Web bengali.cri.cn   
সানবার্ন থেকে সাবধান!
  2015-07-16 19:42:36  cri


এখন চলছে গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে গরম দিনগুলো। এই কয়েক দিনই চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে বর্ষাকাল হলেও গরমে কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। দাবদাহে মানুষের ত্বক যেন পুড়ে যাচ্ছে। এই মৌসুমে প্রচণ্ড রোদে সবার ত্বক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় বাসা থেকে বাইরে বের হলে রোদের ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ত্বককে পুড়িয়ে ফেলে এবং অনেক ক্ষতি করে থাকে। এতে ত্বক কালো হয়ে যায়, সেই সঙ্গে সান বার্নের কবলে পড়তে হয়, সব সময় বান বার্নে আক্রান্ত হলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বিশেষ করে নারীদের ত্বক খুবই স্পর্শকাতর ও নরম হওয়ায় সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নারীদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা সান বার্ন থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় সে সম্পর্কে জানিয়ে দেবো। চলুন শোনা যাক, আজকের অনুষ্ঠান।

সানবার্ন কি?

সানবার্ন হলো আলট্রা-ভায়োলেট (UV) রশ্মির কারণে ত্বক পুড়ে যাওয়া। সানবার্ন হলে ত্বকে লাল রঙের ক্ষতভাব দেখা দেয়। আসলে এ ক্ষতভাব হলো আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য রক্ত প্রবাহ বেশি হয়ে যাওয়া যা, শিরা উপশিরার মাধ্যমে ত্বকের উপরিভাগে চলে আসে।

আলট্রা-ভায়োলেট (UV) রশ্মি:

আমাদের পৃথিবীতে রশ্মি তিনটি পদ্ধতিতে প্রবেশ করে। ইনফ্রারেড (তাপ), দৃশ্যমান আলো এবং আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির মাধ্যমে। এর মধ্যে আলট্রা-ভায়োলেট (UV) রশ্মি তিন প্রকারের হয়ে থাকে।

UVA (৩১৫-৪০০ nm) এটা কালো আলো নামেও পরিচিত, যা খুব দ্রুত ট্যানিং এ সাহায্য করে। অতি মাত্রায় এ রশ্মি শরীরে প্রবেশ করলে স্কিন ক্যান্সারের আশংকা থাকে।

UVB (২৮০-৩১৫ nm) এটি সানবার্নের জন্য দায়ী। অতি মাত্রায় এ রশ্মি শরীরে প্রবেশ করলে 'মেলানমা' বা মেছতা হয়ে থাকে।

UVC (১০০-২৮০ nm) এ রশ্মি বায়ুর মাধ্যমে শুদ্ধ হয় এবং আমাদের কাছে পৌছুতে পারে না।

সানবার্ন হলে কি কি জরুরি ব্যবস্থা নিতে হয় ?

যখনি ত্বকের পোড়া ভাব প্রকট হয়ে ওঠে তখনই সূর্যের আলো থেকে সরে যান। সানবার্নের কারণে ইতোমধ্যে ত্বক পুড়ে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। তাই আর কোন ক্ষতি না বাড়াতে চাইলে সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকুন এবং ত্বকের স্বাভাবিকতা ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

ত্বককে এ সময় ঠাণ্ডা করা খুবই জরুরি। কিন্তু এক্ষেত্রে ঝরনার প্রবল বেগে বের হওয়া পানির ব্যবহার এড়িয়ে চলবেন। কারণ, ঝলসানো ত্বকের উপর ঝরনা থেকে প্রবল বেগে আসা পানি আপনাকে আরাম দিবে না। মগ বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। এ অবস্থায় অবশ্যই সাবান বা ফেস ওয়াশ ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

ঠাণ্ডা পানি দেওয়ার পর আপনার ত্বকে লোশন ব্যবহার করুন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে, লোশন ময়শ্চারাইজিং এবং হাইড্রেটিং কিনা। যদি ত্বকে ফুসকুরি থাকে তাহলে সে জায়গাগুলো বাদ দিন।

সানবার্নের কারণে দুই একটি ছোট আকারের ফুসকুরি যদি হয়ও তাহলে সাবধান হতে হবে। বাসায় বসেই শরীরের যত্ন নিতে হবে। কিন্তু যদি শরীরের ২০ শতাংশের বেশি জায়গায় এ সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সানবার্ন থেকে নিজেকে রক্ষার কিছু পরামর্শ:

১. সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (SPF ) ব্যবহার করুন

এটি এমন এক ফ্যাক্টর যা অতিরিক্ত সূর্য রশ্মির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। রোদের তীব্রতা যত বেশি তত বেশি SPF এর সান ব্লক বা সান স্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।

