Web bengali.cri.cn   
শিশুদের রক্ষায় বিভিন্ন দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা
  2015-08-10 19:09:06  cri


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুদের নিয়ে নানান দুর্ঘটনা ঘটছে। শিশু পাচার, নির্যাতন, নিষ্ঠুর ব্যবহার, যৌন হয়রানি, প্রাণহানি ইত্যাদি ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা এসব দুর্ঘটনার বিষয় জানতে পারি।

আরো করুণ বিষয় হলো, শিশুদের এমন দুর্ঘটনা ঘটার পর সবার নিন্দা ও সমবেদনা ছাড়া বর্তমানে খুব কার্যকর ব্যবস্থা তেমন নেই। আমরা জানতে চাই, কেন শিশুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটা দুর্বল?

কিছু কিছু দেশ অবশ্য ইতোমধ্যেই শিশুকে রক্ষার সুসংহত ব্যবস্থা গঠন করেছে। সরকার, শিক্ষা সংস্থা, কমিউনিটি ও পরিবার বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নিরাপত্তা রক্ষার একটি কঠোর ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে।

আমরা তা থেকে অনেক শিখতে পারবো বলে আশা করি।

প্রথমেই আপনাদের কয়েকটি মামলার বিষয়ে জানাবো।

১৯৭২ সালে ব্রিটেনে কেফেট নামে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ঘাতককে ধরতে অন্য তিনজন নিরীহ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তাদের খুব কঠোর কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে এ মামলাকে অবিচার হিসেবে প্রমাণ করা হয়। গোটা সমাজ এর জন্য বিস্ময় প্রকাশ করে এবং আত্মজিজ্ঞাসা করে। ঠিক এ অবিচারের মাধ্যমে ব্রিটেন ১৯৮৪ সালে 'পুলিশ ও ফৌজদারি সাক্ষ্য আইন' প্রণয়ন করে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসার ব্যবস্থা গঠন করে। ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্দেহভাজনের বৈধ অধিকার নিশ্চিত হয়।

১৯৯৪ সালে মার্কিন নাগরিক মেলে মেগেন যৌন হামলার শিকার হয় এবং নিহত হয়। ঠিক এ দুর্ঘটনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য 'মেগেন' আইন প্রণয়ন করে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের অধিকার রক্ষা আরো জোরদার হয়। ১৯৯৭ সালে জাপানের কোপে শহরে দু'জন শিশুকে হত্যা করা হয় এবং ঘাতক শিশু দু'টির মৃতদেহকে ভাগ করে ফেলে। এ নিষ্ঠুর ঘটনার কারণে জাপানের 'যুবক আইনে' সংশোধন আনা হয় ।

আপনারা কি জানেন, এমন একটি চিন্তাধারা আছে যে, যদি কোনো অপ্রাপ্তবয়স্কের বাবা-মা না থাকে অথবা বাবা-মা ছেলেমেয়েকে লালন-পালন করতে সক্ষম নন, তাহলে দেশকে বাবা মা'র দায়িত্ব পালন করে এসব ছেলেমেয়েদের জীবন নিশ্চিত করতে হবে। বলা যায়, এসব আইনের প্রণয়ন ও সুসংহতকরণ ঠিক এমন চিন্তাধারার প্রতিফলন।

পাশ্চাত্য দেশের কিছু কিছু দেশে শিশুদের রক্ষায় 'দেশ বাবা-মা'-এমন নীতি স্থাপিত হয়। তার মানে দেশ হলো শিশুর চূড়ান্ত অভিভাবক। শিশুকে রক্ষা করার প্রথম দায়িত্বশীল পক্ষ হলো সরকার। শিশু রক্ষা ব্যবস্থা গঠনে সরকারের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন চিন্তাধারা অনুযায়ী, সরকারের উচিত শিশু রক্ষা আইনের প্রণয়ন ত্বরান্বিত করা, শিশু রক্ষা আইনের জনপ্রিয়করণ সম্প্রসারণ করা, শিশু রক্ষায় আরো বেশি বরাদ্দ করা, শিশু কল্যাণ ব্যবস্থা সুসংহত করা, সক্রিয়ভাবে শিশু কল্যাণ সংস্থা নির্মাণ করা, যখন বাবা-মা শিশুকে লালনের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তখন এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া।

আমরা এখন জার্মানির দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। জার্মানির আইনে বলা হয়েছে, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুকে একা বাসায় রাখা নিষিদ্ধ। জার্মানরা মনে করেন, ছোট শিশুকে লম্বা সময় ধরে একা বাসায় রাখা খুব বিপজ্জনক।

