Web bengali.cri.cn   
চেহারা পরিবর্তনে প্লাস্টিক সার্জারির প্রভাব
  2015-07-27 18:22:06  cri

আমরা জানি, সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই দান করেছেন আমাদের শরীর, চেহারা । তবে বর্তমান সময়ে নিজের চেহারাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অনেকেই প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে আমরা ভাবি, আসলে চেহারার সৌন্দর্য বা চেহারাকে আকর্ষণীয় করার জন্য প্লাস্টিক সার্জারি কি সত্যিই প্রয়োজন? সত্যিই কি এর মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করা যায়?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে নানান 'রিয়ালিটি শো' দেখা যায়। আমরা জানতে চাই, এসব কি সত্যি সত্যিই আমাদের ইতিবাচক উত্সাহ দিতে পারে বা পারবে?

দৈনন্দিন জীবনের প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গায় আমরা নানান ধরনের প্লাস্টিক সার্জারির বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। এসব বিজ্ঞাপন আপনাকে সুন্দর জীবনের জন্য নিজেকে কিছু পরিবর্তন করার উত্সাহ দেয়। তবে এসব বিজ্ঞাপন আপনাকে জানাবে না যে, এর কারণে কিছু কিছু লোকের জীবনে অনেক দুর্যোগ তৈরি হয়েছে। আমরা 'রিয়ালিটি শো'তে দেখেছি একজন নারী প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নিজের চেহারাকে সুন্দর করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে আমরা জানতে পারিনা, ভবিষ্যতে তাদের জীবন সুখী হবে কি না। আমরা আরো জানতে পারিনা, যখন তার বয়স বেড়ে যাবেন তখন তার এ সৌন্দর্য বজায় থাকবে কি না।

এসব কাজের সমর্থকরা বলেন, যারা নিজের চেহারার জন্য হীনতায় ভোগেন, রিয়ালিটি শো তাদের নিজের জীবনকে পরিবর্তন করার সুযোগ দিয়েছে। বাহ্যিক পরিবর্তনের কারণে জীবন সম্বন্ধে তাদের ভাবনা আরো ইতিবাচক হয়েছে। আর এ কাজের যারা বিরোধী তাদের মতে, রিয়ালিটি শো'র মত বিনোদন অনুষ্ঠান লোকজনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গ্রাস করে। এমন অনুষ্ঠান লোকজনকে জানাতে চায়, চেহারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এবার আমরা জানতে চাই, রিয়ালিটি শোর উত্স আসলে কোন দেশ? এর উত্তর হলো যুক্তরাষ্ট্র। ২০০২ সালে এবিসি টিভি স্টেশন 'এক্সট্রিম মেকওভার' নামে একটি রিয়ালিটি শো প্রচার করে। অনুষ্ঠানের কর্মীরা ইচ্ছেমতো সাধারণ লোকজনদের বাছাই করেন। পরে হলিউডের প্রথম শ্রেণির রূপসজ্জাকারদল তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সাজিয়ে তোলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক সার্জারি, চুলের স্টাইল পরিবর্তন এবং কাপড়-চোপড়ের ডিজাইন ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর এসব সাধারণ লোকেরা যেন হলিউডের সুপার স্টারদের মতো ঝকঝকে এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন। অনুষ্ঠান প্রচারের পরপরই ১ কোটিরও বেশি দর্শক এতে ভীষণভাবে আকৃষ্ট হন।

এ অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন টিভি স্টেশন উপলব্ধি করে যে, দর্শকরা এমন অনুষ্ঠান দেখতে অনেক আগ্রহী। বিশেষ করে 'সাধারণ, অথবা দেখতে আকর্ষণীয় নয়' এমন মানুষ হঠাত্ করেই যেন কুত্সিত হাঁসের ছানা থেকে রাজহংসে পরিণত হয়েছে এমন গল্পকে দর্শকরা অনেক পছন্দ করেন। তারপর বিভিন্ন টিভি স্টেশন একই ধরনের টিভি অনুষ্ঠান তৈরি করতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পর আরেকটি প্লাস্টিক সার্জারির আলোচিত দেশ হলো দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে সুন্দর চেহারা পাওয়া একটি খুব সাধারণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যাপার। আর এমন পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশে 'লেট বিউটি' নামে একটি টিভি অনুষ্ঠান শুরু হয়।

