0717yin02
|
তাছেং শহরটি ২৫ জাতির লোকজনের বসবাসকারী সীমান্ত শহর। পাশাপাশি হারতুন কমিউনিটির অধিকাংশ অধিবাসী উইঘুর জাতির।
মারিয়াম কাদের হারতুন কমিউনিটির সান তাও গলিতে বসবাসকারী উইঘুর জাতির অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধা। সবুজ রঙের সামিয়ানার নিচে তিনি আমাদেরকে রমজান মাসে তাঁর পরিবারের কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, ভোর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত হলো খাওয়ার সময়। ৫ টার পর আর কিছু খাওয়া যায় না। রাত ১০টা ২০ মিনিটে আবার খাওয়া যায়। আমাদের এখানে সেহরিতে আমরা খাওয়া দাওয়া করি। আমার পরিবারে শুধু আমার মা ও আমি সেহরি খাই তারপর রোজা রাখি। আমার ছেলেকে চাকরি করতে হয়। পুত্রবধুকেও চাকরি করতে হয় এবং তাদের বাচ্চাকে দেখাশুনা করতে হয়, তাকে খাবার ও পানি দিতে হয়। সুতরাং রোজা রাখতে পারে না তারা।
তিনি বলেন, অবসর জীবন শুরু হবার পর থেকে আমি রোজা রাখতে পারছি। এখন তৃতীয় বছর চলছে। রোজা রাখার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। সাধারণ সময়ের মতো ছেলেমেয়েদের জন্য রান্না করি। বাড়িঘর, কাপড় পরিষ্কার করি। তারপর আমি অন্য একটি কমিউনিটিতে গিয়ে সেখানকার বৃদ্ধাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি বা বেড়াতে যাই ও স্কয়ারে নাচে যোগ দেই। অবশ্যই দিনে ৫ বার নামাজ আদায় করি।
মারিয়াম মনে করেন, রমজান মাসে রোজা রাখা হলো তাদের বংশের বেশ প্রাচীন ঐতিহ্য। কিন্তু তাদের বাচ্চারা রোজা রাখবে কি না, এটা তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। তিনি বলেন, এটা আমাদের এক ধরনের রীতিনীতি বা রেওয়াজ। আগে আমার দাদা ও বাবামা রোজা রাখতেন। সুতরাং এটা ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ। রোজা রাখা শুধু এক ধরনের রেওয়াজ ধর্মীয় নীতি, তা শরীরের জন্য ভালো, না খারাপ তা মূল বিষয় নয়। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা ব্যক্তিগত ইচ্ছা। আমি তাদেরকে রোজা রাখার জন্য কোনো চাপ দেই না।
স্যুয়েলাইত পালহা হলেন মারিয়ামের বড় ছেলে। তিনি টা ছেং টেলিযোগাযোগ কোম্পানিতে চাকরি করেন। প্রতিদিন বাইরে ছুটোছুটি করার জন্য সে রোজা রাখতে পারে না। তাকে দিনের বেলা খেতেই হয়। তিনি বলেন, আমাদের জন্য এটা খুব কঠিন। চাকরি করতে হয়। প্রতিদিন বাইরে কাজ করি। রোজা রাখতে চাই, কিন্তু চাকরিটা খুবই পরিশ্রমের। উপায় নেই। আমার কাজ হচ্ছে লাইন মেরামত করা। সুতরাং ছুটি বা বিশ্রামের সময় নেই। সমস্যা থাকলেই যেতে হয়। দিনের বেলা না খেয়ে থাকা আমার জন্য খুব কঠিন। পানি না খেলেও চলবে না। দেখা যাক, যখন বয়স বেশি হবে, চাকরি থাকবে না, তখন রোজা পালন করবো।
উল্লেখ্য, হারতুন কমিউনিটির নিকটবর্তী কাশগার মসজিদ হলো তাছেং শহরের বৃহত্তম মসজিদগুলোর অন্যতম। উইঘুর, কাজাখ, উজবেকি, কির্গিজ ও তাতারসহ বিভিন্ন জাতির মুসলিম জনগণের ইবাদত বন্দেগির স্থান।
প্রেমা/তৌহিদ