Web bengali.cri.cn   
প্রিয় শিশু, তোমাকে উদ্ধারে 'অ্যাম্বার অ্যালার্ট
  2015-08-10 18:47:53  cri


'গ্রীষ্মকালীন ছুটি' অথবা 'শীতকালীন ছুটি' শুরু-এ কথাটি শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় কথা বলে বিবেচনা করা যায়।

তবে এ বিষয়ে বাবা-মা অনেক সচেতন থাকতে হবে। ছুটি হলো ছোটবেলার বিশেষ অধিকার। খেলাধুলায় একদিকে যেমন প্রচুর আনন্দ আছে, অন্যদিকে তেমনি অনেক অদৃশ্য ঝুঁকিও রয়েছে। প্রাণঘাতী ঝুঁকি এক সেকেন্ডের মধ্যেই জীবনে বয়ে আনতে পারে ভীষণ বিপর্যয়।

এখান যারা রেডিও'র সামনে বসে আছেন তাদের জানাতে চাই, এমন একটি পরিসংখ্যান আছে, বাবা-মা'র দৃষ্টি থেকে শিশু পাচার হওয়া বা অপহৃত হওয়া এ পুরো অপরাধ সম্পন্ন করতে দশ মিনিটেরও কম সময় লাগে দুষ্কৃতিকারীদের। একটি শিশু পানিতে পড়ে প্রাণ হারাতে শুধু মাত্র পাঁচ মিনিট সময় প্রয়োজন। আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর নিহত হওয়া এক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটতে পারে।

আর স্কুলে সহিংসতা থাকতে পারে, ভয়ের কারণে হয়তো শিশু এমন সহিংসতা সহ্য করে কয়েক বছর ধরে। অসংখ্য শিশুর জীবনে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সমাজে শিশুকে রক্ষা করার চেতনাও অনেক বেড়েছে। যদিও আমরা স্বীকার করতে চাই না, তবে আমাদের সমাজ ঠিক এসব দুর্ঘটনার মাধ্যমে আরো সচেতন হয়ে উঠছে ।

যুক্তরাষ্ট্রে হারানো শিশু খুঁজে দিতে কাজ করছে 'ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লইটেড চিলড্রেন' নামের একটি সংস্থা। হারানো শিশু খোঁজার জন্য 'অ্যাম্বার অ্যালার্ট' নামে একটি সার্ভিস চালু রয়েছে।

'অ্যাম্বার অ্যালার্ট' হলো একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যেটি পরিচালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে। যারা হারানোদের খুঁজতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সম্প্রচার মাধ্যম এবং অন্যান্য দাতব্য সংস্থার সাহায্য নিয়ে থাকে।

'অ্যাম্বার অ্যালার্ট' সার্ভিস প্রথম চালু করা হয় ১৯৯৬ সালে। সে বছর অ্যাম্বার হ্যাগারম্যান নামে নয় বছরের একটি শিশুকে টেক্সাসের আরলিংটন এলাকা থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। অ্যাম্বারের নামেই এই সেবাটি চালু করা হয়।

অ্যাম্বার অপহরণ ও হত্যার পর তার পরিবার সেখানকার একটি স্থানীয় বেতার কেন্দ্রে শিশু অপহরণ নিয়ে জনগণকে সতর্ক করতে শুরু করে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে 'অ্যাম্বার অ্যালার্ট' জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে।

এখানে কিছু উদাহরণ আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যে ৭ বছর বয়সী এক শিশু অপহৃত হয়। অপহরণ ঘটার পর পরই 'অ্যাম্বার অ্যালার্ট' পাঠানো হয়েছে সবার মোবাইলফোনে। পরে কাছাকাছি এলাকায় থাকা এক কোম্পানির একজন কর্মী অ্যাম্বার অ্যালার্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অপহরণকারীর গাড়ি চিনতে পেরেছে। পরে তিনি পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছেন এবং এ ছোট ছেলেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ছেলেটি মুক্ত হওয়ার পর পরই অ্যাম্বার অ্যালার্ট বাতিল হয়, অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনাটি এক দিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে যায়।

এখানে আরেকটি উদাহরণ আছে, ২০১৩ সালের ৩১ আগস্ট মধ্য রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্যে সতর্কসঙ্কেতের সঙ্গে অনেক পরিবারের টিভি স্ক্রিন হঠাত্ কালো হয়ে যায় এবং স্ক্রিনে কিছু সাদা অক্ষর ভেসে ওঠে। তা হলো,২০০৩ সংস্করণের একটি সাদা 'শেভরন' ব্র্যান্ডের গাড়ি চুরি হয়েছে, গাড়িতে ১৭ মাস বয়সের এক ছোট শিশু আছে।

এর সঙ্গে সঙ্গে সবার মোবাইফোনেও এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা শুরু করেন।

তারা আবিষ্কার করেন যে, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি দোকানের সিসিটিভিতে কোনো সন্দেহভাজনের তথ্য নেই। পরের দিন সকাল সাড়ে আটটায় উত্তর ক্যারোলিনার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরি নামের একজন ছাত্রী ক্লাসরুমে যাওয়ার পর রাস্তার পাশে একটি গাড়িতে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। তিনি গাড়ির কাছে গিয়ে চেক করে দেখেন যে, গাড়িতে সত্যি একটি ছোট শিশু আছে। তখন তিনি মোবাইলফোনে অ্যাম্বার অ্যালার্টের তথ্য দেখে নিশ্চিত করেন, এ গাড়ি হলো গতকাল রাতে চুরি হওয়া সেই গাড়ি, তারপর পুলিশ এসে এ ছোট শিশুকে উদ্ধার করেন।

অ্যাম্বার অ্যালার্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে পুলিশ আরো তাড়াতাড়ি এবং আরো সহজেই নিখোঁজ বা অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করতে পারেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর ৯৫ শতাংশ হারানো শিশু অ্যাম্বার অ্যালার্টের মাধ্যমে উদ্ধার হয়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক হারানো মানুষদের খুঁজে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের খুঁজে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

যুক্তরাষ্ট্রের হারিয়ে যাওয়া শিশুদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য খুব দ্রুত ফেসবুক তার নিউজ ফিডে শেয়ার করবে। শিশুটি যে এলাকায় হারিয়েছে সেসব এলাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হারানো শিশুটি সম্পর্কে জানানো হবে। ফলে হারানো শিশু অনায়াসেই খুঁজে পাওয়া যাবে বলে দাবি করছে ফেসবুক।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪০ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। এসব ব্যবহারকারীদের মধ্যে কারো শিশু হারিয়ে গেলে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুকের 'ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি' ম্যানেজার এমিলি ভ্যাচার বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হলো, শিশুটি যে এলাকায় হারিয়েছে ওই এলাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিডে নিখোঁজ শিশুর ছবিসহ অন্যান্য তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া। এভাবে আমরা হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খুঁজতে আমাদের সেরাটা দিয়ে কাজ করতে চাই'।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যার্টনি জেনারেল এরিক হোল্ডার বলেন, 'ফেসবুকের মাধ্যমে অনায়াসেই সতর্ক বার্তা সবার কাছে পৌঁছে যাবে। এতে করে নাগরিকেরা সতর্ক হবে। ফলে শিশু অপহরণের মতো ঘটনা কমতে থাকবে'।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040