Web bengali.cri.cn   
ভোটারদের মনে রাজনীতিবিদদের চেহারার প্রভাব
  2015-07-20 18:27:48  cri


এমন একটি ওয়েবসাইট আছে, বাংলায় অনুবাদ করলে যার নাম দাঁড়ায় 'সবচেয়ে সেক্সি রাষ্ট্রীয় নেতা'। এ ওয়েবসাইট বিভিন্ন দেশের নেতার চেহারার মান অনুযায়ী একটি নাম তালিকা তৈরি করেছে।

তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেলে থর্নিং স্মিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আছেন ১৫ত স্থানে। আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রয়েছেন ৩৩ স্থানে।

আপনাদের হয়তো মনে আছে যে, গত বছর ক্রাইমিয়ার উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সে দেশের বিচারক নাতালিয়া পোক্লোনস্কায়া বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। মুহূর্তেই তিনি যেন ক্রাইমিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক এবং দেশের নেমকার্ডে পরিণত হন।

মনস্তত্ত্ববিদরা জানান,রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভোটাররা সবসময় প্রার্থীর কয়েকটি বিষয়ের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করে থাকেন। যেমন, প্রার্থী সত্যিই পরিশ্রমী কি না, সত্যিই নির্ভরযোগ্য কি না, সত্যিই আস্থাবান কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে যদি ভোটাররা প্রার্থী সম্বন্ধে যথেষ্ট তথ্য না পান তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্য খুব সহজেই ভোটারদের ভোট দেওয়ার একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টেলিভিশন বিতর্ক। প্রার্থীর সবচেয়ে ভালো ভাবমূর্তি ভোটারদের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রার্থীর টিম খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালায়।

টিভি বিতর্কে প্রতিযোগীকে পরাজিত করতে সৌন্দর্যও একটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। আর যদি প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে একজন আরেকজনের তুলনায় ততটা মার্জিত না হন তাহলে এক প্রার্থী হয়তো বলবেন যে, প্রতিদ্বন্দ্বী চুলে কলপ দিয়েছেন অথবা চেহারার শ্রীবৃদ্ধিসাধন করেছেন। এভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটারদের সাথে প্রতারণা করছেন বলে প্রার্থী অভিযোগ করবেন, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করতে পারেন।

ইসরাইলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, শীর্ষ নেতার চেহারা তথ্য মাধ্যমের প্রচারের অন্যতম টপিক হতে পারে । তথ্য মাধ্যম কোন নেতাকে বেশি পছন্দ করে, তা নির্ভর করে বিভিন্ন উপাদানের উপর। তবে চেহারা নিশ্চয়ই এসব উপাদানের মধ্যে অপরিহার্য একটি।

আমরাও বুঝতে পারি, যেসব নেতাদের চেহারা বেশ সুন্দর, তারা তথ্য মাধ্যমের প্রচারে থাকতে বেশ আগ্রহী। তারা নিজের কাপড়-চোপড় এবং বাহ্যিক চেহারার ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেন, যাতে তথ্য মাধ্যমের প্রচারে তাদের ভাবমূর্তি আরো আকর্ষণীয় হতে পারে।

পাশ্চাত্যের রাজনীতি চেহারার ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের প্রশ্ন, আসলে নির্বাচনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাহ্যিক চেহারা কত বড় ভূমিকা পালন করে এবং কি রকমের চেহারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সহায়ক?

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিদ শোন এমন একটি পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি শতাধিক নারীর স্ট্যান্ডার্ড ছবি সংগ্রহ করেন এবং ২ শ' জন স্বেচ্ছাসেবককে এসব ছবি দেখান। পরে স্বেচ্ছাসেবককে এসব ছবির মধ্যে 'কার নেতৃত্বের সামর্থ্য সবচেয়ে ভালো' এমন ছবি বাছাই করার অনুরোধ করেন। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, নেতৃত্বের সামর্থ্য ভালো এমন মানুষের চেহারার কিছু নিয়ম থাকে। যেমন, চুল ছোট এবং কপাল খুব স্পষ্ট। গোলাকার মুখ এবং সুন্দর মৃদুহাসি।

