v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-10-28 16:33:54    
চীনের জাতিকিত্বিক পার্ক

cri
    চীন একটি বহু জাতিক দেশ।সংখ্যাগিষ্টঠ হান জাতি ছাড়াও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির চীনের উত্তর,পূর্ব দক্ষিণ আর পশ্চিম প্রান্তে ব্যাপকভাবে বসবাস করেন।তবে তাদের রীতিনীতি জানার জন্যে এতো দুরে যাওয়ার দরকার নেই ।পেইচিংয়ে রয়েছে চীনের জাতিকিত্বিক পার্ক।তা দেখেই সংখ্যালঘুদের অবস্থা,আর রীতিনীতি মোটামুটি জানা যাবে।এখনে একবার ঘুরে আসি।

    চীনের জাতিতাত্বিক পার্ক পেইচিংয়ের উত্তরাংশে অবস্থিত বলেছেন:চীনের জাতিতাত্বিক পার্ক ১৯৯৪ নালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে খোলঅ হয়।এর আয়তন ৫০ হেক্টর।পার্কটি দক্ষিণ আর উত্তর দুই অংশে বিভক্ত।উত্তরাংশে রয়েছে ১৫টি গ্রাম,আর দক্ষিণাংশে রয়েছে ২৫টি গ্রাম।মোট ৪০টি সংখ্যালঘু জাতির লোক এখানে থাকেন।প্রত্যেক জাতির স্থাপত্যমৈলা অনুসারে বা বিশেষ প্রাকৃতিক দৃশ্য অনুসারে এক একটি জাতির গ্রাম তৈরী হয়েছে।তাঁর কথা অনুযায়ী এখানকার বাড়িঘরের সাইজসত্যিকারের ঘরের সমান। ইয়ুকু জাতির সুন্দর মেয়ে এআংনর্কি সংবাদদাতাকে নিয়ে ঘুরেঘুরে সবকিছু দেখাতে লাগলেন।তিনি জানিয়েছেন,টুরিস্ট গাইডের এই কাজ তিনি খুব পছন্দ করেন,এই পার্কে বিভিন্ন জাতির লোকদের সংগে আদানপ্রদান করতে পারেন,নিজের নিজের জ্তির পরিচয় সম্পর্কে সবাইকে জানানো যায়,এবং অন্যদের সংস্কৃতি শিখতে পারা যায়।

    এআংনর্কি পার্কটিতে চীনের তিব্বতঅঞ্চলের দাচাও মন্দিরের অবিকল প্রতিরুপ একটি মন্দির দেখালেন।আসল মন্দিরটি সপ্তম শতাব্দীতে লঅসা শহরের কেন্দ্রস্থলে নির্মিত হয়।মন্দিরটিতে যে বুদ্ধদেবমূর্তী রয়েছে তা এক হাজার তিন শো বফরেরও বেশী সময় আগেকার থাং রাজবংশের রাজকুমারী ওয়েনছেং তিব্বতী রাজার সংগে বিয়ে হবার সময়ে সেখানে নিয়ে গেছেন।তাই এই মন্দির বরাবরই চীনের হান জ্তি আর তিব্বতী জাতির জনগণের মৈত্রী শ্রেষ্ঠ সাক্ষ্য বহন করে আসছে।

    পার্কটির ভেতরকার দাচাও মন্দির সত্যিকারের মন্তিরটির মতোই মহিমা মন্তিত ও ঐশ্বর্যময়।চার তলাবিশিষ্ট মন্দিরটি হান ও তিব্বতী উভয় জাতির স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত,মন্দিরাটির সোনালী গম্বুজ ঝকঝক করছে।

