প্রাসাদের স্থাপত্য


       প্রাসাদের স্থাপত্য অর্থাত্ রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য হচ্ছে নিজের শাসন সুসংবদ্ধ করা, নিজের ক্ষমতার মানমর্যাদা প্রদর্শন করা এবং মানসিক ও বৈষয়িক জীবনের ভোগবিলাস মিটিয়ে ফেলার জন্য সম্রাটের তৈরি করিয়ে নেওয়া বিশাল ও মহত্ স্থাপত্যর্কম। এইসব স্থাপত্যকর্মের অধিকাংশের শোভাবধর্নের প্রচুর সোনা ও জেটপাথর ব্যবহৃত হয়েছে।

       ছিন রাজবংশ থেকে প্রাসাদ সম্রাট ও তার পরিবারের বাসস্থানে বাজপ্রাসাদ পরিণত হয় সম্রাটের রাজকীয় শাসন পরিচালনার স্থান হিসেবে। চীনের রাজপ্রাসাদের স্থাপত্যের আর্দশ বৈশিষ্ট হচ্ছে: থাম ও কড়িকাঠের সংযোগস্থলের ভারবাহী বাঁকা ব্র্যাকেটগুলো ও ব্র্যাকেটগুলোর মধ্যকার কাঠের কুঁদার বিশালতা, সোনালী রঙের চকচকে টালি-ছাওয়া ছাদ, সুন্দর রঙিণ ছবি, সূক্ষ্মভাবে খোদিত কেসন্সিলিং,সাদা মাধেল পাথরের তৈরি ভিত্তি মঞ্চ, ব্রেস্ট বোর্ড, থাম ও কড়িকাঠ এবং আশেপাশের ছোটো ছোটো স্থাপত্যর্কম। পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদ যাদুঘরের থাইহো প্রাসাদ হচ্ছে আদর্শ রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য।  

       সবকিছুর উপর সম্রাটের ক্ষমতার স্থান এবং সম্রাটের ক্ষমতা-কেন্দ্রিক সামাজিক পদমর্যাদার ধারণা ফুটিয়ে তোলার জন্য চীনের প্রাচীন রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য কড়াকড়িভাবে কেন্দ্রীয় রেখার উপরের স্থাপত্যকর্মগুলো উচ্চ বিশাল ও সুন্দর । কেন্দ্রীয় রেখার দু’পাশের স্থাপত্যকর্মগুলো অপেক্ষাকৃত নিচু ছোটো ও সহজ সরল। প্রাচীন রাজপ্রাসাদ স্থাপত্যকর্মের ভেতরও দু’ভাগে বিভক্ত: সামনের ভাগ হলো সম্রাটের রাজকীয় শাসন পরিচালনা ও বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের স্থান আর পেছনের ভাগ হলো সম্রাট ও তাঁর পত্মী আর উপপত্মীদের বসবাসের স্থান।  

      চীনের রাজপ্রাসাদের স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্বকারী হচ্ছে পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদ। পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদের অপর নাম নিষিদ্দ নগরী। এটি ছিলো মিন রাজবংশ আর ছিং রাজবংশের সম্রাটদের রাজপ্রাসাদ। পরপর চব্বিশজন সম্রাট এখানে বাস করেছিলেন। সাত লক্ষ বিশ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে নির্মিত এই রাজপ্রাসাদে নয় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ী আছে। রাজপ্রাসাদের চারদিকে আছে কয়েক মিটার উঁচু লাল দেওয়াল। দেওয়ালের বাইরে নগর রক্ষাকারী নদী।চীনের রাজ প্রাসাদের আকার এত বিরাট, শৈলী এত বৈশিষ্ট্যময়, জৌলুস এত বিলাসী এবং স্থাপত্য এত সুমহান যে তা বিশ্বের প্রাসাদ স্থাপত্যের খুবই কম দেখা যায়।

       এই রাজপ্রাসাদ দু’ভাগে বিভক্ত। সামনের ভাগ হলো সম্রাটের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন ও আদেশনামা জারীর জায়লা। এই ভাগের প্রধান প্রধান স্থাপত্যকর্ম হলো থাইহো প্রাসাদ, জোংহো প্রসাদ ও বাওহো প্রাসাদ। সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি আট মিটার উঁচু ভিত্তি মঞ্চের উপর নির্মিত এইসব স্থাপত্যকর্ম প্রগাঢ় জীবনের গন্ধে ভরপুর। স্বতন্ত্র প্রাঙ্গনের বেশিরভাগ স্থাপত্যকর্মেই বাগান, পড়ার ঘর, প্যাভিলিয়ন,কৃত্রিম পাহাড়, পাথর ইত্যাদি রয়েছে।

       রাজবংশের পরিবর্তন ও যুদ্ধ-বিগ্রহের দরুন এপর্যন্ত সংরক্ষিত চীনের প্রাচীন রাজপ্রাসাদ স্থাপত্যকর্মের সংখ্যা বেশি নয়। এপর্যন্ত সংরক্ষিত চীনের প্রাচীন রাজপ্রাসাদ স্থাপত্যকর্মগুলোর মধ্যে পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদ ছাড়া আরো আছে সেন ইয়াংয়ের রাজপ্রাসাদ এবং সিয়ানের হান আর থাং রাজবংশের কয়েকটি রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ।