Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের মেধাবী মানুষদের আইকিউ এবং তাদের জীবন
  2015-08-24 14:26:46  cri


অনেকের মতে, মেধাবী হওয়াটা খুব গর্বের ব্যাপার, তাহলে দুনিয়ায় সব কাজ নিশ্চয়ই অনেক সহজ হবে।

তবে মেধাবী মানুষদের নিজের বিরক্তি বা মাথাব্যথার বিষয় বা কাজ আছে। ঠিক যেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথার মত, 'মেধাবী মানুষের আনন্দ, আমার জানা মতে সবচেয়ে দুর্লভ জিনিস'।

প্রথমে আমরা আপনাদের আইকিউ অর্থাত্ তাত্ক্ষণিক বুদ্ধির কয়েকটি গ্রেড বা স্তর নিয়ে একটু ব্যাখ্যা করবো। বহু বছরের আইকিউ গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রায় অর্ধেক লোকের আইকিউ ৯০ থেকে ১১০-এর মধ্যে। তাই এ সংখ্যাকে স্বাভাবিক পর্যায় হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আর যদি আপনার আইকিউ'র সংখ্যা ১৩০-এর চেয়েও বেশি হয়, তাহলে আপনাকে একজন খুব বুদ্ধিমান মানুষ বলা যায়।তবে বিশ্বের শুধু মাত্র ২.৫ শতাংশ মানুষের আইকিউ'র সংখ্যা ১৩০-এর উপরে। আর যদি আপনার আইকিউ'র সংখ্যা ১৪০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে তো অভিনন্দন আপনাকে। কেননা তখন আপনি রীতিমত একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বিশ্বে এই ধরনের মেধাবীর সংখ্যা মাত্র ০.৫ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট তথ্য জানার পর এখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী কয়েকজন ব্যক্তির কথা নিয়ে কিছু আলোচনা করতে পারি, তাইনা?

এক্ষেত্রে প্রথমেই যার নাম বলবো তার নাম থাও চে সুয়ান, তার বয়স ৩৭ বছর।তিনি হলেন চীনা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান। তার আইকিউ'র সংখ্যা ২৩০, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী দশ জনের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছেন।

তার বাবা শাংহাইবাসী, আর তার মা কুয়াং তুংবাসী। দু'জনেই হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকধারী। থাও চে সুয়ানের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই অঙ্গভঙ্গি ও ভাষার ক্ষেত্রে তার সহজাত প্রতিভা বোঝা যায়।

তাকে নিয়ে একটি ছোট গল্প আছে এবং তা থেকেই বোঝা যায় তার সহজাত প্রতিভা কত উচ্চমানের। একবার তার পরিবার একটি পার্টি আয়োজন করে এবং এতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু অনেকেই অংশগ্রহণ করেন, এ ছাড়াও অনেক ছোট শিশুও তাদের বাবা মার সঙ্গে এ পার্টিতে আসে। তখন থাও-এর বয়স মাত্র ২ বছর, তবে সে পার্টিতে থাও ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে ধারণা এবং ইংরেজি ভাষা শেখায়, সবাই ওর এই গুণ দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যান এবং থাওকে বিশেষ প্রশংসা করেন।

তাই সাড়ে তিন বছরে বাবা মা থাওকে একটি প্রাইভেট প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করেন। যদিও ছোট থাও অনেক মেধাবী, তবে নিজের চেয়ে বয়সে বড় এমন ছেলের সঙ্গে কিভাবে একসাথে চলতে হয় তা সে জানে না। তাই ছোট থাও স্কুলে অনেক একাকীত্ব বোধ করে এবং এতে তার মানসিক অবস্থাও ভালো থাকে না। খুব ভাগ্যের বিষয় হলো পরে থাও-এর বাবা মা এ সমস্যা আবিষ্কার করেন এবং থাওকে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে থাও সমবয়সী ছোট শিশুর সঙ্গে থাকতে পারে এবং মানসিক অবস্থাও অনেক ভালো হয়ে যায়।

আসলে যারা মেধাবী, তাদের মধ্যে অনেকেই অন্যের সঙ্গে বা স্বাভাবিক স্কুল জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে অনেক অসুবিধা বোধ করেন।

