দুনহুয়াংয়ের মোগাও গুহা-সমষ্টির না-জানা কথা

      দুনহুয়াংয়ের মোগাও গুহা-সমষ্টি পৃথিবীর বৃহততম অবিকল সংরক্ষিত প্রাচীন বৌদ্ধকীর্তি। বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষনকারী এই শিল্পভান্ডার উত্তর পশ্চিম চীনের গোবি মরুভুমির পাহাড়ের গায়ে তৈরী করা হয়েছে কেন ? 

  কথিত আছে , দুনহুয়াংয়ের মোগাও গুহা তৈরীর জন্য সন্ন্যাসী লে জুনই সেখানে স্থান বেছে নিয়েছিলেন ।৩৬৬ খ্রীষ্টাব্দে সন্ন্যাসী লে জুন যখন দুনহুয়াংয়ের সানওয়ে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছেন তখন সন্ধ্যা নেমে আসে । কোথায় শুয়ে রাত কাটাবেন তা ভাবতে ভাবতে হঠাত মাথা তুলেই দেখেন , সামনের মিংসা পাহাড় সোনালী আলোয় ঝলমল করছে ।মনে হয় , হাজার হাজার বুদ্ধ সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত । এই অপরুপ দৃশ্যে অভিভূত হয়ে তিনি মনে মনে ভাবলেন ,এটি সত্যিই একটি পবিত্র স্থান ।তারপর তিনি শ্রমজীবী সংগ্রহ করে এখানে গুহা তৈরীর কাজে নিয়োগ করেন ।গুহার সংখ্যা বছরের পর বছর বেড়ে চলল ।থাং রাজত্বকালে হল এক হাজারেরও বেশী গুহা । 

  চীনের বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘকালীন গবেষনায় জানা যায় , দুনহুয়াংয়ের মোগাও গুহা কাটা মোটেই দৈব ব্যাপার নয়। বস্তুত তা চীনের পুর্বপুরুষদের বিজ্ঞতার নিদর্শন ।গোবির মরূদ্যানে গুহা তৈরীর যে স্থান নির্বাচিত হয়েছে তাতে লৌকিক জীবনের স্পর্শ বাঁচিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতির সংগে মিশে যাওযার আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে । যে পাহাড়ের গায়ে মৌচাকের মত সারি সারি গুহা তৈরী হয়েছে তার সামনে একটি ছোটো নদী কলকল করে বয়ে যায় । নদীর পানিসিক্ত পাহাড়ের চারপাশের জমিতে অজস্র সবুজ গাছ জন্মেছে।মরূদ্যানের স্বতন্ত্র সৌন্দর্য বেজায় মনোহর । পাহাড়ের যে গায়ে গুহা কাটা হয়েছে তার উচ্চতা ৪০ মিটারের বেশী নয় । শীতকালে বালি মেশানো বাতাস গুহার পেছনের পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসে এবং পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে যায় । গুহার ভিতরে প্রবেশের জো নেই । গ্রীষ্মকালে পূবালী বাতাস বইতে শুরু করে ।মোগাও গুহা-সমষ্টির সামনে সানওয়েই পর্বত দাঁড়িয়ে আছে বলে বালিমেশানো বাতাস তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে না ।সুতরাং মোগাও গুহা-সমষ্টি শুষ্ক অঞ্চলের একটি সর্বাধিক নিরাপদ স্থানে রয়েছে । 

  এই কারণেই বিপদসংকুল এক হাজার বছর কেটে গেলেও ১১টি রাজত্বকালে তৈরী ৪৯২টি গুহা ও গুহার ভেতরকার প্রচুর দেয়ালচিত্র ও ভাস্কর্য সুরক্ষিত রয়েছে । এটা সংস্কৃতি ও শিল্পের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত বিশ্বের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ ।