Web bengali.cri.cn   
শতাধিক বছর পর তিয়েন-ভিয়েতনাম রেলপথ পুনরায় চালু, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত
  2015-09-25 15:08:00  cri

পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো রেলপথ। রেলপথে বিশাল পরিমাণ সম্পদ নিরাপত্তার সঙ্গে স্থানান্তরিত করা যায়, যা অন্য কোনো মাধ্যমে এতটা সহজ নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের 'ব্রিজহেড' ঘটনার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইয়ুননান প্রদেশের রেল পথের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইয়ুননান প্রদেশের হোংহো হানি জাতি ও ই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং হো খৌ ইয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সীমান্তে অবস্থিত। অন্যদিকে প্রতিবেশী ভিয়েতনামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রয়েছে একটি মাত্র নদী। এই স্থানে চীনের একমাত্র কার্যকর মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে।

নতুন করে নির্মিত হো খো পেই স্টেশন স্থানীয় অঞ্চলের দশ-বার বছর ধরে যাত্রীবাহী রেলপথের অভাব দূর করেছে। পাশাপাশি একশ' বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইয়ুননান-ভিয়েতনাম রেল যোগাযোগ শুরু করেছে। ফলে চীনের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' ধারণা বাস্তবায়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমানে চীনের বেশিরভাগ রেলপথ হলো ব্রডগেজ রেল লাইন। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশে এখনও মিটারগেজ রেল লাইন রয়েছে। মিটারগেজ রেলপথগুলো ব্রডগেজ রেলপথের চেয়ে কিছুটা সংকীর্ণ হয়। সাধারণত এগুলো ১ হাজার মিলিমিটার এবং ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪৩৫ মিলিমিটার প্রশস্ত হয়। হো খৌ ইয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলায় নতুন নির্মিত ব্রডগেজ রেল লাইনের হো খৌ পেই স্টেশন থেকে চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক রেলপথ, তিয়ান-ভিয়েতনাম রেল পথও শুরু হয়েছে। ইয়ুননান রেলপথ জাদুঘরের প্রধান লি জি মিং বলেন, তিয়ান-ভিয়েতনাম রেলপথ হলো আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রথম রেলপথ। ইয়ুননানের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উন্নয়নে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন,

তিয়ান-ভিয়েতনাম রেলপথ ইয়ুননান, কুইজৌ ও সিছুয়ান অর্থাত্ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের প্রথম রেলপথ। চীনের রেলপথগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে প্রাচীন রেলপথ এটি। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ইয়ুননানের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলেছে এবং বিশ্বের সঙ্গে ইয়ুননানের যোগাযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। এতে বিশ্বের অগ্রণী শিল্পবিপ্লব দ্রুত এ অঞ্চলে আমদানি হয়েছিল। আসলে রেলপথের দ্রুততা ও পরিবহন সক্ষমতা অনেক বেশি। এটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী মরুযাত্রী দলের চেয়েও বেশি পরিমাণ মালামাল বহন করে ও মানুষের যাতায়াতে ভূমিকা পালন করে।

তিয়েন-ভিয়েতনাম রেলপথ ভিয়েতনামের হাইফং থেকে ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিং পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮৫৪ কিলোমিটার। ১৯১০ সালের মার্চ মাসে রেলপথটির ইয়ুননান অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। তখন থেকে হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা পার্বত্য লাল ভূমির সঙ্গে আধুনিক শিল্প সভ্যতার যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এরপর শতাব্দীরও বেশি সময়ে তিয়ান-ভিয়েতনাম রেলপথ কেবল যে প্রাচীন ইয়ুননানকে এগিয়ে নিয়েছে তাই নয়, বরং চীনের ইতিহাসে শতাধিক বছরের সমস্যা-সংঘাত ও উত্থান-পতন স্বচক্ষে দেখেছে। প্রধান লি জি মিংয়ের জন্য হোং হো অংশ রেলপথ হলো চীনের রেলপথ উন্নয়ন ইতিহাসের সূচনা ও চীনের রেলপথ উন্নয়নের জীবন্ত সাক্ষী। তিনি বলেন,

এই রেলপথটি আমাদের চীনের রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কে এখনও ভাগ্যক্রমে বজায় রয়েছে। এই অংশ অন্য ন্যারোগেজের চেয়ে ভিন্ন এবং শুধু ইয়ুননানে আছে। এ ছাড়া এ অংশের রেলপথ চীনের রেলপথ উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি আমাদের ইয়ুননান রেলপথের অপরিহার্য এক অংশ, একটি ইতিহাস। এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য রয়েছে। আমাদের চীনের রেলপথের সম্পদ এবং চীনের রেলপথ উন্নয়নের একটি জীবন্ত জীবাশ্ম এটি।

সমাজ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তিয়ান-ভিয়েতনাম রেলপথের পরিবহণ কার্যকারিতার গতি বজায় রাখা যায়নি। ২০০৩ সালের জুন মাসে তিয়ান-ভিয়েতনাম রেলপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়, শুধু মালামাল পরিবহন বজায় ছিল। এরপর দশ-বারো বছর স্থানীয় অধিবাসীর যাতায়াতের জন্য সড়কপথের উপর নির্ভর করেছেন। হো খৌ পেই স্টেশনের সম্পাদক লি ইয়ান বলেন,

