

0905muktarkotha
|
প্রিয় বন্ধুরা, চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধ ও বিশ্বের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে জয়ের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবার চীনের পেইচংয়ে আয়োজন করা হয় 'ভি-ডে প্যারেড' বা বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। কিন্তু এত দক্ষযজ্ঞের মধ্যেও চীনারা একজন ভারতীয় বন্ধুকে ভুলে যায়নি। এই ভারতীয় বন্ধু হলেন ডাক্তার দ্বারকানাথ শান্তারাম কোট্নিস। তিনি জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধে চীনের জনগণকে সাহায্য করতে চীনে এসেছিলেন। তার সঙ্গে এসেছিলেন আরও চার ভারতীয় চিকিত্সক। তাঁরা হলেন: ডাক্তার এম অটল, ডাক্তার এম. আর. চোলকার, ডাক্তার ডি মুখার্জি, ও ডাক্তার বিজয় কুমার বসু। চীনা জনগণ তাঁদেরকে সম্মান করার জন্য একটি করে চীনা নাম দিয়েছেন। প্রত্যেকের নামের শেষ অক্ষর হল 'হুয়া'। হুয়া মানে 'চীন'। তাঁদের চীনা নামগুলো হচ্ছে: আইদেহুয়া, চোকেহুয়া, মুকেহুয়া, বাসুহুয়া ও কোলিহুয়া।
আইদেহুয়া ওরফে ডাক্তার অটল ১৯৩৮ সালে চীনের ইয়ানআনে আসেন। তিনি চীনা জনগণের সঙ্গে গভীর মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে তিনি ভারতে ফিরে যান। তিনি দু'দেশের মৈত্রী জোরদারে অনেক অবদান রাখেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চীন-ভারত মৈত্রী সমিতির আমন্ত্রণে চীন পরিদর্শন করেন। কিন্তু তিনি পেইচিংয়ে তার শরীরের হেপাটোসিরোসিস রোগ ধরা পড়ে। তিনি সে বছরের ডিসেম্বরে পেইচিংয়ে মারা যান। তার অন্তিমবাণী অনুযায়ী তাঁর দেহভস্মের অর্ধেক ভারতের গঙ্গা নদীতে এবং বাকি অর্ধেক চীনের হুয়াং নদীতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। চীনের বৈদেশিক মৈত্রী সমিতি হুয়াপেই সামরিক বীরদের কবরস্থানে তার স্মৃতিসৌধ স্থাপন করে।
চোকেহুয়া ওরফে ডাক্তার চোলকার ১৯৩৭ সালে যখন চীনে আসেন, তখন তার বয়স ৫৫ বছর। পাঁচ ভারতীয় চিকিত্সকের মধ্যে তাঁর বয়স সবচে' বেশি ছিল। তিনি চীনে চিকিত্সা করার পাশাপাশি চীনের ডাক্তারদের থোরাসিক সার্জারির (Thoracic Surgery) প্রশিক্ষণ দিতেন। তিনি ১৯৩৯ সালের ২৪ মে চীন থেকে ভারতে ফিরে যান। ভারতে তিনি দু'দেশের মৈত্রী জোরদার করার জন্য ভূমিকা রাখেন।
মুকেহুয়া ওরফে ডাক্তার মুখার্জিও ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের চিকিত্সাদলের সদস্য হিসেবে চীনে আসেন। কিন্তু তিনি রোগাক্রান্ত হলে ১৯৩৯ সালের ২ অগাস্টে স্বদেশে ফিরে যান। সুস্থ হবার পর তিনি আবারও চীনে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিরূপ হওয়ায় তার চীনে ফেরা হয়নি। এর পর তিনি ভারত-চীন মৈত্রী সমিতির কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে শুরু করেন।