২০১১ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত চার মৌসুম এ অনুষ্ঠানটি প্রচার হয়। অনুষ্ঠানটি নারীদের সুন্দর হওয়ার পুরো প্রক্রিয়া রেকর্ড করে দর্শকদের দেখায়। কিছু কিছু নারী রয়েছেন যারা আকর্ষণীয় না হওয়ার কারণে নিজের প্রতি এবং জীবন সম্বন্ধে আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এ অনুষ্ঠান এমন সব নারীকে বাছাই করে এবং প্লাস্টিক সার্জারি, শারীরিক চর্চা এবং ফ্যাশন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সুন্দরী ও আকর্ষণীয় হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে। এসব অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে অনেকে মডেল বা সুপার স্টারও হয়েছেন। এ অনুষ্ঠানের কারণে তাদের অতি সাধারণ জীবন এখন একেবারেই বদলে গেছে ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশগ্রহণকারী এসব অসুন্দর মেয়েরা কেঁদে কেঁদে দর্শকদের জানান, তারা নিজের চেহারার কারণে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আর অনুষ্ঠান শেষে দর্শকরা দেখতে পান, এসব মেয়ের জীবনে আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। অনুষ্ঠানের শেষে দেখা যায়, তারা এখন প্রেমিকের ভালোবাসা পাচ্ছেন এবং আকর্ষণীয় চাকরি পাচ্ছেন।

এমন অনুষ্ঠান দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারির বাজারও অনেক গরম হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের প্লাস্টিক সার্জারি কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক অস্ত্রোপচারের সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে। এ কমিশনের ২০০৪ সালে দেশটির ১ হাজার পরিবার নিয়ে করা একটি গণ জরিপ থেকে জানা যায়, ৩৯ শতাংশ নারী ও ২২ শতাংশ পুরুষ নিজের চেহারাকে সুন্দর করতে চান। তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ নারী ও ১০ শতাংশ পুরুষ আশা করেন, প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নিজের চেহারার আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার 'লেট বিউটি' অনুষ্ঠানের প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক ডাক্তার দলের একজন বিশেষজ্ঞ জানান, অনুষ্ঠান প্রচারের পর ২০১১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তার হাসপাতালে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ১৩৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এ সংখ্যা আরো ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

আসলে 'লেট বিউটি' অনুষ্ঠানের প্রভাব এখন চীনেও ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করা সবচেয়ে বেশি লোকজনের দেশে পরিণত হয়েছে।

তবে বাস্তবতা অনেক সময় স্বপ্ন পূরণে নিষ্ঠুরভাবে উপস্থিত হয়। চীনের সান সি প্রদেশের মেয়ে চিন, চিয়ে চিয়াং প্রদেশের মেয়ে বি ও সেন চেন শহরের মেয়ে ছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের প্লাস্টিক সার্জারি ব্যর্থ হওয়া এবং নিজেদের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে না পারার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এখন ক্রমাগতভাবে আরো বেশি লোক এমন রিয়ালিটি শো'র বিরুদ্ধে অভিযোগ করা শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাংবাদিক বলেন, টিভি স্টেশন এবং এমন অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীরা খুবই কিম্ভুতকিমাকার। প্লাস্টিক সার্জারি কি স্বর্গে পাওয়া সোনার চাবি? যদি আপনি হলিউড সুপার স্টার এর মতো হতে পারেন, তাহলে আপনি কি তার মতো সাফল্য অর্জন করতে পারবেন?

আসলে সুন্দর চেহারা, সৌন্দর্য লোকজনকে আকর্ষণ করে তা সত্যি। তার মানে এই নয় যে, সুন্দর চেহারাই সবকিছুই।

আসলে দৃঢ়তা ও ধৈর্য নিয়ে শরীর পরিচালনা করা, সামর্থ্য দিয়ে নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেষ্টা করা, সুন্দর গুণাবলী ও মিষ্টি হাসি নিয়ে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করা, আস্থার সাথে চাকরি করা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার মন শান্ত থাকে, নিজের প্রতি আস্থা থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে পারবেন। মোটকথা, আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার কর্মদক্ষতা, আপনার কাজই অন্যের কাছে আপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040