v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-09-15 16:33:52    
চীনের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও লেখক পা-চিং

cri

    চীনের সাহিত্য জগতের অলীক কাহিনী বলে পরিচিত পা-চিংয়ের জন্ম পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের এক সামন্ত আমলার পরিবারে । তার আসল নাম লি ইয়াও থান । ১৯২৭ সালে তার বয়স যখন চব্বিশ বছর তখন তিনি পড়াশুনার জন্য ফ্রান্সে যান । ফ্রান্সে পড়াশুনার দ্বিতীয় বছরে তিনি প্যারিসে "পতন" নামে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ করেন । পা চিং তার এই উপন্যাস লেখার সময়কার ছদ্মনাম । পতন উপন্যাস পা চিংয়ের সাহিত্য রচনার এক শুছ-সুচনা । যুব বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও তাদের চরিত্র বর্ণনা করা তার চল্লিশের দশকের সাহিত্য রচনার এক প্রধান বিষয়বস্তু । এর পরের বিশ বছের পা চিং অনেক গল্প ও উপণ্যাস রচনা করেছেন এবং বিদেশের অনেক সাহিত্য-রচনা চীনাভাষায় অনুবাদ করেছেন , এই সব সাহিত্যকর্ম তখনকার যুব সমাজের আন্তরিক সমাদর পেয়েছে । গত শতাব্দীর পঞ্চশের দশক থেকে পা চিংয়ের সাহিত্য রচনা গল্প ও উপন্যাস থেকে গদ্য রচনা করতে শুরু করেন । তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখে নয়া চীনের সাফল্য ও নতুন সমাজের প্রমংসা করেন । সওরের দশকে তথাকথিত মহা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে পা চিং অনেক মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়েছিলেন ।    

    ১৯৭৮ সালে পা চিং তার সাহিত্য রচনা আবার শুরু করেন । চীনের আধুনিক সাহিত্য গবেষনার বিশেষজ্ঞ চৌ মিং মনে করেন , পা চিংকে চীনের গৌরব বলা যায় । তিনি বলেছেন , প্রবীন সাহিত্যিক পা চিং আমাদের দেশের ও জাতির গৌরব , তার রচনাগুলো চীনের কয়েক প্রজন্মের নাগরিকের চিন্তাধারা প্রভাবিত করেছে , আমরা তার রচনা পড়তে পড়তে বড় হয়েছি । তার রচনাগুলো আমরা পছন্দ করি , তার চরিত্রও প্রশংসনীয় , বড় লেখক হলেও তিনি খুব বিনয়ী , পাঠকদের সংগে তিনি মন খুলে আলাপ করেন । তার সংগে আলাপ করার পর প্রত্যেকবারই আমরা তার কথা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি । তার পাঠকের সংখ্যা বেশী বলে তার রচনার বিরাট প্রভাব রয়েছে । গত বছর পা চিংয়ের জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি । তার দীর্ঘায়ু চীনের পাঠকদের সৌভাগ্য ।

    পা চিংয়ের রচনাবলীর মধ্যে পরিবার , বসন্ত ও শরত্নামক তিনটি উপন্যাস নিয়ে গঠিত "বহমান ত্রয়ী" পা চিংয়ের রচনাবলীর প্রতিনিধিত্বকারী উপন্যাস বলা যায় । এই বহমান এয়ী রচনা করতে তার দশ বছর সময় লেগেছে । এই তিনটে উপন্যাসে এক বড় সামন্ত পরিবারকে উপন্যাসের উপজীব্য হিসেবে গ্রহন করে সামন্ত পরিবারের অভ্যন্তরের জঘন্যতা , দ্বন্দ্ব ও অত্যাচার প্রতিফলিত হয়েছে । এই তিনটে উপন্যাসে সমাজের নতুন চিন্তাধারার প্রভাবে তখনকার যুব সমাজের জাগরণ আর সামন্তবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তাদের আপোষহীন সংগ্রাম বর্ণনা করা হয়েছে এবং সামন্ত পরিবার ও সামন্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কাদের বিপ্লবী সংগ্রামের ভুয়সী প্রশংসা করা হয়েছে । তার এই তিনটে উপন্যাস গত শতাব্দীর বিশের দশকে চীনের সামাজিক পরিবর্তনের এই মুল্যবান শিল্পগত রুপায়ন বলে গণ্য করা হয় । বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসেও এই তিনটে উপন্যাসের গুরুত্বপুর্ণ স্থান আছে ।

    বয়স বেশী হলেও পা চিং তার সাহিত্য রচনা বন্ধ করেন নি ।১৯৭৮ সাল থেকে পা টিং নানা ধরনের প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন । তিনি তার প্রবন্ধগুলোতে সাহিত্য ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্বন্ধে নিজের মত প্রকাশ করেছেন এবং মাতৃভুমি ও জনগনের প্রতি তার সুগভিঈর ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন । তিনি তার প্রবন্ধে সব সময় মন খুলে পাঠকদের সংগে আদান প্রদান করেন , তার দায়িত্ববোধ ও মহ্ত্ ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি দেশবিদেশের পাঠকদের শ্রদ্ধা জয় করেছেন । বিখ্যাত লেখক ইউয়েন ইং বলেছেন , আমার বয়স যখন কম , তখন পা চিংয়ের উপন্যাস "পরিবার" আমি বার বার পড়েছি । এখন আমার বয়স বেশী হয়েছে , আমার সবচেয়ে প্রিয় বই হচ্ছে পা চিংয়ের লেখা প্রবন্ধ সংগ্রহ । এই দুইটি বই পা চিংয়ের গোটা জীবনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে । অল্পবয়সী যুবকযুবতীরা হয়তো এখন তার প্রবন্ধগুলোর অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারে না, তবে বয়স বাড়ার সংগে সংগে পৃথিবী , সমাজ ও চীনা জাতির প্রতি তাদের উপলব্ধি ক্রমেই গভীর হবে , তখন পা চিংয়ের প্রবন্ধ-সংগ্রহ তাদের সাহায্য করবে । তিনি আরো বলেছেন , পা চিংয়ের বয়স যখন আশির বেশী , একবার আমি তাকে দেখতে গিয়েছি , আমি দেখেছি অশীতিপর বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সাহিত্য রচনার কাজ বন্ধ করেন নি , এই দৃশ্য আমি কখনো ভুলতে পারি না । "গণ-সাহিত্য"নামক মাসিক পত্রকার সম্পাদক মন্ডলীর উপপ্রধান ছুই তাও ই বলেছেন , পা চিং চীনের একজন বড় লেখক , কিন্তু তিনি খুবই বিনয়ী , কোনো কোনো লেখক নিজের খ্যাতি বাড়ার সংগে সংগে অহংকারী হন , আমি পত্রিকার একজন সম্পাদক হিসেবে এ ক্ষেত্রে নিজের মানদন্ড আছে । সাধারণ পাঠক এমন কি ছোট পাঠকদেরও পা চিংয়ের আন্তরিকতার অভাব নেই । পা চিং বলেছিলেন , আমি একজন লেখক, যতদিন বেঁচে থাকবো , তত দিন পর্যন্ত আমি আমার কলম চিলিয়ে যাবো । কয়েক ডজন বছরে , পা চিংয়ের রচনাবলী ইংরেজী , রুশ জাপানী , ফরাশী , জার্মান , কোরিয় , সুইডিশ ও এসপেরান্টো প্রভৃতি বিশ-বাইশটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ।