1005huanqiu
|
আর নিশ্চয়ই এই সকল হাস্যকর গবেষণা বিজ্ঞান, চিকিত্সা ও প্রযুক্তির জগতের মানুষদের মধ্যে অনেক আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরি করে থাকে।
কিন্তু আসল নোবেলের সাথে এই নকল নোবেল পুরস্কারের বেশকিছু হাস্যকর পার্থক্য রয়েছে। যেমন, বিজয়ী ব্যক্তি এ পুরস্কারের জন্য কোনো অর্থমূল্য পাবেন না, এমনকি নেই কোনো হইচই, শুভেচ্ছা আর প্রশংসার পুষ্পবর্ষণ। কেবল নকল নোবেল বিজয়ী ব্যক্তি তার গবেষণা পত্রটিকে আয়োজক ম্যাগাজিন কোম্পানির পত্রিকায় বিনা খরচে ছাপাতে পারবেন।
এ পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানটিও কিন্তু বেশ হাস্যকর রকমের মজার। ঐতিহ্য অনুযায়ী, পুরস্কার প্রদানের সময় দর্শকরা মঞ্চে কাগজের তৈরি বিমান ছুঁড়ে থাকে। ভেবে দেখুন, দর্শক সারিতে থাকা হাজারো দর্শক যদি এক সাথে কাগুজে বিমান ছুঁড়তে থাকে কেমন মজার দৃশটাই না হবে, তাই না?
এখানে একজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করলেই নয়, যিনি নকল নোবেলের শুরুর দিক থেকে প্রায় ১২ বছর যাবত খুব খুব মহান একটি কাজ করে যাচ্ছেন, তিনিই প্রতি বছর নকল নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ এবং পুরো থিয়েটারঅঙ্গন জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাগুজে বিমান কুড়ানোর কাজটি করে চলেছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী রোই গ্লাউবার। তিনি ২০০৫ সালে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে নোবেল বিজয়ী হয়েছেন। তবুও তিনি এখন পর্যন্ত হাস্যকর নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজটি করে চলেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। হাস্যকর বিষয়টি হচ্ছে এই যে, নকল নোবেল পুরস্কারটি আসল নোবেলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। এরা মনে করে নকল নোবেলের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই, বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে, আসল নোবেল পুরস্কার প্রদানের এক সপ্তাহ আগে নকল নোবেলের হাস্যকর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটা সত্যিই হাস্যকর এই জন্য যে, যারা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন, তাদেরকে নিজ খরচেই থিয়েটারে এসে পুরস্কার গ্রহণ করতে হয়। এবং পুরস্কারস্বরূপ তাদের যে পুরস্কার প্রদান করা হয়, তা খুব সস্তা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি একধরণের হস্ত-শিল্পকর্ম। এমন দৃষ্টান্তও আছে যে, এই 'বিখ্যাত নোবেল পুরস্কার' নিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই তা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে।
২০১৫ সালের 'হাস্যকর নোবেল' পুরস্কার গত ১৮ সেপ্টেম্বর হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করা হয়। এতে মোট ১০টি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
এখন আমরা চলতি বছরের 'হাস্যকর নোবেল পুরস্কার'র কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করবো।
যেমন, রসায়ন শাস্ত্রের পুরস্কারের প্রধান বিষয় হল: সিদ্ধ হওয়া ডিমকে আবার কাঁচা ডিমে পরিণত করা। ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালুম ওরমান্ডে ও তার গবেষণা দলের এ মহা গবেষণা চলতি বছরের হাস্যকর নোবেল পুরস্কারের রসায়ন বিষয়ক পুরস্কার পেয়েছে।
হ্যাঁ, আপনারা ঠিকভাবে শুনেছেন, আর তা জাদুবিদ্যা নয়, তা সত্যি বিজ্ঞান। কিভাবে তা কাঁচা ডিমে পরিণত করা যায়, এ প্রক্রিয়া আমরা এখানে ব্যাখ্যা করবো না, তা অতি কঠিন এবং পেশাদার। কিন্তু এ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এখানে উল্লেখ করতেই হবে। এ প্রযুক্তিকে ক্যান্সার চিকিত্সার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় এবং অদূর ভবিষ্যতে তা হাসপাতালে প্রয়োগ করা যাবে। এছাড়া চিপস বা দুগ্ধজাত পণ্য উত্পাদনকারীরা যদি এ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ,তাহলে তাদের মুনাফাও আরো বেশি ও আরো ভালো হবে।
এখানে আরেকটি মজার গবেষণা আছে। তা চলতি বছরের হাস্যকর নোবেলের পরিচালনাবিদ্যা পুরস্কার পেয়েছে।
এর প্রধান বিষয় হলো, ছোটবেলায় যারা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনুভব করেছে, তবে কোনো মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয় নি, এমন মানুষ যদি সিইওর দায়িত্ব পালন করে, তারা আরো উচ্চ ঝুঁকি বহন করতে পারে।
এ পুরস্কার পেয়েছেন সিংগাপুরের গেনারো বারনাইল এবং তার সহকর্মী। গবেষণায় ১৯৯২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৫০০টি সবচেয়ে ভালো কোম্পানির ১৭১১ জন সিইও নিয়ে জরিপ করা হয়েছে। গবেষণার প্রধান বিষয় হলো তাদের ছোটবেলা কত বেচারা এবং তারা কত বড় ঝুঁকি বহন করতে পারে।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, সুপার বড় দুর্যোগ অনুভব করেছে এমন সিইও আসলে খুব সতর্কপন্থা অবলম্বন করে। মধ্য পর্যায়ের দুর্যোগ অনুভব করেছে এমন সিইও আসলে আরো সাহসী।
এখানে আরেকটি মজার পুরস্কারের বিষয় শেয়ার করতে চাই। তা হলো চলতি বছরের হাস্যকর নোবেল পুরস্কারের অর্থনীতি পুরস্কার। তা অর্জন করেছে ব্যাংকক পুলিশ। এর প্রধান বিষয় হলো, ঘুষ না খাওয়া পুলিশকে পুরস্কার দেওয়া দুর্নীতির জন্য সহায়ক। রয়টার্সের ২০১৪ সালের খবরে প্রকাশ, ব্যাংককের দু'জন পুলিশ তিন ডলারের ঘুষ খেতে অস্বীকার করেছে, পুলিশ পক্ষ তাদের সঠিক সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করার জন্য ৩১০ মার্কিন ডলারের পুরস্কার দিয়েছে।
আসলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ২০০১ সালে চালানো এক গবেষণা থেকে প্রমাণ করেছে যে, উন্নয়নশীল দেশে, সরকারি বিভাগের কর্মীদের বেতন সত্যি তাদের ঘুষ খাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। যদি তাদের বৈধ আয় সত্যি অনেক কম, তাই তারা জীবনের চাপের কারণে হয়ত কিছু অবৈধ আয় পাওয়ার চেষ্টা করে। তাই সরকারি বিভাগের কর্মীদের বেতন বাড়ানো দুর্নীতির হার কমাতে পারে।
এছাড়া চলতি বছরের হাস্যকর নোবেল পুরস্কারে আরো অনেক মজার বিষয় রয়েছে। যেমন, জীব বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, রসায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।