ডায়রিয়ার কারণ
খাবারের নানা ধরনের পানি বাহিত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণই হলো ডাইরিয়ার প্রধান কারণ। বড়দের ক্ষেত্রে সাধারণত বাইরের খোলা খাবার খেলে এবং দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া হয়। আর শিশুদের রোটা ভাইরাসের আক্রমণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
লক্ষণ
20150723ruby
|
১.২৪ ঘণ্টায় তিনবার বা এর বেশি পানিসহ পাতলা পায়খানা হওয়া
২. শরীর দুর্বল হওয়া
৩. খাওয়ায় রুচি কমে যাওয়া
৪. ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হয়। পরে অনেক ক্ষেত্রে বমি কমে যায়
৫. জ্বর এলেও খুব তীব্র হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীর হালকা গরম থাকে।
পাতলা পায়খানা যদি চালধোয়া পানির মতো হয়, তবে সেটা কলেরার লক্ষণ। এর সঙ্গে তলপেটে ব্যথা হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ঘন ঘন পায়খানায় যাওয়া এবং শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া এ রোগের মারাত্মক উপসর্গ। এই সময় তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডায়রিয়ায় চিকিত্সা:
ওষুধের পদ্ধতি: ডায়রিয়া হলে শরীরে লবণ-পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো খাওয়ার স্যালাইন। বড়দের ক্ষেত্রে চালের স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে।
নিয়মিত খাবার: অনেকে মনে করেন ডায়রিয়া হলে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে না, এটা ঠিক নয়। শুধু স্যালাইন খেতে একজন রোগীর কখনোই ভালো লাগতে পারে না। তাই রোগীর রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী খাবার খেতে দিতে হবে। স্বাভাবিক খাবার একটু নরম করে খাওয়ানো উচিত। এর পাশাপাশি ডাবের পানি ও যেকোনো ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। অল্প মাত্রায় ডায়রিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো উচিত নয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়:
১. মাঝেমধ্যেই নিজের রান্নাঘর, বাসনপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বাসনের ময়লা থেকে অনেক সময় ডায়ারিয়ার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য খাবার রান্না ও কাটাকাটির কাজে ব্যবহৃত সব সরঞ্জাম ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত্। পোকামাকড়, পোষা জীবজন্তু ও অন্যান্য প্রাণী থেকে রান্নাঘরের সরঞ্জাম নিরাপদ রাখুন।
২. খাবার তৈরির আগে এবং তৈরির সময় হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। টয়লেট ব্যবহারের পরে এবং পোষা জীবজন্তু ধরার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
৩. বাজার থেকে সবজি, ফল কিনে আনার পর সেগুলোকে ১ ও ২ ঘণ্টার মধ্যে প্যাকেট দিয়ে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেন। যত বেশি সময় বাইরে রাখবেন সবজি তত বেশি খারাপ হয়ে যাবে।
৪. রান্না করা খাবার থেকে কাঁচা খাবার দূরে রাখুন। কাঁচা মাংস, পোল্ট্রি ও কাঁচা মাছে নানা রোগজীবাণু থাকে, যা রান্নার মাধ্যমে দূর হয়। এগুলো কোনো অবস্থাতেই রান্না করা খাবারের কাছে রাখবেন না। ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হলে বাক্সে ভরে তা আলাদা করে রাখুন।
৫. ভালোভাবে রান্না করুন। মাছ-মাংস, ডিম কিংবা সামুদ্রিক খাবার, যাই রান্না করুন, তা যেন ভালোভাবে উপযুক্ত তাপমাত্রায় রান্না হয়, তা নিশ্চিত করুন। অনেকেই ফ্রিজ থেকে সরাসরি মাছ-মাংস বের করে গ্যাসে চাপিয়ে দেন। এক্ষেত্রে মাছ-মাংসের ভেতরের অংশে বরফ থাকতে পারে, যা রান্নাতেও দূর হবে না। এক্ষেত্রে কিছুটা কাঁচা খাবার রান্না করা মাংসে থাকতে পারে। তাই ফ্রিজ থেকে কয়েক ঘণ্টা আগে খাবার বের করে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে তারপর রান্না করুন।
৬. নিরাপদ তাপমাত্রায় খাবার রাখুন। কোনো খাবার দীর্ঘক্ষণ (দুই ঘণ্টার বেশি) রেখে দিতে হলে তা ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজের তাপমাত্রা যেন খাবার সংরক্ষণের উপযুক্ত হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিন। ফ্রিজের তাপমাত্রা যেন পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে, তা নিশ্চিত করুন। ফ্রিজেও বেশিদিন খাবার সংরক্ষণ করবেন না। ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি খাবার খাবেন না, ভালোভাবে গরম করে তারপর প্লেটে নিন।
৮. বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন। পানির মাধ্যমে প্রচুর জীবাণু ছড়ায়। তাই পান করতে কিংবা খাবার তৈরিতে নিরাপদ (ফুটানো ও ঠাণ্ডা করা) পানি ব্যবহার করুন। বাসনপত্র ধোয়ার জন্যও নিরাপদ পানি ব্যবহার করুন। ফলমূল খাওয়ার আগে নিরাপদ জল দিয়ে তা ধুয়ে নিন। প্রক্রিয়াজাত খাবার কেনার আগে মেয়াদ ও উৎপাদনের তারিখ দেখে নিন।