চীনে প্রধান প্রধান বহুজাতিক কোম্পান 


       ভোক্সওয়াগন 

  জার্মানির ভোক্সওয়াগন কোম্পানির চীনস্থ ভোক্সওয়াগন পুঁজিবিনিয়োগ লিমিটেড কোম্পানি সাম্প্রতিক প্রায় ২০ বছরে চীনের সাংহাই ও ছাংছুন শহরে দুটো যৌথ পুঁজিবিনিয়োজিত গাড়ি কারখানা ও কিছু খুচরো যন্ত্রাংশ তৈরী কারখানা স্থাপন করেছে, এবং চীনে এক শোরও বেশী খুচরো যন্ত্রাংশ সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপন করেছে । 

  মোট ১৮৯০ কোটি ইউয়ান পুঁজিবিনিয়োজিত সাংহাই ভোক্সওয়াগন গাড়ি কারখানা বর্তমানে সাণ্টানা, সাণ্টানা ২০০০, পাসাট, পোলো এবং গৌর --এই পাঁচ টি সিরিজের কয়েক ডজন ধরনের গাড়ি তৈরি করে থাকে । মোট ১১১০ কোটি ইউয়ানেরও বেশী পুঁজিবিনিয়োজিত এফ এ ডাব্লিউ ভোক্সওয়াগন ইতিমধ্যেই আওডি, ভোক্সওয়াগন --এই দুটো মার্কার পাঁচটি সিরিজের অর্থাত্ আওডি এ৬, এ৪, বোরা, জিডা, এবং গোল্ফ ধরনের গাড়ি উত্পাদন করে থাকে । অবিরাম নতুন মডেলের গাড়ির তৈরী এবং পূর্ণাঙ্গ ও চমত্কার পরিসেবা দেয়ার মাধ্যমে ভক্সওয়াগন ইতিমধ্যেই চীনের বৃহত্তম যৌথ পুঁজিবিনিয়োজিত গাড়ি কোম্পানি হয়েছে , যার প্রচুরসংখ্যক চীনা ক্রেতা আছে । 

   চীন ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে ভোক্সওয়াগন গোষ্ঠির দ্বিতীয় বৃহত্তম একক বাজার হয়েছে । ২০০৪ সাল থেকে ৫ বছরের মধ্যে ভোক্সওয়াগন গোষ্ঠি অব্যাহতভাবে চীনবাজারে ৫ বিলিয়ন ইউরোরও বেশী পুঁজি বিনিয়োগ করবে । 

   বোয়িং  

   বোয়িং কোম্পানি যে দীর্ঘকাল ধরে চীনের সংগে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন আর বজায় রেখেছে তার ইতিহাস শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে । বোয়িং কোম্পানি চীনে ব্যাপকভাবে উড্ডয়ন, সংরক্ষণ ও মেরামত এবং ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রের প্রশিক্ষণ চালিয়েছে এবং এইভাবে বোয়িং বিমানের চলাচলের নিশ্চয়তাবিধান করেছে । এর সংগে সংগে বোয়িং চীনের আওতায় বিমানবন্দরস্থ প্রতিনিধিদের পরিসেবা, লোজিস্টিক্স ও প্রযুক্তিগত সমর্থনব্যবস্থা যুগিয়েছে এবং চীনের বেসামরিক বিমান কোম্পানির জন্য আকাশ পথের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও বিমানচলাচলের নিরাপত্তার মান উন্নততর করার ব্যাপারে সাহায্য করেছে । 

  তাছাড়া , বোয়িং কোম্পানি চীনের বিমাননির্মাণশিল্পের সংগে ব্যাপকভাবে উত্পাদন সহযোগিতা চালিয়েছে, এবং নতুন যৌথপুঁজিবিনিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠা করে কোম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল উত্পাদন, বিমান মডিফাইড ও মেরামত এবং খুচরো যন্ত্রাংশ সরবরাহ ইত্যাদি কাজ পরিচালনা করে । 

  বর্তমানে সারা বিশ্বে ৩৩০০টি ( সচল ) বোয়িং বিমানের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ও খুচরো যন্ত্রাংশই চীনে তৈরী । 

   নোকিয়া 

  গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে নোকিয়া চীনের সংগে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে । ১৯৮৫ সালে নোকিয়া পেইচিংয়ে তার প্রথম শাখা অফিস স্থাপন করে , এটাই ছিল চীনের তার ব্যবসার প্রাথমিক বিকাশের সময়পর্ব ; গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নোকিয়া চীনে তার যৌথপুঁজিবিনিয়োজিত শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে তার স্থানীয় উত্পাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে , এবং ধাপে ধাপে তার চীনস্থ উত্পাদনঘাঁটিকে সারা বিশ্বে নোকিয়ার প্রধান উত্পাদনঘাঁটিতে পরিণত করেছে । নতুন শতাব্দী শুরু হবার পর নোকিয়া আবার চীনের সংগে সবচেয়ে নতুন টেলি-যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে গভীরভাবে চীনের তথ্যশিল্পের উন্নয়নে অংশ নিয়েছে এবং চীনকে নোকিয়ার বিশ্বব্যাপী কর্মী প্রশিক্ষণঘাঁটিতে পরিণত করার প্রয়াস চালিয়েছে । 