    মন্দিরটি দেখার পর সংবাদদাতা মঙ্গোলীয় জাতিরতাঁবুর দিকে গেলেন।

    ঘোড়ার মাথার আকৃতি -বিশিষ্ট মঙ্গোলীয় জাতির দোতারার সূর আপরারা শুনতে পাচ্ছেন।এই মূরে কখনও যেন রুদ্ধশ্বাসে ঘোড়া ছুটে যাওয়ার সময়ে ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা যায়।মনে হয় সত্যিই আমরা ঘোড়সওয়অর হয়ে অসীম তৃণভূমিতে ছুটে যাচ্ছি।চীনের উত্তরাংশে অন্তর্মঙ্গোলীয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলেই প্রধানত মঙ্গোলীয়দের বসবাস।তারা ঘোড়-সওয়ারী জাতি বলেও সুপরিচিত।তাঁবুর ভেতরে মঙ্গোলীয় জাতির যুবক ইউয়ানহাও আনন্দের সংগেই সংবাদদাতাকে এক কাপ দুধচা খাওয়ালেন। ইউয়ানহাও জানালেন যে,তাঁবুটির বাবিরের আবরণ এক-রকম পশমী কাপড় দিয়ে তৈরী বলে তাঁবুর ভেতরে শীতকালে বেশ উমুত্ত আর গ্রীষ্মকালে স্নিগ্ধ ঠান্ডা ।নুভূতি হয়।ইউয়ানহাও বলেছেন:মঙ্গোলীয় তাঁবু সহজেই খুলে গুটিয়ে রাখাযায়।কারণ মঙ্গেলীয় জাতি একটি যাযাবর জাতি,প্রচুর নতুন ঘাস পাউয়ার জন্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়ে থাকে।তাই স্থনান্তরিত হবার জন্যে অস্থায়ী বাসা হিসেবে এই তাঁবু মাঝে মাঝে খুলে গুটিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে রাখতে হয়।তাঁবুটির উপর একটি ছোট জানালা দিনের বেলায় খেলা হয় যাতে তার ভেতর দিয়ে রোদ আসতে পারে,রাতে ঘুমানোর সময়ে তা বন্ধ করা যায়।

    দোংবা ধর্ম-অবলম্বী একটি প্রাচীন জাতির নাম নাসি।নাসীরা দক্ষিণপশ্চিম চীনে থাকেন,তাদের ভাষার স্বতন্ত্র ধরনের চিত্রাক্ষরের লিপির নাম দোংবা লিপি এই লিপির ইতিহিস দু হাজার বছরেরও বেশী দীর্ঘ।পার্কের ভেতরকার নাসী গ্রামে রাস্তায় বা গলিগুলোতে সর্বত্র এই রহস্যময় লিপি দেখা যায়।নাসীর তরুণ ইয়াং ছেং সংবাদদাতাকে বলেছেন:আমরা নাসীরা এখনও এই সব চিত্রাক্ষর ব্যবহার করি।এই লিপিতে জটিল অক্ষর আছে,আবার সরল অক্ষরও আছে।আমাদের পুর্বপুরুষরা পাথর দেখলেই পাথরের ছবি আঁকতে গাছ দেখলে গাছের ছবি আঁকতেন,আস্তে আস্তে সেগুলো চিত্রাক্ষরে রুপ নেয়।এটাই নাসি জাতির দোংবা লিপি।

    মোসোউপজাতি হলো নাসী জাতির একটি শাখা।মাতৃপ্রধান সমাজপ্রথা এখনও তাদের মধ্যে প্রচলিত।পরিবারের কর্তা হলেন মহিলা।এআংনর্কি মোসোদেরএকটি দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বলেছেন:মোসো-মেয়েরা বড় হবার পর সবাই দোতলার নারী-ঘরে থাকেন।মোসো সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী রাতের বেলায় পুরুষরা তিনটি জিনিস নিয়ে তাদের ঘরে ঢুকতে পারেন।এই তিনটি হলো পাথর,পিঠা,আ টুপি।পাথরটি দরজায় আঘাত করার জন্যে,পিঠাটি কুকুরকে খাইয়ে তাকে চুপ করানোর জন্যে,আর টুপিটি দরজায় টাঙিয়ে রাখার জ্যে,যা অন্য কোনো পুরুষকে আসতে মানা করার একটি বিশেষ সংকেত।আজকালকার যুগে অন্যদের চোখে এই প্রথা রিয়ে বিতর্ক হতে পারে তবে প্রথা সংখ্যালঘু মোসোদের চোখে খুবই স্বাভাবিক।সদিচ্ছা থাকলে নারী পুরুষ রাতে একঘরে থাকতে পারেন। তাতে বিবাহের কোনো বিধিনিষেধ নেই।এই উপজাতির আনুষ্ঠানিক কোনো বিবাহপ্রথা ডুবু-ডুবু হলে চীনের এই জাতিতাত্ত্বিক পার্কের মহাচত্বরে নাগানের বিচিত্রানুষ্ঠান শুরু হয়।সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংগিতের তালে তালে তাদের শিল্পীরা রংবেরংয়ের স্বকীয় পোষাক পরে পর্যটকদের সংগে হাতে হাতে ধরে নাচতে শুরু করেন।

    রাশিয়ান বৃদ্ধা নাতালিয়া বলেছেন,এই পার্কে আমি ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু দেখেছে,তাদের নাচ,তাদের জীবনযাত্রা,তাদের থাকার ঘর সব কিছুই দেখেছি।এতো সুন্দর জায়গা কি করে তেরী করা হলো,তা ভাবতেই অবাক লাগে!