যদি এ শিশু যথেষ্ট ভাগ্যবান হয় তাহলে তার কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না, তবে একা বাসায় থাকা তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই যদি সরকার এমন অবস্থা দেখে হয়তো বাবা-মা'র অভিভাবকের দায়িত্ব বঞ্চিত করবে। আরো গুরুতর হলে বাবা-মা এর জন্য আইনগত শাস্তি পাবেন। বাবা-মা অভিভাবকের অধিকার হারালে সরকার তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে শিশু কল্যাণ সংস্থায় দেবে।

জার্মানিতে ১ কোটিরও বেশি ১৫ বছর বয়সের নিচের শিশু আছে যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ। শিশু ও যুবকের নিরাপত্তা রক্ষা করা সবসময় জার্মানির ফেডারেল সরকারের শীর্ষ কর্তব্য। জার্মানদের মতে, শিশুকে রক্ষা করা প্রত্যেকেরই অভিন্ন দায়িত্ব। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে সংশোধিত 'জার্মানির ফেডারেল শিশু রক্ষা আইন' কার্যকর হয়। এতে আরো সার্বিকভাবে এবং আরো ভালোভাবে শিশুদের রক্ষা করার মৌলিক দাবি বর্ণনা করা হয়।

'পূর্ব সাহায্য' হলো জার্মান ফেডারেল সরকারের শিশু ও যুবক নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার বাবা-মা এবং ০ থেকে ৩ বছর বয়সের ছোট শিশুকে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে নতুন বাবা-মাকে শিশু লালনের সামর্থ্য শেখায়। যাতে নতুন জন্ম নেওয়া শিশু স্বাস্থ্যের সঙ্গে বড় হতে পারে।

জার্মানির ফেডারেল পরিবার মন্ত্রণালয় জানায়, একটি শিশুর জন্ম পুরো পরিবারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যখন একটি পরিবারের শিশুকে লালন বা শিশুকে স্কুলে ভর্তি করার সামর্থ্য নেই, তখন সরকারকে এমন পরিবারকে সাহায্য দিতে হবে। এর জন্য জার্মান সরকার একটি পূর্ব সাহায্যের নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। এতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, স্কুল, হাসপাতাল, ক্লিনিকের ডাক্তার ও পুলিশ, বলা যায়, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শক্তি এতে অংশ নেয়।

যদি আমরা বলি, পূর্ব সাহায্যের মত কল্যাণমূলক ব্যবস্থা জার্মানির শিশুর বড় হওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। তাহলে বাইরের হামলা বা ক্ষতি প্রতিরোধ করতে জার্মানির সরকার ও শিশু রক্ষা সংস্থাও শিশুদের জন্য একটি নিরাপত্তা নেট তৈরি করেছে।

প্রথমত, শিশুর সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহার, যৌন হামলাসহ সহিংস হামলার ওপর কঠোর আঘাত হানে জার্মান সরকার। জার্মান পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে জার্মানিতে ১০৮ জন শিশু সহিংসতায় নিহত হয়েছে, ৪২০৪ জন শিশু নিষ্ঠুর ব্যবহারের শিকার হয়েছে। বাসায় নিষ্ঠুর ব্যবহার পাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাসের শুরুতেই জার্মানির আদালত ৩৭ বছর বয়সী একজন পুরুষকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেন। কারণ তিনি অনেক বার গুঁড়ো সাবান ও জীবাণুনাশক দিয়ে তার ৮ মাস বয়সী মেয়েকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। ভাগ্যের বিষয় হলো এ মেয়েটি বেঁচে আছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশের কিছু এনজিও অর্থাত্ বেসরকারি সংস্থা শিশু রক্ষায় আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ট্রাস্ট তহবিল থেকে শিশু কল্যাণ ইউনিয়ন পর্যন্ত, অনেক এনজিও সংস্থা কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শিশু অধিকার রক্ষা সংস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শিশু কল্যাণ ইউনিয়নের দেশের ৫০টি রাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটনে ৭০০ টিরও বেশি কার্যালয় আছে। এসব কার্যালয় শিশু এবং তার পরিবারকে অধিকার রক্ষার সেবা দেয়। এ ছাড়া সংস্থাটি সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি প্রণয়নে এবং সংশ্লিষ্ট কল্যাণমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে প্রচেষ্টা চালায়।

আমার দৃষ্টিতে শিশুকে রক্ষায় সরাসরি দায়িত্বশীল ব্যক্তি হলেন বাবা-মা এবং স্কুল। তাই আমরা বুঝতে পারি, শিশুকে রক্ষায় সমাজের বিভিন্ন পক্ষকে অংশ নিতে হবে। মোটকথা সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040