0831huanqiu
|
আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হলো বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কেএইউএসটি)। সৌদি আরবের মক্কা প্রদেশের থুওয়ালে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।
৭ বছর আগে ২ কোটি জনসংখ্যার সৌদি আরবে শুধু মাত্র ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। বিজ্ঞান গবেষণার বাজেট ছিলো দেশের জিডিপির ০.২৫ শতাংশ। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটিতে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকে দেশের শিক্ষার মান অনেক বেড়েছে। আর শিক্ষার বাজেট আগের তিনগুণ হয়েছে, মানে প্রতি বছরে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয় শিক্ষার ক্ষেত্রে। আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ২০০৮ সালে দেশটিতে একটি পাশ্চাত্য ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যাতে ছেলেমেয়েরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেন। এ ধারণা থেকেই ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কেএইউএসটি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কেএইউএসটি'র ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রত্যেক শিক্ষার্থী জীবনযাপনের জন্য ভর্তুকি পান। মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ২০ হাজার মার্কিন ডলার ভর্তুকি পান, ডক্টরেট পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভর্তুকি পান। এর সাথে সাথে শিক্ষার সব ফি, থাকার সব ফি মওকুফ হয়, বিশ্ববিদ্যালয় বিনা খরচে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে চিকিত্সার বীমাও প্রদান করে।
চীনের একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিককে জানান, কেএইউএসটি'র জীবনযাপন ব্যবস্থা সত্যি অনেক সন্তোষজনক। অবিবাহিত শিক্ষার্থী ২ বা ৩ তলার ভিলায় বা বাড়িতে থাকেন। প্রথম তলা হলো বৈঠকখানা ও রান্নাঘর। দ্বিতীয় তলা হলো দুই শয়নকক্ষ। তৃতীয় তলা হলো একটি অতি বড় শয়নকক্ষ। ঘরে রেফ্রিজারেটর, কাপড় ধোয়ার যন্ত্র, ওভেনস সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র আছে। যদি শিক্ষার্থী নিজের পরিবারের সদস্যকে নিয়ে লেখাপড়া করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জন্য বিশেষ করে একটি ভিলা বরাদ্দ দেয়।
আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যকে একটি ভালো বেতনের চাকরিও দেয়। যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো চিন্তা করতে না হয়। কেএইউএসটিতে প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুলও আছে। যাতে শিক্ষার্থীর কোনো শিশু থাকলে তারা সেখানে ভর্তি হতে পারে।
আপনারা হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে হয়তো খাবার ছাড়া আর কোনো খরচ হবে না। তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের দাম বেশি কি না? যেমন স্কুলের ডাইনিং হলে সেট মিল আছে, এতে মিষ্টি কেক, জুস সবই আছে, এর দাম শুধু মাত্র ৪ ডলার। তাই বলা যায়, কেএইউএসটিতে লেখাপড়া করা মানেই পয়সাকড়ি রোজগার করা। শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য কোনো চিন্তা করার দরকার নেই, তাই তারা সব শক্তি দিয়ে লেখাপড়া এবং গবেষণা করতে পারেন।
এখন আমি আপনাদের জানিয়ে দেবো কিভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। আসলে আবেদনের প্রক্রিয়া ইউরোপ ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই। আইইএলটিএস পরীক্ষার ফলাফল ৬.০ অথবা টোফেল পরীক্ষার ফলাফল ৭৯ হতে হয়। কেএইউএসটি'র ওয়েবসাইটে আবেদন ফর্ম সম্পন্ন করতে হয় এবং ইংরেজি পরীক্ষার ফলাফল ডাকের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। আবেদনের জন্য তিনটি সাক্ষাতকার দরকার হয়। প্রথম দুই বার হলো ফোন সাক্ষাতকার। চূড়ান্ত সাক্ষাতকার বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ফোনের মাধ্যমে আয়োজন করা যায়। যদি আবেদনকারী বিদেশে থাকেন, তাহলে ফোনে সাক্ষাতকার আয়োজন করা যায়।
বর্তমানে কেএইউএসটি'র বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান, তড়িত ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল, পরিবেশ বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। সবই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়। বর্তমানে শুধু মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
কেএইউএসটি প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ থেকে ২০ জন অধ্যাপক সংগ্রহ করে। তারা সবাই নিজের গবেষণা ক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণির সেরা বিশেষজ্ঞ।
হ্যাঁ, কেএইউএসটি শিক্ষার্থীদের খুব ভালো সুযোগ সুবিধা প্রদান করে এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায়। তবে লেখাপড়ার জন্য তারা কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। চীনের ছাত্রী কুয়ান ছিং বলেন, ক্লাসের আগে আমাদের উচিত শিক্ষকের নির্ধারিত বই পড়া, ক্লাসে সবার সঙ্গে বই পড়ার অনুভূতি শেয়ার করা। মাঝে মাঝে শিক্ষক ক্লাস পরীক্ষা নেন, একটি বিষয়ের সব ক্লাস শেষে পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা দাখিল করতে হয়।
যদিও ক্লাস ততটা বেশি নয়, তবে বহু সময় দিয়ে বই পড়তে, ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকতে হয় পড়ার জন্য। ক্লাস সম্পন্ন করার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস শেষ হওয়ার পরই গবেষণাগারে যান। সাপ্তাহিক ছুটিতেও বিশ্রাম নিতে পারেন না। যদিও কেএইউএসটির জীবনযাপন অনেক সৌখিন, তবে তা উপভোগ করার সময় অনেক কম।
এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করার পর শিক্ষার্থীদের চাকরির পথ অনেক সুষ্ঠু হয়। কেউ কেউ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বা কেমব্রিজে আরো লেখাপড়া করেন, কেউ কেউ কেএইউএসটিতেই থেকে যান।
সৌদি আরবে কেএইউএসটির খ্যাতি ব্যাপক। প্রতি বছর বিশ্বের ৫'শ সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি এবং সৌদি আরবের নিজস্ব কোম্পানি এমনকি বিখ্যাত তেল কোম্পানি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নতুন কর্মী খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। বলা যায়,এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের ভবিষ্যত্ সত্যি অনেক উজ্জ্বল।
'দৃষ্টির সীমানায়' পরিবেশনায় শুয়েইফেইফেই ও এনামুল হক টুটুল ।