চিং চিং যুদ্ধের কাহিনী


       খৃষ্টপূর্ব ২০৬ সালে চীনের ইতিহাসের প্রথম শক্তিশালী একত্রিত সামন্ততান্ত্রিক রাজ্য ছিন রাজবংশের পতন হয় । চীন এক নতুন ঐতিহাসিক পর্যায়ে প্রবেশ করে । তখন দুজন স্থানীয় শাসক অর্থাত্সিয়ান ইয়ু আরলিউ পানের নেতৃত্বাধীন দুটি নতুন সামরিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয় । এই দুজন স্থানীয় প্রশাসক রাষ্টীয় ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তুমুল লড়াই করেছিলেন , ইতিহাসে তাদেরলড়াই ‘ ছু-হান লড়াই ’ বলে পরিচিত । প্রায় পাঁচ বছর স্থায়ী এই যুদ্ধে লিউ পানের কমান্ডার হান সিনঅসাধারণ রণকৌশল দেখিয়েছেন । চিং চিং যুদ্ধে তিনি চমত্কার রণকৌশল ব্যবহার করে জয় লাভ করেছিলেন । 

  খৃষ্টপূর্ব ২০৪ সালের অক্টোবর মাসেহান সিনলিউ পানের নতুন সংগ্রহ করা দশ হাজার নতুন সংগ্রহ করা সৈন্য নিয়ে থাই হান পাহাড় অতিক্রম করে সিয়ান ইয়ুর শাসনাধীন চাও রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে যান । চাও রাজা সিয়ে ও রাজ্যের সামরিক উপদেষ্টা ছেন ইয়ুথাই হান পাহাড়ের চিং চিং খৌ নামে একটি জায়গায় দুই লক্ষ সৈন্য সমাবেশ করে হান সিনের সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতি নেন । 

  চাও রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য হান সিনের বাহিনীকে অবশ্যই চিংচিং খৌ অতিক্রম করতে হবে । এই অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থান জটিল , চিংচিং খৌ পৌঁছার আগে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সংকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে হবে । এই পাহাড়ী অঞ্চলে আক্রমনের চেয়ে রক্ষা করা সহজ । চাও রাজ্যের বাহিনী এই পাহাড়ী অঞ্চলের প্রবেশমুখ দখল করে হান সিনের সৈন্যের অপেক্ষা করে । তারা মনে করে চাও রাজ্যের সৈন্য সংখ্যা বেশী এবং পাহাড়ের সংকীর্ণ পথের প্রবেশমুখ দখল করেছে , তাই যুদ্ধের সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে । হান সিনের সৈন্য সংখ্যা মাত্র দশ হাজার , তারা দীর্ঘপথ অতিক্রম করে ক্লান্ত হয়েছে , তাই যুদ্ধের দুর্বল অবস্থানে আছে । 

  চাও রাজ্যের উপদেষ্টা লি চো ছে কমান্ডার ছেন ইয়ুকে প্রস্তাব করলেন যে সৈন্য পাঠিয়ে হান বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সৈন্যকে হান বাহিনীর খাদ্য পাঠানোর পথ রোধ করার ব্যবস্থা করা হোক , যাতে দুই দিক থেকে শত্রু সৈন্যকে আঘাত হানা যায় এবং হান সিনকে জ্যান্ত অবস্থায় ধরা যায় । কিন্তু ছে ইয়ু সার্বিকভাবে হান বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালাতে চান । তিনি মনে করেন তার সৈন্য শক্তি শত্রু সৈন্যের চেয়ে অনেক বেশী , কৌশল প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই , তাই তিনি লি চো ছের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন ।  

  হান সিন জানেন নিজ পক্ষের সৈন্য শক্তি দুর্বল ,কোনো রণকৌশল প্রয়োগ না করলে তার বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত । তাই হান সিন তার সৈন্যবাহিনীকে চিংচিং খৌ থেকে অনেক দূরে অপেক্ষা করার আদেশ জারি করেন । তিনি চিং চিং খৌর ভৌগলিক অবস্থা ও চাও বাহিনীর সৈন্য বিন্যাস বার বার পর্যবেক্ষণ করেন । খোজঁখবর নেয়ার জন্য লোক পাঠানোর মাধ্যমে হান সিন জানতে পারলেন চাও বাহিনীর কমান্ডার ছেন ইয়ুশত্রু বাহিনীকে অবজ্ঞা করছেনএবং অল্পসময়ের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে চান । হান সিন নিজের বাহিনী চিংচিং খৌ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় নিয়ে গেলেন ।  

  মধ্যরাতে হান সিন দুই হাজার সৈন্যকে হাতে হান বাহিনীর একটি করে পতাকা নিয়ে অন্ধকারে পাহাড়ী পথ বেয়ে চাও বাহিনীর সেনানিবাসের পাশে অপেক্ষা করার আদেশ করেন । দ্বিতীয় দিন বেশীর ভাগ চাও সৈন্য আক্রমণের জন্য বাইরে যাওয়ার পর এই দু হাজারসৈন্য চাও রাজ্যের সেনানিবাসে চাও বাহিনীর পতাকা ফেলে দিয়ে হান বাহিনীর পতাকা খাড়া করবে । 

  ওদিকে হান সিন সৈন্য নিয়ে চাও বাহিনীর সেনানিবাসের দিকে অগ্রসর হন । তারা পরদিন ভোর বেলায় চিং চিং খৌ পৌছেন । এই সময় চাও বাহিনীর কমান্ডারর ছেন ইয়ুও সৈন্য নিয়ে চিংচিং খৌ পৌঁছেন । ছেন ইয়ু দেখেন হান সিনের সৈন্য সংখ্যা চাও বাহিনীর চেয়ে অনেক কম , চাও বাহিনী আবার অনুকূল অবস্থান দখল করে আছে , তাই আক্রমণের আদেশ জারি করলেন । দুপক্ষ কয়েক ঘন্টা লড়াইয়ের পরও চাও বাহিনী জয় লাভ করতে পারে নি । 

  এই সময় চাও বাহিনীর সেনানিবাসে মাত্র অল্প কিছু সৈন্য ছিল । হান বাহিনীর দু হাজার ওত্পেতে থাকা সৈন্য এই সুযোগে চাও বাহিনীর সেনানিবাসে প্রবেশ করে চাও বাহিনীর পতাকা ফেলে দিয়ে প্রচুর হান বাহিনীর পতাকা খাড়া করে এবং চিত্কার করতে শুরু করে । যুদ্ধরত চাও বাহিনীর সৈন্যরা যখন আবিষ্কার করে যে নিজের সেনানিবাসের সর্বত্রই হান বাহিনীর পতাকা , তখন তাদেরমধ্যে তত্ক্ষনাত্ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । হান সিন এই সুযোগে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে দু লক্ষ সৈন্যের চাও বাহিনীকে পরাজিত করেন।লড়াইয়ে চাও বাহিনীর কমান্ডার ছেন ইয়ু নিহত হন , চাও রাজা গ্রেপ্তার হন । 

  চিং চিং খৌ যুদ্ধে হান সিন দশ হাজার সৈন্য নিয়ে চমত্কার রণকৌশল প্রয়োগ করে চাও রাজ্যের দুই লক্ষ সৈন্যকে পরাজিত করে চীনের সামরিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় সংযোজন করেছিলেন ।