Web bengali.cri.cn   
চীন-কাজাখ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সমৃদ্ধ উন্নয়ন হচ্ছে
  2015-07-24 16:57:27  cri

সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ই লি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত জেলার খর্গাস ইউরেশীয় মহাদেশীয় সেতু চীনের সবচেয়ে পশ্চিমে এবং সিল্ক রোডের কেন্দ্রে অবস্থিত। এটা হচ্ছে চীন-কাজাখস্তান সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর, পাশাপাশি চীন-কাজাখ আন্তর্জাতিক সীমান্তপার সহযোগিতামূলক কেন্দ্রে চীনা অঞ্চলের একটি এলাকা।

চীন-কাজাখ খর্গাস আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহযোগিতামূলক কেন্দ্র হলো চীন ও কাজাখস্তানের কৌশলগত প্রকল্প এবং চীনের প্রথম সীমান্ত পারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অঞ্চল। পাশাপাশি সহযোগিতামূলক পুঁজি বিনিয়োগ কেন্দ্র।

'এক অঞ্চল, এক পথ' উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশ্বের প্রথম সৃজনশীল আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহযোগিতামূলক কেন্দ্রের জন্য কী ধরনের উন্নয়ন ডেকে আনবে? চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতা ওয়াং মেং জেন আপনাদের বিস্তারিতভাবে তা জানাচ্ছেন।

চীন-কাজাখ আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহযোগিতামূলক কেন্দ্র দু'দেশের সীমান্তে অবস্থিত। এ অঞ্চলের মোট আয়তন ৫.২৮ বর্গকিলোমিটার। ২০১২ সালে কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। কেন্দ্রে ব্যবসায়ীক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা চীন সরকারের সরবরাহ কর আদায় নীতির সুবিধা পায়। পাশাপাশি দু'টি দেশের অধিবাসীরা এই অঞ্চলে কেনাকাটা করলে, পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেক জন দিনে ৮ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি (চীনা পক্ষ) এবং ১ হাজার ৫শ' ইউরো (কাজাখ পক্ষ) পণ্য কেনাকাটা করলে শুল্ক-মুক্ত সুবিধা ভোগ করে। গত মে মাসের আগে কেন্দ্রে যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ২০ হাজার। যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ১৩৮ শতাংশ বেশি। অর্থনীতি বা পর্যটন শিল্প, যাই হোক না কেনো, খর্গাসের উন্নয়ন এতে স্পষ্ট বোঝা যায়।

একই সময় চীনের অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক বাণিজ্যের বৃদ্ধি ধীর হলেও তা খর্গাসের ওপর কোনো ঝুঁকি বয়ে আনেনি। এমন অবস্থায় বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে মালামাল পরিবহনের পরিমাণ ও কার্গোতে করে পণ্য পরিবহন গত বছরের এ সময়ের তুলনায় আলাদাভাবে ৬৬ গুণ ও ৯০ গুণ বেড়েছে। খর্গাস ব্যবসায়ী বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়ে ইয়োং লে বলেছেন, এ উন্নয়ন ও বৃদ্ধি গণ-পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়নের কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ই নিং'র বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। লিয়ান ইয়ুন কাং ও খর্গাসের মধ্যে এক্সপ্রেস সড়কপথ ২০১১ সালে চালু হয়েছে। অন্য একটি খর্গাস ও আলমাআতা সংযুক্ত করা এক্সপ্রেস সড়কপথের কাজ নিবিড়ভাবে চলছে। সড়কপথ নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর একটি এক্সপ্রেস সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। ফলে চীন, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করা হবে এবং চীনের অর্থনীতির জন্য নতুন প্রাণশক্তি যোগানোর পাশাপাশি নতুন বৃদ্ধি ডেকে আনবে।

খর্গাসের চমত্কার ভৌগোলিক পরিবেশ এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণের কারণে চিয়াং সু, শাংহাই ও ফু চিয়ানসহ বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

চিয়াং সু প্রদেশে একটি হোম টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক ছি সিং তাদের মধ্যে অন্যতম। তিন মাস আগে, নতুন শিল্প গড়ার জন্য তিনি খর্গাসে এসেছেন। 'এক অঞ্চল, এক পথ' পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে তিনি বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্র্যান্ড 'তি নুও' প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন, যদিও সীমান্ত বাণিজ্যের উপকারিতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, তবুও খর্গাসকে আরো তত্পর একটি সীমান্ত বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের নিরলস চেষ্টা দরকার। ছি সিং বলেন, এখন কাজাখস্তান থেকে আসা লোকদের সীমান্তে কমপক্ষে এক থেকে দু'ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর খর্গাসে প্রবেশ করতে পারে। আমার মনে হয়, বর্তমান শুল্ক-ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া অনেক জটিল। খর্গাস কর্তৃপক্ষ এটাকে আরো সরল করলে অনেক ভালো হয়।

কাজাখস্তান থেকে আসা মাহিরা আমর‌্যাভা এবং তাঁর চীনা ছেলে বন্ধু মা লোং সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রে চীনা অঞ্চলে একটি মুদিখানা খুলে প্রধানত কাজাখস্তানের বৈশিষ্ট্যময় মিছ্‌রি, মদ, তামাক এবং লাল চা বিক্রি করেন। সহযোগিতামূলক কেন্দ্রে দু'জনের ভালোবাসা ঠিক প্রথম দেখা থেকেই শুরু হয়। তখন মা লোং ছিলেন মাহিরা দোকানে একজন সাধারণ চীনা ক্রেতা। বর্তমানে তাদের সবসময় সীমান্ত পার হয়ে চীন-কাজাখস্তান দু'দেশে যাতায়াত করে মালামাল পরিবহণ করতে হয়। যদিও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে, তবুও দোকানের প্রত্যেক মাসের বিলের মুড়ি ৩ থেকে ৪ হাজার ইউয়ানের মতো হয়।

সীমান্তে বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক কেন্দ্রের কাজাখস্তান অঞ্চল নতুন করে তৈরি করায় অনেক কাজাখ ব্যবসায়ীকে বাধ্য হয়ে চীনা অঞ্চলের ই উ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হয়েছে। কেনো বলছি জানো ?

বর্তমানে শুল্ক বিভাগের প্রক্রিয়া সুবিধাজনক করার চেষ্টা চালাচ্ছে চীন সরকার। কাজাখ ব্যবসায়ীরা শুধু পাসপোর্ট নিয়ে সহযোগিতামূলক কেন্দ্রে ৩০ দিন থেকে যেতে পারেন। অন্যদিকে মাহিরা আমর‌্যাভা বলেছেন, বর্তমানে চীনা অঞ্চলে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, শুল্ক-ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা রয়েছে। ভাষাগত সমস্যার কারণে চীনা শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হয়।

বর্তমানে সীমান্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্রে কাজাখ অঞ্চলে বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, কাজ সম্পন্ন হলে তা আরো বেশি সীমান্তপার বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040