তারপর গবেষক দল নির্বাচিত ছবি হলিউডের রূপসজ্জাকারকে দেন এবং তারা দু'রকমের প্রসাধন ডিজাইন করেন। একটিকে বলা হয় 'নির্বাচন প্রসাধন', আরেকটিকে বলা হয় 'দৈনন্দিন প্রসাধন'। তারপর এ দু'রকমের প্রসাধন ভোটারকে দেখানো হয়। পরে আবিষ্কার করা হয় যে, নির্বাচন প্রসাধন ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর দৈনন্দিন প্রসাধন শুধু ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এর পার্থক্য ১২ শতাংশ। বলা যায় খুবই বড় পার্থক্য। তাতে যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

তাহলে যদি পুরুষের ছবি নিয়ে এমন পরীক্ষা করা যায়, এর ফলাফল কেমন হবে?

হ্যাঁ, শোন সত্যি এমন পরীক্ষা করেছেন। তিনি আবার ১৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য পদের প্রার্থীদের দলিল সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি 'নকল' নির্বাচন আয়োজন করেন। তবে একটি বিষয় শোন পরিবর্তন করেন, আর তা হলো প্রার্থীদের ছবি। তিনি প্রার্থীদের সত্যি ছবি ব্যবহার না করে কয়েকজন মডেলের ছবি ব্যবহার করেন।

তারপর এসব দলিল স্বেচ্ছাসেবকের হাতে বিতরণ করা হয়। ছবিতে মডেলরা সবাই সাদা পুরুষ। একই পোশাক পরেন। মডেলদের একমাত্র পার্থক্য হলো তাদের চেহারা।

এ ছদ্ম বা নকল নির্বাচনের ফলাফল এমন, সুদর্শন প্রার্থী ৬০ শতাংশ ভোট পান। হ্যাঁ, এমন গবেষণার ফলাফল থেকে আমরা বুঝতে পারি, কেন নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা বাহ্যিক চেহারার জন্য এত বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখেন।

হ্যাঁ, নির্বাচন এবং নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিকে সৌন্দর্য কিছুটা ভূমিকা পালন করে। তবে রাজনীতি ফ্যাশন নয়। সৌন্দর্য্য দিয়ে সবসময় কাজ হয় না। এখানে এমন একটি উদাহরণ আছে যে, ১৯৮৯ সালে ব্রাজিল প্রথম বারের মত সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। তখন ৪০ বছর বয়সী ফার্নান্দো কোলর খুব শক্তিশালী কয়েকজন প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার বাহ্যিক চেহারা অনেক সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। পরে অনেক রাজনীতিক বলেন, কোলরের চেহারা তাকে অনেক সাহায্য করেছে।

তবে সুন্দর সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। তিন বছর পর কোলর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন এবং তাকে ইমপিচমেন্ট করা হয়। বলা হয়ে থাকে, কোলর হলেন ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলের প্রথম ইমপিচমেন্ট হওয়া প্রেসিডেন্ট।

হিলারি ক্লিন্টন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা, আইনজীবীর অভিজ্ঞতা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন জটিল রাজনৈতিক ঘটনা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। আর এসব অভিজ্ঞতার কারণেই ভোটাররা তাকে খুব বিশ্বাস করবে বলে তথ্য মাধ্যম সূত্রে জানা যায়।

কেউ কেউ বলেন, যদিও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে তথ্য মাধ্যমের প্রচারে, সুন্দরী এবং হ্যান্ডসাম এমন শব্দ খুব বেশি ব্যবহার করা হয়, তবে যদি আপনি মন দিয়ে দেখেন, রাজনীতিক আসলে সুপারস্টার বা হলিউড স্টার এর মত সুন্দর/সুন্দরী নয়। বরং তাদের বিভিন্ন আচরণ সাধারণ লোকজনের চেয়ে একটু ভালো হয়, এটাই।

আসলে রাজনীতিকরা অভিনেতা নন, তাই শুধু চেহারা সুন্দর হলেই হবে না। তাদের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে দেশ চালাতে তারা সক্ষম। কারণ চেহারা দিয়ে দেশ চালানো যায় না। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040