একটি পরিসংখ্যান আছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলের শিশুর মধ্যে যাদের আইকিউ ১৪৫-এর বেশি, তাদের সংখ্যা ১ হাজার জনের মধ্যে একজন। তবে তাদের মধ্যে ৫ শতাংশই স্কুল থেকে সরে গেছে। আসলে যারা খুব মেধাবী এবং আইকিউ অনেক উঁচু, তারা আরো আগেই এবং আরো সহজেই জীবনের নেতিবাচক উপাদান খুঁজে বের করতে পারেন। এ জন্য তারা সবসময় উদগ্রীব হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞের ধারণায়, সহজেই উদগ্রীব হয়ে পড়া মেধাবীরা অতীত এবং ভবিষ্যতের কাজ নিয়ে বেশি চিন্তা করেন এবং খুব সহজেই সবচেয়ে মন্দা এবং সবচেয়ে নেতিবাচক দিক নিয়ে চিন্তা করেন। তাই তাদের উদ্বেগ আরো জোরদার হয়। বিশেষ করে যারা ভাষার দিকে বেশি মেধাবী, তাদের উদ্বেগ আরো বেশি। আরো চরম গবেষণা থেকে জানা গেছে, উচ্চ আইকিউ মানসিক রোগের সঙ্গে জড়িত।

ব্রিটেনের মনস্তত্ত্ববিদ ফিলিক্স আধুনিক মনো-স্নায়ু রোগের গবেষণা পদ্ধতি দিয়ে ইতিহাসের ৩শো বিখ্যাত ব্যক্তিদের গবেষণা করার পর বলেন, রাজনীতিকের মধ্যে ১৭ শতাংশ মানুষেরই মনো-স্নায়ু রোগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন হিটলার, লিঙ্কন, নেপোলিয়ান।

মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সম্প্রতি ব্রিটেনের 'ফিনান্সিয়াল টাইমস'র এক বিশেষ সাক্ষাতকারে বলেন, তিনি আগে ভাবতেন যে, শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের নিয়োগে তাদের আইকিউকে ভিত্তি করতে হয়। যে মানুষ সবচেয়ে মেধাবী, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, তাকে প্রথম শ্রেণীর পদে নিযুক্ত করতে হয়। তবে কোম্পানিটি পরিচালনার কয়েক বছর পর তিনি আবিষ্কার করেন, তার এমন চিন্তাভাবনা একদম ঠিক নয়। তা খুব বড় একটি ভুল। যদি এমন চিন্তাধারা আর পরিবর্তন না করেন, তাহলে মাইক্রোসফ্ট নিশ্চয়ই ব্যর্থ হবে। গেটসের কথা হলো, শিল্প প্রতিষ্ঠানে মেধাবী মানুষ হয়তো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক উপযোগী, তবে তারা পরিচালনার ক্ষেত্রে ততটা উপযোগী হতে পারেন না। আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় ব্যবসার উঠা-নামা একটি বিষয় প্রমাণ করেছে, আর তা হলো, যারা সবচেয়ে মেধাবী, তারা হয়তো চূড়ান্ত সফল নন। সফল হতে চাইলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য, বাস্তবায়নের সামর্থ্য এবং দলের প্রত্যেকের সঙ্গে সহযোগিতা করার সামর্থ্য সবই খুব প্রয়োজন।

একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীনের ৯০ শতাংশ শিল্পপতির মধ্যে শুধু ১০ শতাংশেরই আইকিউ অনেক উঁচু। আসলে একটি খুব নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, সবচেয়ে মেধাবী মানুষ সবসময় সবচেয়ে মেধাবী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তা হলো এসব প্রতিভাবান ব্যক্তিদের সফল হওয়ার পথের খুব বড় একটি বাধা। ন্যায়সঙ্গত এবং ভারসাম্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে সবসময়ই যে মেধার সম্পর্ক থাকবে তা নয়।

সবসময় যারা মেধাবী, তারা হয়তো সহজেই অন্যের ত্রুটি আবিষ্কার করতে পারেন, তবে নিজের ত্রুটি তারা সবসময় দেখতে পান না। তাই যদিও আমরা অধিকাংশ মানুষ ততটা মেধাবী নই, তবে যদি জীবনে বা কাজে আপনি সবসময় নিজের সামর্থ্যকে চর্চা করেন, সবসময় অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শেখেন, তাহলে নিশ্চয়ই সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

'দৃষ্টির সীমানায়' পরিবেশনায় শুয়েইফেইফেই ও এনামুল হক টুটুল।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040