বাসুহুয়া ওরফে ডাক্তার বসু ১৯৩৪ সালে ভারত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছলেন। ১৯৩৮ সালে চীনের ইয়ানআনে আসেন তিনি। চীনের ইয়ানআনে আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা। একজন ভারতীয় মানুষের জন্য এ আবহাওয়ায় টিকে থাকা ছিল কঠিন কাজ। সেখানে অবস্থানকালে তিনি চার-পাঁচ মাসে একবার গোসল করতেন। তখন চীনে খাওয়ার জন্য ফলও পাওয়া যেত না। শসাই ছিল তখন সবচেয়ে ভাল ফল। ১৯৪৩ সালে কোটনিস রোগে মারা যাওয়ার পর তিনি একাই চীনের মানুষের চিকিত্সাসেবায় নিয়োজিত থাকেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের অগ্রবর্তী অবস্থানে থেকে যুদ্ধাহতদের চিকিত্সা করতেন এবং স্থানীয় চিকিত্সকদেরও প্রশিক্ষণ দিতেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ইয়ানআনে ফিরে আসেন।
স্থানীয়দের মধ্যে এখনও ভারতীয় চিকিত্সকদের কথার চর্চা হয়। অনেকেই আজও তাকে এবং কোটনিসকে স্মরণ করেন। এ চিকিত্সকদের হাত ধরেই চীনের আকুপাংচার ভারতে যায়। গত শতাব্দের সত্তুরের দশকে ভারতে আকুপাংচারকেন্দ্র ছিল ৩০টির বেশি ছিল এবং আকুপাংচার চিকিত্সক ছিলেন দেড় শতাধিক।
কোলিহুয়া ওরফে কোটনিস ১৯৩৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনে এসেছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বাধীন চীনা বাহিনীর চিকিত্সাদলে যোগ দেন। তিনি অনেক কঠিন পরিবেশে চীনা সৈন্য ও নাগরিকদেরকে চিকিত্সাসেবা দিয়েছেন। যুদ্ধকালে তিনি ৫৫৮ জন সৈন্যের শরীরে অস্ত্রোপচার করেন এবং আট শতাধিক রোগীর চিকিত্সা করেন।
১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা বাহিনীতে যোগ দেন। তাকে একসময় ডক্টর হেনরি নর্মান বেথুন আন্তর্জাতিক শান্তি হাসপাতালের প্রধান হিসেব নিয়োগ দেয় চীনা সরকার। ১৯৪১ সালেই তিনি কুও ছিংলান নামের একটি চীনা মেয়েকে বিয়ে করেন। ১৯৪২ সালের ২৩ অগাস্ট তাদের একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করে। ভারতের চীনা প্রতিশব্দ 'ইন' এবং চীনের চীনা প্রতিশব্দ 'হুয়া' মিলিয়ে তার নাম রাখা হয় 'ইনহুয়া'।
১৯৪২ সালের জুলাই মাসে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। একই বছরের ৯ ডিসেম্বর মাত্র ৩২ বছর বয়সে কোলিহুয়া তথা ডক্টর কোটনিস মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং। তিনি বলেন, চীনা বাহিনী একটি শক্তিশালী হাত হারিয়েছে এবং চীনা জাতি হারিয়েচে একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে। বলা বাহুল্য, চীনা জাতি কখনই তাদের এই অকৃত্রিম বন্ধুকে ভুলে যাবে না।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আপনারা চীনের জাপানি আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধে চীনা জনগণের পাশে থেকে সাহায্য দানকারী পাঁচ ভারতীয় চিকিত্সকের গল্প শুনলেন। এখন আপনাদের চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়ার পালা।
বাংলাদেশের পাবনা জেলার পাছশুয়াল রেডিও শ্রোতা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এস এম হান্নান আমাদেরকে অডিও মতামত পাঠিয়েছেন। এখন আমরা একসঙ্গে তাঁর কথা শুনবো।
......
