Web bengali.cri.cn   
ট্যাক্সি চালক হয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করছেন ভারতীয় নারীরা
  2015-09-18 15:15:41  cri

ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান খুব মজবুত নয়। তারা অনেকটাই অন্তর্মুখী ও নম্র, পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণের পর বাইরে চাকরি করা নারীর সংখ্যাও খুব কম। সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় চেন্নাইয়ে এক দল নারী একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা ওই অঞ্চলের প্রচলিত নারী চরিত্র থেকে একেবারেই ভিন্ন ধরনের। সেটা হলো নারী ট্যাক্সি চালক। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্বেও এই গ্রুপটি এখন ধীরে ধীরে উন্নত ও বড় হয়ে উঠছে।

চেন্নাই বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এটি তামিলনাডু প্রদেশের রাজধানী। পাশাপাশি ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। সেখানকার জনসংখ্যা ৪৩ লাখেরও বেশি। পুরুষ ও নারীর অনুপাত প্রায় সমান সমান। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ অনুপাতের ভারসাম্য ভারতে খুব কম দেখা যায়। তবুও ভারতের পুরুষশাসিত ঐতিহ্যের কারণে শহরটির অনেক কাজেই নারীদের কোনো সুযোগ নেই। সেরকম একটি কাজ ট্যাক্সি ড্রাইভ করা।

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে চেন্নাইয়ে মোট ৭৫ হাজার পুরুষ গাড়িচালক আছে। কিন্তু নারী চালকের সংখ্যা মাত্র ২ থেকে ৩শ'। এসব নারী ট্যাক্সিচালকরা বিভিন্ন কারণে এ কাজে এসেছেন। এক্ষেত্রে নারী গাড়িচালকদের অবস্থা কেমন? একটি গাড়ি কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঐশ্বরিয়া বলেন,

বেশিরভাগ নারী ট্যাক্সি চালক হলেন অবিবাহিত মা। তারা নিজেরাই পুরো পরিবারের চাপ বহন করে। সুতরাং তাদের বাচ্চা বড় করতে, লেখাপড়ার খরচ যোগাতে এবং কিছু স্থাবর সম্পত্তির অধিকারী হতে এ কাজ তাদের সহায়ক।

অন্য এক নারী, তিনি ট্যাক্সি চালাচ্ছেন ৬ বছর। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি এককভাবে তিনটি বাচ্চা লালন পালন করছেন। কিন্তু কষ্টের কাছে হার মানেননি তিনি। তিনি বলেন,

প্রথম দিকে আমি একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। সেখানে আমার বেতন ২ মার্কিন ডলারও ছিলনা। এ অর্থ আমার বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য কোন জিনিসপত্র কেনা যায় না। মাঝেমাঝে পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহ করা যায়নি। তাই আমার বন্ধু আমাকে ট্যাক্সি চালক হওয়ার প্রস্তাব দেন। হয়তো এতে আমার আয় বেড়ে যাবে। তাই আমি ট্যাক্সি চালক হবার সিদ্ধান্ত নেই। এখন আমি বাচ্চাদের বলি, তারা লেখাপড়া করতে চাইলে আমি সমর্থন করবো। আমি এখন নিজেই বাচ্চাদের লালন-পালন করার সামর্থ্য রাখি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে যৌন হয়রানি বেড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে শহরে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। এতে ভারতের নারীরা বাইরে যেতে খুব ভয় পায়। কিন্তু নারী ট্যাক্সিচালক থাকলে নারীযাত্রীরা ভয় পান না। অন্যদিকে নারী যাত্রীর প্রতি পুরুষ চালকের উপদ্রবও কমে যায়। একজন নারী যাত্রী বলেন,

পুরুষ চালকের তুলনায় আমার মতো আইটি কোম্পানিতে চাকরি করা অথবা কমবয়সী মেয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর জন্য নারী ট্যাক্সিচালক অনেক নিরাপদ।

এসব নারী চালকদের মধ্যে দেখা যায়, জীবনযাপনের মান উন্নত করার অদম্য মনোভাব এবং দৃঢ় প্রত্যয়। যদিও বিভিন্ন ধরনের সংকট রয়েছে, তবুও তারা কষ্টার্জিত চাকরির প্রতি আন্তরিক থেকে লিঙ্গ বৈষম্য ও সামাজিক অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040