Web bengali.cri.cn   
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
  2015-09-14 14:14:59  cri


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতি মনোযোগ থাকে সারা বিশ্বের, তাইনা? আগামী বছর অর্থাত ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আমরা সবাই জানি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পর পর একবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক প্রার্থী নির্বাচন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে দলগুলোর প্রতিনিধি সম্মেলন ও চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন, নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার দেশের ভোটারদের সরাসরি ভোটে ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচন এবং ইলেকটোরাল ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, নিঃসন্দেহে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বহু টাকার প্রয়োজন।

বিভিন্ন সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, গত মেয়াদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য ৫.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয় এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।

এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাবস্থার অবসান হয়নি, বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থাও ভালো না-শ্রোতারা নিশ্চয়ই সেকথা জানেন।

তবে যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থা বর্তমানে ততটা ভালো নয় এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও হয় নি, তারপরও নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দল যে এত বেশি অর্থ সংগ্রহ করছে, তা সত্যি সহজ ব্যাপার নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর রিপ্রেজেনটেটিভ পলিটিক্স-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মহল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। যত বেশি অর্থ তারা সংগ্রহ করতে পারে, তত বেশি ব্যয় করতে পারে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যয় ২০১২ সালের ব্যয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তবে একটি ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের সন্দেহ বেড়ে যাচ্ছে। সেটি হলো নির্বাচনী চাঁদা কোথা থেকে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ব্যবস্থার কারণে জনগণ নিজের দেওয়া কর কোথায় ব্যয় হচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে খুব আগ্রহী। মনে হয় এ ব্যাপারে মার্কিন নাগরিকরা বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছেন। তারা মনে করেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অর্থের মধ্যে নিজের দেওয়া কর আছে, তাই তাদের জানার অধিকার আছে।

এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আরও এক বছর বাকি। অনুমান করা যায়, আগামী দিনগুলোতে আরও তুমুল লড়াই হবে। নির্বাচনে জয়লাভের জন্য দলগুলো নিশ্চয়ই আরও বেশি টাকা ব্যয় করবে।

সেটাতো নিশ্চয়ই করবে। নির্বাচনে এত বেশি খরচ হচ্ছে। জনগণ এটা পছন্দ করবে কিনা সেটা সত্যি একটা প্রশ্ন।

এটা সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তাহলে এখন আমরা ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েকজন প্রার্থীর কথা নিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করবো।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করলে হিলারি ক্লিন্টনের কথা বলতেই হয়। জনগণ প্রথমে হিলারির নাম জানতে পায় তার স্বামী বিল ক্লিন্টনের মাধ্যমে।

বিল ক্লিন্টন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আসলে এবার হিলারির প্রথমবারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া নয়। ২০০৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীতার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন, তবে অবশেষে বারাক ওবামার কাছে লড়াইয়ে তিনি হেরে যান।

বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর হিলারিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। এর ফলে হিলারিও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের তৃতীয় নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। আর চলতি বছরের ১২ এপ্রিল হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।

আসলে অনেকের মতে হিলারি খুব বিতর্কিত একজন রাজনীতিক। অবশ্য তার ও তার স্বামী বিল ক্লিন্টনের বার্ষিক আয় নিয়ে অনেকের তর্কবিতর্ক আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলে সবাইকে নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিগত আয়ের তথ্য জমা দিতে হয়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ব্যক্তিগত আর্থিক প্রতিবেদনে হিলারি ক্লিনটন জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল থেকে শতাধিক ভাষণ দিয়ে আড়াই কোটি ডলারেরও বেশি আয় করেছেন হিলারি ও বিল ক্লিনটন।

এবার আমরা হিলারি ও অন্য একজন প্রার্থীর কথা নিয়ে বলি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সামনে এই মুহূর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জ তার রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ নয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, হিলারিকে এখন তার দলের সমর্থন আদায়ের জন্য লড়তে হচ্ছে এমন একজনের সঙ্গে, যিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য নন। এমনকি তাকে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিকও বলা যায় না। তিনি হলেন ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত, মার্কিন সিনেটের একমাত্র স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি মার্কিন কংগ্রেসের একমাত্র স্বঘোষিত 'সমাজতন্ত্রী'। হিলারির মতো তিনিও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থিতার জন্য লড়ছেন।

ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারের নেওয়া একটি সাম্প্রতিক জনমত গণনায় দেখা যাচ্ছে, হিলারি ও বার্নি স্যান্ডার্সের প্রায় সমান জনসমর্থন রয়েছে। এই গণনা অনুসারে সার্বিকভাবে স্যান্ডার্সের তুলনায় হিলারি মাত্র ৬ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন, যা পরিসংখ্যানগতভাবে 'টাই' বা সমসংখ্যক। একই জনমত অনুসারে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের ভোটারদের কাছে স্যান্ডার্স এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী। হিলারির পক্ষে সেখানে জনসমর্থন ৫৪ শতাংশ, বার্নি স্যান্ডার্সের ৫৯ শতাংশ।

কিন্তু হিলারি ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তথ্যমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন তার খবর বের হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব তাকে অনেক বেশি জানে। বেশি জানলে তার সমর্থন হার নিশ্চয়ই বেশি হয়, তাইনা?

জনগণের উপলব্ধি বাড়া এবং সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে তথ্যমাধ্যম নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমরা যদি প্রতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, আমরা দেখতে পাই, যে প্রার্থী জনগণের মধ্যে বেশি গ্রহণযোগ্য, তিনি অবশেষে নির্বাচনে জয়ী হন। কারণ, জনগণই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবেন। তাই না?

গণতন্ত্রে জনগণের পছন্দই হলো শেষ কথা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040