ফাং হোং চীনের রুপালী পর্দার জগতে একটি অতি জনপ্রিয় নাম । গত বিশ-বাইশ বছরে অনেক ছায়া-ছবিতে মিস ফাং হোং যে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র তৈরী করেছেন , তা দর্শকদের মনে গভির ছাপ ফেলেছে ।
গত শতাব্দীর সওরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফাং হোং চীনের সাংহাই অপেরা ইংস্টিটিউটের অভিনয় বিভাগে পড়াশুনা শেষ করে সাংহাই ফিল্ম স্টুডিওতে কাজ করতে শুরু করেন । ফাং হোং চীনের তখনকার কয়েকজন সবচেয়ে সুন্দরী অভিনেত্রীর মধ্যে একজন , তিনি শিন্তশিষ্ট , তাঁর ডাগর দুটি চোখে যেন হাজার কথার ঝিলিমিলি । তার মুখের হালকা বিষন্নভাব আর প্রচাবিমুখ স্বভাব চীনের অন্যান্য অভিনেত্রীদের থেকে তাকে কিছুটা অলাদা করে রেখেছে । গত বিশ-বাইশ বছরে ফাং হোং চীনের অনেক ছায়াছবিতে বেশ কয়েকটি চিত্তাকর্ষক চরিত্র তৈরী করেছেন । যেমন গণিকা তু সিনিয়ান , ডাক্তার লু উন থিন , চীনের শেষ রিনী উয়ান রোন ও নারী বুদ্ধিজীবী সুই লি সা ইত্যাদি । এই সব চরিত্র মগ্ধ দর্শকদের মন জয় করেছে ।কাজেই চীনের অনেক মধ্যবয়সী দর্শক ফাং হোংয়ের ছবির অনুরাগী । মধ্যবয়সী ডাক্তার নামক ছায়াছবিটি গত শতাব্দীর আশির দশকে তৈরী করা হয় । ছবিটিতে ফাং হোং একজন চোখের ডাক্তারের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন । তখন ফাং হোংয়ের মাত্র ২৬ বছর । এই করুণ বিয়োগান্ত ছবিতে স্বামীর সংগে চোখের ডাক্তারের প্রেম , বিয়ে জীবনের নানা কষ্ট আর স্বামীর মৃত্যু চিত্রিত হয়েছে । ফাং হোং তার চমত্কার অভিনয় , বিশেষ করে তার বিষন্ন চোখ দুটো দিয়ে চোখের ডাক্তার লু উন থিনের গভীর আন্তরিকতা , দৃঢ়তা আর বিষন্ন ভাব পুরোপুরিভাবে প্রতিফলিত করেছেন । এই ছবি চীনের হাজার হাজার দর্শকের মন জয় কেরছিল । এই ছবি তৈরীর সময়ের কথা স্মনণ করে ফাং হোং বলেছেন , মধ্যবয়সী ডাক্তার নামক ছবিতে আমি যে চরিত্র সৃষ্টি করেছি , তা সার্থক হয়েছে । গত বিশ-বাইশ বছরে আমি যেসব চরিত্র সৃষ্টি করেছি, সেগুলোর মাঝে ডাক্তার লু উন থিন আমার সবচেয়ে প্রিয় । আমরা উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রাদেশিক মেডিকেল কলজে এই ছবি তুলেছি , ছবিতে আমি একজন মার প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেছি , চরিত্রের মনের আকুলি-বিকুলি আমি মন দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেছি । এই ছবি দর্শকদের সমাদর ও বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পেয়েছে । ছবিটি চীনের ছায়াছবির সর্বোচ্চ স্বীকৃতি-স্বর্ণ মোনগ পুসস্কার পেয়েছে , ফাং হোং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ।ফাং হোংএর মুখের হালকা বিষন্ন ভাবের মূলে রয়েছে তার ছোট বেলার অভিজ্ঞতা । তার জন্ম সাংহাই শহরে , যখন তার বয়স দশ-বারো বছর , তখন চীনে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলচ্ছিল , তার বাবা রাজনৈতিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন । পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে ফাং হোং ছোটবেলা থেকে জীবনের কষ্ট ভোগ করতে শুরু করেন । ছোট বেলাকার এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার প্রভাবে ফাং হোং আরো সহানুভুতিশীল হয়েছেন । এই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ছায়াছবির চরিত্রগুলোর মনের ভবনা উপলব্ধি করতে তাকে সাহায্য করে ।ফাং হোং ছায়াছবিতে অনেক চিত্তকর্ষক চরিত্র , বিশেষ করে কিছু বিয়োগান্তক চরিত্র তৈরী করেছেন , চীনে ফাং হোং বিয়োগান্তক নাটকের রানী হিসেবে পরিচিত । বিয়োগান্তক নাটক সম্বন্ধে ফাং হোং বলেছেন , আমার ধারনা , জীবনে প্রায়ই বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে , তবে লোকেরা ইচ্ছা করে এই শব্দ এড়ানোর চেষ্টা করেন । অনেকে বিয়োগান্তক নাটক দেখতে পছন্দ করেন , কিন্তু দেখার পর নাটকের চরিত্র সবসময় চোখের সামনে ভেসে ওঠে বলে রাতে ঘুমও হয় না । কাজেই অনেকে বিয়োগান্তক নাটক দেখার সাহস পায় না ।
ফাং হোং একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী , তিনি তার মার্জিত ব্যবহার ও গুনাবলী দেখিয়ে সবার শ্রদ্ধা জয় করেছেন । তার বয়স যখন ৩২ বছর , তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন , সেই বছর তাকে বিশ্বের প্রথম দশজন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর নামের তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । কিন্তু সেই বছর তার বিয়ে-বিচ্ছেদ হলো । বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন , আমি কাজের উপর বেশী সময় ও মন দিতে গিয়ে জীবনের অনত্যম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়--পরিবারকে আমি যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছি । আমি একজন ভালো অভিনেত্রী , কিন্তু ভালো স্ত্রী নই । তু সি নিয়ান নামক ছায়াছবি তৈরীর সময় ফাং হোং দেড় বছর বাড়ি ফিরেন নি , তখন যদিও নতুন বিয়ে, কিন্তু তার তখনকার ধারনা , ভালো অভিনেত্রী হওয়া তার পক্ষে বেশি গুরুত্বপুর্ণ । সময় খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায় । গত পনের- সতেরো বছরে চীনের অর্থনীতা , জনগণের জীবনযাত্রার মান আর চিন্তা-ভাবনার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । এখন ফাং হোং ভালো স্ত্রী হতে পারে নি বলে পরিতাপ করেন । আবার বিয়ে করা আর মা হতে চান কিনা জানতে চাইলে ফাং হোং দুঃখের সংগে বলেন , অবশ্যই আমি চাই , আমি মা হতে চাই । কিন্তু আমার এ বয়সে আর সুযোগ পাবো না । এখন আমি পৃথিবীর সব দেশের স্ত্রী ও মার মুখশান্তি কামনা করি , আসলে পরিবার প্রত্যেকের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
|