   চীনে নোকিয়ার দুটো বিশ্বপর্যায়ের গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে , চীনদেশের বিভিন্ন জায়গায় তার অফিস স্থাপন করা হয়েছে, তার মোট কর্মীসংখ্যা ৪৫০০ রও বেশী । নোকিয়া কোম্পানির যাবতীয় প্র্রধান দ্রব্য চীনেই তৈরি করার ব্যবস্থা রয়েছে , এ সব দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : নোকিয়ার সবচেয়ে নতুন মোবাইল ফোন, ঘাঁটি-স্টেশন, ঘাঁটিস্টেশন নিয়ন্ত্রণযন্ত্র, মোবাইল এক্সচেঞ্জ কেন্দ্র , পুট ইন ফ্যাসিলিটি, ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ ফ্যাসিলিটি এবং ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া টার্মিন্যাল ইত্যাদি । 

  মাইক্রোসোফ্ 

  মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি ১৯৯২ সালে চীনে প্রবেশ করে , মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি পর্যায়ক্রমে বিরাট অংকের পুঁজি বিনিয়োগ করে মাইক্রোসোফ্ট চীন গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্র, মাইক্রোসোফ্ট এশিয়া গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মাইক্রোসোফ্ট বিশ্ব প্রযুক্তি কেন্দ্র প্রভৃতি বিশ্ব-পর্যায়ের তিনটি বিরাট আকারের উন্নয়ন, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সমর্থন সংস্থা স্থাপন করেছে , ফলে “মাইক্রোসোফ্ট চায়না” বিদেশে মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানির সবচেয়ে সার্বিক সামর্থ্যসম্পন্ন একটি শাখা কোম্পানি হয়েছে । 

   এ পর্যন্ত মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি চীনে পুঁজি বিনিয়োগ করে দুটো যৌথ-পুঁজিবিনিয়োজিত সোফ্ট-ওয়্যার প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে । মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি ১.৯ কোটি ইউয়ান পুঁজিবিনিয়োগ করে ‘স্টন গোষ্ঠি’ ও চোংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন লিমিটেড কোম্পানির সংগে যৌথ পুঁজিবিনিয়োজিত চোংকুয়ানছুন সোফ্ট-ওয়্যায়ার লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে ; মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি আবার সাংহাইয়ের লিয়েনহো পুঁজিবিনিয়োগ লিমিটেড কোম্পানির সংগে যৌথ পুঁজিবিনিয়োগে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে, যার নাম : সাংহাই মাইক্রোসোফ্ট ছুয়াং সোফ্ট-ওয়্যায়ার লিমিটেড কোম্পানি । তাছাড়া , মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি আবার সাংহাই যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়, সাংহাই লিয়েনহো পুঁজিবিনিয়োগ লিমিটেড কোম্পানি, সাংহাই ফুতোং সোফ্ট-ওয়্যায়ার শিল্পপার্ক লিমিটেড কোম্পানির সংগে যৌথ পুঁজিবিনিয়োগে প্রতিষ্ঠা করেছে “সাংহাই কমিউনিকেশন বিশ্ববিদ্যালয় সোফ্ট-ওয়্যায়ার ইনস্টিটিউট” এবং “সাংহাই যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় সোফ্ট-ওয়্যায়ার শিক্ষা , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিপরিসেবা লিমিটেড কোম্পানি” । তাতে মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি ৪০ লক্ষ ইউয়ান অর্থাত্ মোট পুঁজিবিনিয়োগের ১০ শতাংশ পুঁজি বিনিয়োগ করেছে । 

 মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানির আর একটি কাজ হলো, সে সারা বিশ্বে দেদার বিক্রীত Xbox নামক দ্রব্য চীনে স্থানান্তরিত করে তা উত্পাদনের ব্যবস্থা করেছে । তাছাড়া মাইক্রোসোফ্ট কোম্পানি নিজের পণ্য উত্পাদন ও বিক্রয়ের প্রক্রিয়ার প্রথম এবং শেষ পর্ব বিদেশে রেখে মধ্য অংশটা চীনে করার পদ্ধতিতে চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে“মউস” ইত্যাদি পণ্য উত্পাদনের ব্যবস্থা করেছে, বিদেশের জন্য উত্পাদনের চুক্তি অনুযায়ী মোট ১০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশী পণ্য এখানে উত্পাদিত হয় ।