বলা উচিত প্রায় ১১ বছর। রেলপথ নেই, যাত্রী নেই। যাত্রী পরিবহন নেই। সবাই যাতায়াতের জন্য রাজপথের ওপর নির্ভরশীল। সবই স্বচালিত অথবা অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করে। তখন রেলপথ ছিল না।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নতুন খুন(খুনমিং)-হো(হো খৌ পেই) রেলপথ মেংহো অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে নতুন খুন-হো রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। রেলপথটি খুনমিং থেকে ইয়ুসি ও মেংজি'র মধ্য দিয়ে চীন-ভিয়েতনাম সীমান্ত স্থলবন্দর--হো খৌ ইয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলাকে সংযুক্ত করে। প্রায় ১১ বছর অপেক্ষার পর রেলপথটি ধীরে ধীরে নতুন নির্মিত হো খৌ পেই স্টেশনে প্রবেশ করেছে। হো খৌ অধিবাসী হো খৌ পেই স্টেশনের সম্পাদক লি ইয়ান বলেন,

দশ-বারো বছর ধরে এখানকার মানুষ রেলপথের অপেক্ষায় ছিল। সুতরাং তা চালু হবার সময় আমার খুবই উত্তেজিত ছিলাম। অনেক মানুষ প্রথম রেলপথের টিকিট কিনতে প্রতিযোগিতা করা শুরু করে এবং প্রথম রেলগাড়িতে বসার প্রতিযোগিতা করে। সুতরাং প্রথম ট্রেনটি একদম পরিপূর্ণ ছিল। চালু হওয়ার শুরু দিকে যাত্রীর সংখ্যা মৌলিকভাবে ভরা। অধিকাংশ ছিল স্থানীয় অধিবাসী। ১১ বছরের অপেক্ষার পর চূড়ান্তে ট্রেনে বসতে পারে তারা।

নতুন খুন-হো রেল পথ হলো চীন ও ভিয়েতনাম সীমান্ত সংযুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। ভিয়েতনামের মিটারগেজ রেলপথ নেটওয়ার্ক দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংযুক্ত করা যায় এবং চীনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশের নতুন দরজা এটি। পর্যটকরা হো খৌ-এ পৌঁছানোর পর ভিয়েতনাম ভ্রমণে যান। হো খৌ পেই স্টেশনের সম্পাদক লি ইয়ান বলেন,

অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। যেমন শুক্রবার খুনমিং থেকে হো খৌ-এ পৌঁছানোর পর সরাসরি হ্যানয়ে যাওয়া যায়। হয়তো হ্যানয়ে বেড়ানোর সময় খুব বেশি না। কিন্তু সা পা'র মতো জায়গায় যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। কারণ আমাদের এখানকার লাও ছাই থেকে সা পা পর্যন্ত যাত্রা স্বল্প, প্রায় ঘণ্টা খানেকের মতো। অনেক মানুষ এখানে এসে পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে ভিয়েতনাম বেড়াতে যান।

বর্তমানে হো খৌ পেই স্টেশনের গড়পড়তা দৈনিক পর্যটকের সংখ্যা ৮ শতাধিক। পর্যটন মৌসুমে দিনে পর্যটকের সংখ্যা ২ হাজার ৭শ'র বেশি হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হো খৌ পেই স্টেশনে মালামাল পরিবহন শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ২০ হাজার টন মালামাল পাঠানো হয়েছে এবং ১ লাখ ৮০ হাজার টন মালামাল এসেছে এখানে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হয়েছে কফি বীজ, নারিকেল ফাইবার ও রবার জাতীয় গাছের ঘন রস রয়েছে, পাশাপাশি চীন থেকে রপ্তানি করা হয়েছে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার, গুড় ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার।

হো খৌ পেই স্টেশনের নির্মাণ তিয়ান-ভিয়েতনাম রেলপথের জন্য নতুন উন্নয়নের সুযোগ ডেকে এনেছে। রেলগাড়ির গতি বা ধারণক্ষমতা যাই হোক না কেনো, মিটারগেজকে স্ট্যান্ডার্ড গেজের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। নতুন চাহিদা উপযোগী করার জন্য ২০১৫ সালের এপ্রিলে প্রথম চীনা কন্টেইনার পরিবহনকারী ট্রেনটি খুন-হো রেলপথ দিয়ে যায়। হো খৌ পেই স্টেশনে পরিবর্তনের পর শতাধিক বছর পর তিয়েন-ভিয়েতনাম মিটারগেজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। কন্টেইনারগুলো ভিয়েতনামের হ্যানয় ও হাইফং বন্দর পর্যন্ত পাঠানোর পর নৌপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোতে পাঠানো হয়। ইয়ুননান রেলপথ জাদুঘরের প্রধান লি জি মিং বলেছেন, আমাদের শতাধিক বছরের মিটারগেজ এখনও তার কাজ করে যাচ্ছে। অব্যাহতভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,

সম্প্রতি আমরা ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক পরিবহনের কাজ করছি। দু'পক্ষের মালামাল পরিবহণ করা হচ্ছে। বিনিময় হচ্ছে। এক্ষেত্রে কিছু কাজে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পুরনো রেলপথ অনেক ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং আমার মনে হয়, এই রেলপথ অব্যাহতভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' এবং নতুন সিল্ক রোড ধারণা বাস্তবায়ন এবং আমাদের ইয়ুননানের বিশ্বমুখীতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নতুন খুন-হো রেলপথ চীনের খুনমিং থেকে ভিয়েতনামের হ্যানয়, হাইফং বন্দর পর্যন্ত গেছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার পণ্য স্থানান্তরের প্রক্রিয়া গড়ে উঠেছে। ফলে ইতিহাসকে ধারণ করে শতাধিক বছরের পুরানো মিটারগেজ 'এক অঞ্চল, এক পথ' ধারণা বাস্তবায়নের উজ্জ্বল দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

(প্রেমা/তৌহিদ)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040