আচ্ছা, বন্ধু এস এম হান্নান, আপনাকে অডিও ফাইলের মাধ্যমে মতামত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের জামালপুর জেলার নীড় ইউনিটি ডিএক্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এম সবুজ মাহমুদ তার ই-মেইলে লিখেছেন, প্রথমে আমার আন্তরিক প্রীতি ও শরতের কোন এক স্নিগ্ধ সকালের একরাশ কাশফুলের শুভেচ্ছা নিবেন। আমি আপনাদের একজন নিয়মিত শ্রোতা ও পত্রলেখক। আমাদের শ্রোতা ক্লাব "নীড় ইউনিটি ডিএক্স ক্লাব" একটি সুসংঘবদ্ধ শ্রোতা সংগঠন। আপনাদের কেন্দ্রের সচেতনতামূলক ও পরামর্শমূলক অনুষ্ঠানগুলো নিয়মিত শোনা ও এ সম্পর্কে মতামত জানানো এ শ্রোতা সংগঠনের সদস্য ও কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ। এ ছাড়াও সমাজের নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের নাগরিকদের সচেতন করা এবং সর্বস্তরের জনসাধারণকে রেডিও শুনতে উত্সাহ প্রদান করাও আমাদের শ্রোতা ক্লাবের নিয়মিত কর্মসূচি। আমরা আশা করি, আগামীতে আমাদের শ্রোতা ক্লাবের কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা পাবো। ভালো থাকুন সবাই, ধন্যবাদ।
বন্ধু সবুজ মাহমুদ, আপনাকে চিঠির জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের শ্রোতা সংগঠনের সাফল্য কামনা করি। আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি রইল।
বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার মোঃ নুরুজ্জামান ইসলাম মাদু লিখেছেন, সুপ্রিয় ম্যাডাম মুক্তা ও আলিমুল হক ভাইয়া কেমন আছেন? ইমেইলের শুরুতে শরৎ কালের কাঁশফুলের শুভেচ্ছা নিবেন। সেই ছোটবেলা থেকে বাবার হাত ধরে CRI শুনতে শুরু করেছিলাম, সেইসব স্মৃতি আজও মনের জানালা দিয়ে উঁকি দেয় মনে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
আচ্ছা, মোঃ নুরুজ্জামান ইসলাম মাদু, আপনাকেও নিয়মিত আমাদের অনুষ্ঠান শোনার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আপনি নিয়মিত আমাদের মতামত পাঠাবেন।
বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার দেওয়ান রফিকুল ইসলাম রানা তার ই-মেইলে লিখেছেন, আমি সিআরআই বাংলা বিভাগের একজন নিয়মিত শ্রোতা। প্রতিদিন বাংলা অনুষ্ঠান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি। আশা করি সিআরআই-এর বাংলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর সব না-জানা খবর জানবো এবং প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু শিখব। আপনাদের প্রতিদিনের অনুষ্ঠান আমরা অনেকেই শুনি। সেই ১৯৮৯ সাল থেকে আমি আপনাদের বেতার অনুষ্ঠান শুনে যাচিছ। হাঁটি হাঁটি করে পথ চলে সি আর আই আজ অনেক দূর পৌঁছে গেছে। আজ সিআরআই বাংলা বিভাগের নিজস্ব ওয়েবপেজ রয়েছে। আমাদের নিত্যনতুন বস্তুনিষ্ঠ অনুষ্ঠান উপহার দিচ্ছে চীন আন্তর্জাতিক বেতার। আমি নিয়মিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছি এবং ওয়েবসাইট দেখছি। চীন আমার অত্যন্ত প্রিয় দেশ। চীনের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি সবকিছুই আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। আমার এই প্রিয় দেশকে জানতে, সেখানকার মানুষদের জানতে আমি চীন অন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনি এবং ওয়েবসাইট দেখি। আমাদের জন্য অসাধারণ অনুষ্ঠান পরিবেশনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ডেওয়ান রাফিকুল ইসলাম রানা, আপনাকে নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান শোনার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আপনার মত শ্রোতার মতামত আমাদের জন্য দরকার। আশা করি, আপনি নিয়মিত আমাদের লিখবেন।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে আমি আপনাদেরকে একটি নতুন শ্রোতাসংঘের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। নতুন এই শ্রোতাসংঘটি হচ্ছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধুমালা রেডিও ক্লাব। ক্লাবটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন তার ই-মেইলে লিখেছেন, শুভেচ্ছা নিবেন। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা রেডিও চীনের অনুষ্ঠান শুনছি। তবে অনুষ্ঠান শুনলেও আমাদের এবং সিআরআইয়ের মধ্যে কেমন যেন একটা দূরত্ব ছিল। তাই একটি শ্রোতা ক্লাব গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকদিন থেকে ভাবলেও কিছুদিন আগে সে ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি। গত মাসের শেষ দিকে ২১-সদস্যবিশিষ্ট 'মধুমালা রেডিও ক্লাব' নামে একটি বেতার ক্লাব গঠন করেছি। তবে জানি না এটা আপনাদের কাছে কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যদি রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকে তবে তা জানাবেন।
আচ্ছা, বন্ধু শাহাদাত হোসেন, আমি আপনাদের ক্লাবের নাম আমাদের শ্রোতাসংঘ নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছি। আশা করি, আপনার ক্লাবের সকল সদস্য নিয়মিত আমাদের অনুষ্ঠান শুনবেন এবং আমাদেরকে লিখবেন। ধন্যবাদ।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে।
আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.com.cn এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/আলিম)




