , তারা অবাক হয়ে দেখতে পেলো , বাতির কম্পমান আলোয় কালো দেওয়ালের উপরে জাংতানের ঝাপসা মুখ ভেসে উঠলো , আবার ছায়ার মত মিলিয়ে গেল । চিত্রশিল্পী বললেন , আমি স্বপ্নে দেখেছি , প্রভু বড় ভাইকে অগ্নি-দেব নিযুক্ত করেছেন , তোমরা তাঁর সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া করছো শুনে , ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং এই খবর প্রভুকে জানিয়ে নববর্ষ আগমনের আগে তোমাদের শাস্তি দেবেন ।তার ছেলেরা আর পুত্রবধুরা ভযে হাঁটু গেড়ে জাংতানের প্রিয় খাবার --মিষ্টান্ন চুল্লীর উপরে রেখে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো । এরপর কেউ আর সম্পত্তির ভাগাভাগির দাবি তুললো না । পরিবারের সবাই শান্তিতে দিন কাটাতে লাগলো । এই খবর পল্লীগ্রামে প্রচারিত হলো অল্প সময়ের মধ্যে । আসল ব্যাপারটা কী কেউ কেউ তার খোঁজ নিতে চিত্রশিল্পীর বাড়ীতে গেলো । আসলে কালো দেওয়ালের উপরে জাংতানের যে ঝাপসা মুখ ভেসে উঠলো তা চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবি । পারিবারিক শান্তির আশায় অনেকেই জাংতানের ছবি চাইলো । চিত্রশিল্পী তাদের প্রত্যেককে একটি করে জাংতানের ছবি উপহার দিলেন । এরপর প্রতি দ্বাদশ চান্দ্র মাসের ২৩ তারিখে গ্রামবাসীরা রান্নঘরে জাংতানের ছবি এঁটে প্রসাদ সাজিয়ে পরিবারের সুখ শান্তি কামনা করে ।
    কালক্রমে চীনে চান্দ্রবর্ষের দ্বাদশ মাসের ২৩ তারিখে রন্ধনগৃহ দেবতা পুজার প্রচলন হয়েছে । খৃষ্টপুর্ব এগারো শতাব্দিতে চীনের চৌ রাজবংশীর আমলে রাজপ্রাসাদেও রন্ধনগৃহ দেবতাকে পুজা করা হতো এবং ধীরে ধীরে তা জাতীয় পুজায় রুপান্তরিত হয় ।