এখানে বলে দিচ্ছি SPF বাছাই করার খুব সহজ একটি উপায়। এটি হচ্ছে SPF এর মান 'প্লাস ১০' হলো সমপরিমাণ মিনিট বাইরে থাকার সময়কাল।

একটি উদাহরণ দেই, যদি আপনাকে ৪-৫ ঘণ্টা বাইরে অবস্থান করতে হবে, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি ২৪০-৩০০ মিনিটের মত বাইরে থাকছেন। তাই আপনাকে SPF-৩০ নির্ধারণ করলেই হচ্ছে (৩০ প্লাস ১০=৩০০)। এভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর পুনরায় ব্যবহার করতে পারেন, যত বেশি সময় থাকবেন তত বেশি ব্যবহার করবেন।

অনেকে হয়ত জিজ্ঞাস করবেন? আমি প্রায়ই বের হই না, তাহলে SPF ব্যবহার করা দরকার আছে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, UVA (৩১৫-৪০০ nm) গ্লাস, ধাতুসহ অনেক শক্তি জিনিসের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে বলে রুমে থাকলেও SPF-১৫ সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা উচিত।

দুই: বেরিয়ে যাওয়ার সময় টুপি, ছাতা, সানগ্লাস ও হালকা লং স্লিভস্ জাতীয় কাপড় পরেন।

টুপি, ছাতা, সানগ্লাসসহ সামান্য কিছু যত্ন নিয়ে বের হলেই এগুলো আপনাকে সানবার্ন থেকে মুক্তি দিতে পারে। কাপড়ের দিকে লং স্লিভ জাতীয় কাপড় বেছে নিন। লং স্লিভ জাতীয় কাপড় আপনার বাহুকে সানবার্ন থেকে সুরক্ষা দেবে। তবে কাপড়টি হতে হবে স্বস্তিকর। রঙের ক্ষেত্রে বাছাই করুন হালকা উজ্জ্বল রঙগুলো। ডিপ রঙ এই গরমে দেখতে খুবই বিরক্ত এবং তা তাপ শোষণ করে। তাই গরমও বেশি লাগে।

বন্ধুরা, এবার আসুন নজর দেই বিভিন্ন খাবারের দিকে।

সানবার্ন থেকে রক্ষা করে যে খাবারগুলো

১. মাছ

মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাট থাকে, এটা ত্বকের কোষের গঠন ঠিক করে, সানবার্ন থেকে ত্বককে রক্ষা করে। তা ছাড়া মাছের ফ্যাট ত্বকের জন্য হেলদি ফ্যাট, এই ফ্যাট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও জল ও খাবারের পুষ্টি ত্বকের ভিতরে গিয়ে টক্সিন বের করে দেয়। তবে, বেশি ভাজা মাছে এই ফ্যাটের গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেক বা গ্রিল করার মাছ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

২.ফল ও সবজি

পেয়ারা, আনারস, পেঁপে, তরমুজ ইত্যাদি ফলে রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি'তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বককে ডিহাইড্রেটেড রাখে। ত্বক টাইট রাখে, ফলে চামড়া টানটান ও মসৃণ থাকে। কখনও ফল খাওয়া না হলে ভিটামিন সি-এর জন্য টমেটো, পালং শাক, কাঁচা লংকা খেতে পারে।

৩.ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার

ডালও কিন্তু প্রোটিনের খুব ভালো উত্স। ডালের প্রোটিন খুব সহজেই শরীরে শোষণ হয়। এই প্রোটিন কেরাটিন গঠনে সহায়ক। এ ছাড়া ডালে আয়রনও থাকে যা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।

৬. গ্রিন টি

সবুজ চা যদিও একটি পানীয় তবুও মনে রাখতে হবে এটি গাছ থেকেই আসে। প্রতিদিন এককাপ সবুজ চা আপনাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এমিনো এসিড সরবরাহ করবে। যা আপনাকে রিলাক্স মুডে থাকতে সাহায্য করবে। চা যখন গরম করা হয়, তখন এটি ক্যাটচিন নামের সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক সূর্য রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারে।

৫. চকোলেট

নিখুঁত ত্বকের জন্য চকোলেট একটি উৎকৃষ্ট খাবার। চকোলেট ফ্যাটি এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। যা আপনার ত্বকের সজীবতা আনতে সাহায্য করবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রুক্ষতা কমায় এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচিয়ে রাখে।

৬. বিভিন্ন ধরণের বীজ

সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়ার বীজ ও শন বীজ মসৃণ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সূর্যমুখীর বীজ ও কুমড়ার বীজ দুটোই ভিটামিন 'ই', প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়ামে পরিপূর্ণ। সেলেনিয়াম আপনার ত্বককে বলি হতে রক্ষা করবে। ভিটামিন 'ই' ত্বককে দিবে আর্দ্রতা আর ম্যাগনেসিয়াম আপনাকে মানসিক চাপ হতে স্বস্তি দিবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040