v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-09-15 19:46:55    
ইউয়ান রাজবংশের নাট্যকার কুয়ান হান ছিন

cri

  চীনের অপেরা হচ্ছে চীনের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির একটি অংশ । জাতীয় অপেরা পেইচিং অপেরা ছাড়া চীনে আরো শ'খানেক ধরণের আঞ্চলিক অপেরা আছে । যদিও বিভিন্ন অপেরার মধ্যে গীত , চরিত্র চিত্রন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য আছে , তবুও অনেক সময় দেখা যায় , মন্চস্থ বিভিন্ন অপেরার বিষয় একই বা প্রায় একই । অনেক অপেরার বিষয় এয়োদশ শতাব্দীতে চীনের ইউয়ান রাজবংশের আসল থেকে নেয়া হয়েছে ।

  ইউয়ান রাজবংশ হচ্ছে চীনের ইতিহাসে উত্তরাঞ্চলের যাযাবর জাতি-প্রতিষ্ঠিত প্রথম একীভূত রাজরৈতিক প্রশাসন । এই সময়পর্বে বিভিন্ন জাতি একত্রিত হওয়ার ফলে আগেকার হান জাতির গোঁড়া সামন্ততান্ত্রিক নীতিশাস্ত্রের শক্তি আপেক্ষিকভাবে শিথিল হয় । সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে বাস্তব অবদান হলো লোক-সাহিত্যের উত্থান । সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক হয় অপেরার উত্থান ।

  ইউয়ান রাজবংশের আমলের অপেরা চীনের সাহিত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে । এই সময়পর্বে আবির্ভূত অনেক মহা নাট্যকার উত্তরসূরীদের জন্য অমর রচনা রেখে গেছেন । তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতমো ছিলেন কুয়ান হান ছিন ।

  চীনে প্রাচীনকালে নাট্যকার ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সামাজিক আবস্থান খুবই নিচু ছিল । তাই কুয়ান হান ছিনের জীবনী সম্পর্কে ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী থেকে শুধু অল্প কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে ।

  কুয়ান হান ছিনের নাটক লেখার হাত ছিলো অত্যন্ত সাবলীল । তিনি জীবনে মোট ৬০টিরও বেশী অপেরা লিখেছিলেন । আঠারোটি অপেরা এখনো মন্চস্থ হচ্ছে । এগুলোর মধ্যে যেমন আছে মর্মস্পর্শী বিয়োগান্তক অপেরা , তেমনি আছে হাস্য-রসাত্মক অপেরা , যেমন আছে বিবাহ সমস্যার প্রতিফলনকারী প্রেমের অপেরা , তেমনি আছে সমাজের আন্ধকার উদ্ঘাটনের মামলা সংক্রান্ত অপেরা ।

  কুয়ান হান ছিনের প্রতিনিধিত্বমূলক রচনা হচ্ছে বিয়োগান্তক অপেরা "তুওর প্রতি অবিচার" । এটি চীনের ব্রুপদী অপেরা জগতে শ্রেষ্ঠতমো বিয়োগান্তক অপেরাও বটে ।

  " তুওর প্রতি অবিচার" অপেরাটির বিষয় একটি প্রাচীন কিংবদন্তী থেকে নেয়া হয়েছে । এই কাহিনীতে বলা হয়েছে , শাশুড়ীর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল একজন অল্প বয়েসী বিধবা শাশুড়ীকে দেখাশোনা করার জন্যে আর বিয়ে করে নি । কিন্তু তার এই সদ্গুরাবলী উল্টে কার বিরুদ্ধে মিথ্যা আপবাদ ডেকে আনে । কুয়ান হান ছিন এই কিংবদন্তীর সংগে তদানিন্তন সমাজের বাস্তবতা মিশিয়ে অসাধানণ শৈল্পিকেশিলে অন্ধকার সমাজে একজন অল্প বয়েসী বিধবাকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং হত্যার পর বিধরার আত্মা ভছূত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার একটি মর্মস্পশী কাহিনী বানিয়েছিলেন । লেখক কাহিনটির ঘটনাবলী বর্ণনার সময়ে তার অদ্ভূত কল্পনা প্রয়োগ করেছিলেন । যেমন ধরুন , আমলা কর্তৃক তুওকে হত্যা করার প্রাক্কালে তুও আকাশের কাছে এই প্রার্থনা করেছিলেন যে , যদি তার প্রতি অবিচার করা হয়ে থাকে, তাহলে অত্যন্ত উওপ্ত গ্রীষ্মকালেও যেন তত্ক্ষণাত্ প্রচন্ড তুষারপাত হয় । ফলে , তুওকে হত্যা করার পর গ্রীষ্মকালেও আকাশ থেকে সত্যিসত্যিই প্রচন্ড তুষারপাত হয়েছিল । এই অপেরাটি দেখলে লোকের চোখে পানি আসে এবং অন্ধকার সমজের প্রতি মনে ভীষণ ক্ষোভ জাগে । এইভাবে ন্যায়ের পক্ষ নিয়ে অপেরার কাহিনী লিখে নাট্যাকরি কুয়ান হান ছিন অত্যন্ত ভালো ফল পেয়েছিলেন ।

  কুয়ান হান ছিনের লেখা অন্যান্য অপেরাগুলোও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে । তার লেখা অপেরাগুলোর বিষয় ব্যাপক । আপেরার চরিত্রগুলো এসেছে বিভিন্ন শ্রেণী , সমাজের বিভিন্ন স্তর ও বিভিন্ন পরিচয়ের লোকদের মাঝ থেকে । অপেরার নায়কনায়িকাদের মধ্যে যেমন আছে উচ্চপদস্থ আমলা ও সাধারণ নিবীহ নাগরিক , তেমনি আছে গণিকা , স্থানীয় গুন্ডা প্রমুখ । চরিত্র হয় দয়ালু ও ন্যায়পরায়ণ , হয় জঘণ্য ও কুত্সিত্ সবই সুন্দরভাবেই চিত্রিত করা হয়েছে ।

  একজন নাট্যকার হিসেবে কুয়ান হান ছিন সমাজের নিচু স্তরের লোকদের জীবনযাত্রার সংগে পরিচিত ছিলেন । তিনি শুধু লিখতেন না , বরং সময় সময় মন্চে উঠে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগে অভিনয়ও করতেন । ফলে অপেরাগুলো তিনি যেভাবে লিখেছিলেন মন্চস্থ হওয়ার সময়ে ঠিক সেভাবেই অভিনীত হতে পেরেছিল ।

  কুয়ান হান ছিন ছিলেন ইউয়ান রাজবংশের আমলের অপেরার ভিত্তরচয়তা । চীনের গোটা প্রচীন সাহিত্যের হতিহাসে তার লেখা অপেরাগুলোর পরিমান ও গুনগত মানের তুলনা নেই । তার লেখা অপেরাগুলোতে প্রতিফলিত সাধারণ সামর্থ্য এবং বিভিন্ন প্রকারের অপেরা লেখার শৈল্পিক রৈপুণ্য পরের নাট্যকারদের শেখার আদর্শে পরিণত হয়েছে ।

  আঠারো শো একুশ সালে কুয়ান হান ছিনের প্রতিনিধিত্বমূলক রচনা "তুও'র প্রতি আবিচার" পাশ্চাত্যজগতে প্রথমবারের মতো অনুদিত হয়ে প্রকাশিত হয় । তারপর আঠারো শো একান্ন সালে ফ্রান্স তথা ইউরোপে তার আরো কতকগুলো রচনা অনুদিত হয়ে প্রকাশিত হয় । কুয়ান হান ছিনের প্রভাব ক্রমাগত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ।