চীনের সাহিত্য জগতের অলীক কাহিনী বলে পরিচিত পা-চিংয়ের জন্ম পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের এক সামন্ত আমলার পরিবারে । তার আসল নাম লি ইয়াও থান । ১৯২৭ সালে তার বয়স যখন চব্বিশ বছর তখন তিনি পড়াশুনার জন্য ফ্রান্সে যান । ফ্রান্সে পড়াশুনার দ্বিতীয় বছরে তিনি প্যারিসে "পতন" নামে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ করেন । পা চিং তার এই উপন্যাস লেখার সময়কার ছদ্মনাম । পতন উপন্যাস পা চিংয়ের সাহিত্য রচনার এক শুছ-সুচনা । যুব বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও তাদের চরিত্র বর্ণনা করা তার চল্লিশের দশকের সাহিত্য রচনার এক প্রধান বিষয়বস্তু । এর পরের বিশ বছের পা চিং অনেক গল্প ও উপণ্যাস রচনা করেছেন এবং বিদেশের অনেক সাহিত্য-রচনা চীনাভাষায় অনুবাদ করেছেন , এই সব সাহিত্যকর্ম তখনকার যুব সমাজের আন্তরিক সমাদর পেয়েছে । গত শতাব্দীর পঞ্চশের দশক থেকে পা চিংয়ের সাহিত্য রচনা গল্প ও উপন্যাস থেকে গদ্য রচনা করতে শুরু করেন । তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখে নয়া চীনের সাফল্য ও নতুন সমাজের প্রমংসা করেন । সওরের দশকে তথাকথিত মহা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে পা চিং অনেক মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়েছিলেন ।
১৯৭৮ সালে পা চিং তার সাহিত্য রচনা আবার শুরু করেন । চীনের আধুনিক সাহিত্য গবেষনার বিশেষজ্ঞ চৌ মিং মনে করেন , পা চিংকে চীনের গৌরব বলা যায় । তিনি বলেছেন , প্রবীন সাহিত্যিক পা চিং আমাদের দেশের ও জাতির গৌরব , তার রচনাগুলো চীনের কয়েক প্রজন্মের নাগরিকের চিন্তাধারা প্রভাবিত করেছে , আমরা তার রচনা পড়তে পড়তে বড় হয়েছি । তার রচনাগুলো আমরা পছন্দ করি , তার চরিত্রও প্রশংসনীয় , বড় লেখক হলেও তিনি খুব বিনয়ী , পাঠকদের সংগে তিনি মন খুলে আলাপ করেন । তার সংগে আলাপ করার পর প্রত্যেকবারই আমরা তার কথা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি । তার পাঠকের সংখ্যা বেশী বলে তার রচনার বিরাট প্রভাব রয়েছে । গত বছর পা চিংয়ের জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি । তার দীর্ঘায়ু চীনের পাঠকদের সৌভাগ্য ।
পা চিংয়ের রচনাবলীর মধ্যে পরিবার , বসন্ত ও শরত্নামক তিনটি উপন্যাস নিয়ে গঠিত "বহমান ত্রয়ী" পা চিংয়ের রচনাবলীর প্রতিনিধিত্বকারী উপন্যাস বলা যায় । এই বহমান এয়ী রচনা করতে তার দশ বছর সময় লেগেছে । এই তিনটে উপন্যাসে এক বড় সামন্ত পরিবারকে উপন্যাসের উপজীব্য হিসেবে গ্রহন করে সামন্ত পরিবারের অভ্যন্তরের জঘন্যতা , দ্বন্দ্ব ও অত্যাচার প্রতিফলিত হয়েছে । এই তিনটে উপন্যাসে সমাজের নতুন চিন্তাধারার প্রভাবে তখনকার যুব সমাজের জাগরণ আর সামন্তবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তাদের আপোষহীন সংগ্রাম বর্ণনা করা হয়েছে এবং সামন্ত পরিবার ও সামন্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কাদের বিপ্লবী সংগ্রামের ভুয়সী প্রশংসা করা হয়েছে । তার এই তিনটে উপন্যাস গত শতাব্দীর বিশের দশকে চীনের সামাজিক পরিবর্তনের এই মুল্যবান শিল্পগত রুপায়ন বলে গণ্য করা হয় । বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসেও এই তিনটে উপন্যাসের গুরুত্বপুর্ণ স্থান আছে ।
বয়স বেশী হলেও পা চিং তার সাহিত্য রচনা বন্ধ করেন নি ।১৯৭৮ সাল থেকে পা টিং নানা ধরনের প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন । তিনি তার প্রবন্ধগুলোতে সাহিত্য ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্বন্ধে নিজের মত প্রকাশ করেছেন এবং মাতৃভুমি ও জনগনের প্রতি তার সুগভিঈর ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন । তিনি তার প্রবন্ধে সব সময় মন খুলে পাঠকদের সংগে আদান প্রদান করেন , তার দায়িত্ববোধ ও মহ্ত্ ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি দেশবিদেশের পাঠকদের শ্রদ্ধা জয় করেছেন । বিখ্যাত লেখক ইউয়েন ইং বলেছেন , আমার বয়স যখন কম , তখন পা চিংয়ের উপন্যাস "পরিবার" আমি বার বার পড়েছি । এখন আমার বয়স বেশী হয়েছে , আমার সবচেয়ে প্রিয় বই হচ্ছে পা চিংয়ের লেখা প্রবন্ধ সংগ্রহ । এই দুইটি বই পা চিংয়ের গোটা জীবনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে । অল্পবয়সী যুবকযুবতীরা হয়তো এখন তার প্রবন্ধগুলোর অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারে না, তবে বয়স বাড়ার সংগে সংগে পৃথিবী , সমাজ ও চীনা জাতির প্রতি তাদের উপলব্ধি ক্রমেই গভীর হবে , তখন পা চিংয়ের প্রবন্ধ-সংগ্রহ তাদের সাহায্য করবে । তিনি আরো বলেছেন , পা চিংয়ের বয়স যখন আশির বেশী , একবার আমি তাকে দেখতে গিয়েছি , আমি দেখেছি অশীতিপর বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সাহিত্য রচনার কাজ বন্ধ করেন নি , এই দৃশ্য আমি কখনো ভুলতে পারি না । "গণ-সাহিত্য"নামক মাসিক পত্রকার সম্পাদক মন্ডলীর উপপ্রধান ছুই তাও ই বলেছেন , পা চিং চীনের একজন বড় লেখক , কিন্তু তিনি খুবই বিনয়ী , কোনো কোনো লেখক নিজের খ্যাতি বাড়ার সংগে সংগে অহংকারী হন , আমি পত্রিকার একজন সম্পাদক হিসেবে এ ক্ষেত্রে নিজের মানদন্ড আছে । সাধারণ পাঠক এমন কি ছোট পাঠকদেরও পা চিংয়ের আন্তরিকতার অভাব নেই । পা চিং বলেছিলেন , আমি একজন লেখক, যতদিন বেঁচে থাকবো , তত দিন পর্যন্ত আমি আমার কলম চিলিয়ে যাবো । কয়েক ডজন বছরে , পা চিংয়ের রচনাবলী ইংরেজী , রুশ জাপানী , ফরাশী , জার্মান , কোরিয় , সুইডিশ ও এসপেরান্টো প্রভৃতি বিশ-বাইশটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ।
|