ইয়ুকোনের পাহাড় অপসারণের কাহিনী


       ইয়ুকোনের পাহাড় অপসারণের কাহিনী যদিও সত্যিকার ঘটনা নয় , তবুও এই কাহিনী চীনের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই জানেন । এই কাহিনী খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীর লিয়ে ইয়ুখৌ নামে এক দার্শনিকের রচিত ‘লিয়েচি ’ নামে এক বইতে আছে । 

  কাহিনীতে বলা হয়েছে , ইয়ুকোন নামে এক বৃদ্ধ ছিলো । তার বয়স প্রায় নব্বই বছর । তার বাড়ীর সামনে দুটি বড় পাহাড় । একটির নাম ঠাইহান পাহাড় , অন্যটির নাম ওয়াংউ পাহাড় । এই দুটি বড় পাহাড়ের দরুণ বাড়ীর লোকদের আসা-যাওয়ায় অসুবিধা হয় ।  

  একদিন ইয়ুকোন তার পরিবার পরিজনদের ডেকে বললেন , বাড়ীর সামনের এই দুটি পাহাড়ের দরুন আমাদের বাড়ীর বাইরে যেতে হলে পাহাড় দুটি ঘুরে যেতে হয় , এটামস্ত বড় এক ঝামেলা । আমরা একসঙ্গে মিলে এই দুটি পাহাড় সরিয়ে দেবো , কেমন ? 

  ইয়ুকোনের ছেলে ও নাতিরা ইয়ুকোনের কথা শুনে বললো , আপনি ঠিক বলেছেন , আমরা আগামীকাল থেকেই পাহাড় অপসারনের কাজ শুরু করবো । কিন্তু ইয়ুকোনের স্ত্রী মনে করেন দুটি বড় পাহাড় অপসারণ করা সহজ ব্যাপার নয় । তাই তিনি আপত্তি করে বলেন , আমরা এখানে অনেক বছর থেকেছি , কেন আমরা আগের মতো থাকতে পারি না ? তাছাড়া এই দুটি পাহাড় সরানোর সময় পাহাড়ের মাটি ও পাথর কোথায় রাখবো ? 

  ইয়ুকোনের স্ত্রীর কথা শুনে পরিবার-পরিজনরা মনে করেন পাহাড়ের পাথর ও মাটি রাখার জায়গা সত্যি এক বড় সমস্যা । আলোচনার পর তারা পাহাড়ের পাথর ও মাটি সমুদ্রে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । 

  দ্বিতীয় দিন ইয়ুকোন তার পরিবার পরিজনদের নিয়ে পাহাড় অপসারনের কাজ শুরু করেন । ইয়ুকোনর বাড়ীর পাশে এক বিধবা থাকেন , তার একটি ছেলের বয়স মাত্র সাত-আট বছর । পাহাড় সরানোর খবর পেয়ে ছেলেটিও সাহায্য করতে আসে । ইয়ুকোন ও তার পরিবার -পরিজনের পাহাড় খননের হাতিয়ার মাত্র কোদাল ও পিঠে বহনকারী বাস্কেট । সমুদ্র ও পাহাড়ের মধ্যে দূরত্ব বেশী , তাই একজন লোক একদিন শুধু দুই বাস্কেট পাথর বা মাটি সমুদ্রে পাঠাতে পারে । তাই এক মাস পরিশ্রম করার পরও পাহাড় দেখতে আগের মতো থাকে ।  

  চিসৌ নামে আরেক বুড়ো ইয়ুকোনের পাহাড় অপসারনের সিদ্ধান্ত হাস্যকর মনে করেন । তিনি ইয়ুকোনকে বলেন , আপনার বয়স হয়েছে , কোনো কাজ না করে হাটা পর্যন্ত অসুবিধা মনে করেন , মস্ত বড় দুটি পাহাড় অপসারণ করবেন কিভাবে ? 

  ইয়ুকোন উত্তরে বলেন , আপনার নাম চিসৌ , তার মানে বুদ্ধিমান বুড়ো । কিন্তু আমার মনে হয় ছোট বাচ্চার বুদ্ধিও আপনার চেয়ে বেশী । আমার বয়স হয়েছে , আমি মরতে পারি , তবে আমার ছেলে আছে , ছেলে মরে গেলে তার ছেলে এই কাজ করে যাবে । বংশানুক্রমে এই কাজ করলে কেন পাহাড় দুটি অপসারণ করতে পারবো না ? তাছাড়া , পাহাড় দুটি বড় হলেও পাহাড়ের মাটি ও পাথর তো আর বাড়ে না , যতোদিন আমাদের খনন কাজ না থামে , ততোদিন পাহাড়ের পাথর ও মাটি কমতে থাকবে । চিসৌ ইয়ুকোনের কথা শুনে কোনো কথা না বলে চলে গেলেন । 

  ইয়ুকোন ও তার পরিবার-পরিজন পাহাড় খনন করতে থাকে , তারা গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদ আর শীতকালের প্রচন্ড বাতাস উপেক্ষা করে সারা দিন পাহাড় খনন করেন । তাদের এই নিরলস প্রচেষ্টা দেখে স্বর্গীয় রাজা মুগ্ধ হলেন । তিনি তার দুজন দেবতাকে পৃথিবীতে নেমে এই দুটি পাহাড় সরিয়ে দেয়ার আদেশ দিলেন । কিন্তু ইয়ুকোনের পাহাড় সরানোর কাহিনী আজ পর্যন্ত চীনাদের মুখে মুখে ।এই কাহিনী আমাদের জানিয়েছে , অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করলে যে কোনো কঠিন কাজ সম্পন্ন করা যায় ।