Web bengali.cri.cn   
চাকরির ক্ষেত্রে সুন্দর চেহারা নাকি সামর্থ্য,কোনটি গুরুত্বপূর্ণ?
  2015-07-13 14:30:33  cri


প্রতি বছরের জুন এবং জুলাই মাস হলো শিক্ষার্থীদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ এ সময়টিতে তারা ডিগ্রি লাভ করে থাকেন। আর এ ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়ে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে যাত্রা শুরু করেন তারা। হাজার রকমের কাজে নিজেদের যুক্ত করার জন্য অংশ নেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়।

জানি না আপনারা লক্ষ্য করেছেন কি না, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদর্শন বা সুন্দর চেহারা চাকরি খোঁজা বা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। তাই না?

যদিও এ বিষয়টি পুরোটা সত্য নয় এবং অনেকে তা স্বীকারও করতে চান না, তবে একথা সত্যি যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুন্দর চেহারা মানুষকে অনেক সাহায্য করে থাকে।

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে,চাকরি বা কর্মের ক্ষেত্রে সুন্দর চেহারা সত্যি এতটা গুরুত্বপূর্ণ, যা সব কিছুই নির্ধারণ করবে? নাকি নিজের সামর্থ্য আরো গুরুত্বপূর্ণ?

অনেক দেশ 'চেহারা এবং চাকরির সম্পর্ক' নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেক জরিপ করেছে। জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায়, মানুষ সত্যিই বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে মানুষকে বিচার করে থাকেন। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো, যার চেহারা দেখতে খুবই সুন্দর, তিনি অন্যদের তুলনায় খুব সহজেই চাকরির সুযোগ পেতে পারেন।

২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে একটি জরিপ করে, এর ফলাফল থেকে জানা যায়, দেশটির ৮০ শতাংশেরও বেশি শিল্প-প্রতিষ্ঠান সুন্দর চেহারার কর্মীকে ভাড়া করতে বা চাকরি দিতে বেশ আগ্রহী।

দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট 'সারামিন' বিভিন্ন কোম্পানি বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ২৭৩ জন মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানদের নিয়ে একটি জরিপ করেছে। এর ফলাফল এমন, ৮৪.২ শতাংশ লোক বলেন, যখন তারা কোনো মানুষকে ভাড়া করার বা চাকরি দেবার সিদ্ধান্ত নেন, তখন এই মানুষের চেহারা এবং তার পরা কাপড় সত্যি তাদের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে। ৫৭ শতাংশ লোক জানান, যদিও কারো কারো সামর্থ্য ততটা ভালো বা সন্তোষজনক নয়, তবে যদি এ মানুষের চেহারা দেখতে সুন্দর হয় তাহলে কোম্পানি খুব সম্ভবত এ মানুষকেই ভাড়া করবে বা চাকরি দেবে।

৫০ শতাংশ লোক বলেন, যদি কারো চেহারা দেখতে বেশ সুন্দর হয়, তাহলে এ মানুষটিকে তাদের কাছে বেশি আস্থাবান বা নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়।

জরিপের ফলাফল থেকে আরো জানা যায়, ৮৩ শতাংশ লোক মনে করেন, প্রথম দেখা বা দর্শন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ৪১.৭ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ লোক মানুষের আচরণ এবং কাপড়-চোপড়ের ওপর বেশ নজর রাখেন।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চেহারার গুরুত্ব প্রমাণের জন্য জাপানের নিপ্পন টেলিভিশন স্টেশন ২০১১ সালে একটি উন্মুক্ত পরীক্ষার আয়োজন করে। ২ জন মডেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন সাধারণ স্নাতক ছাত্র চাকরি খোঁজার জন্য সাক্ষাতকারে অংশ নেন। তবে সাক্ষাতকারগ্রাহক তাদের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

কয়েক দফা সাক্ষাতকারের মাধ্যমে মডেল বিজয়ী হন। এমনকি মডেল কিছু ভুল করা সত্ত্বেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রকে পরাজিত করে এ চাকরি পান।

এ টিভি অনুষ্ঠান প্রচারের পর অনেকেই নিরাশ হয়ে পড়েন। তারা মনে করেন, চেহারা সুন্দর হলে সহজেই সব কিছু অর্জন করা সম্ভব। আবার কেউ কেউ মনে করেন, কোম্পানি যদি এভাবে কর্মী বাছাই করে তাহলে তারা শ্রেষ্ঠ কর্মী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।

অনেকেই হয়তো উপরের উদাহরণ শুনে খুব খুশি আবার অনেকেই খুব হতাশ। আমরা বলবো হতাশ হওয়ার কিছুই নেই।

সুদর্শন কর্মী কেন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পান তা নিয়ে বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ হলো, তারা শিল্প-প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে আরো বেশি মুনাফা এনে দিতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোকেরা সুন্দর জিনিস পছন্দ করেন। ভোক্তা হিসেবে সবাই সুন্দর ডিজাইনের পণ্য, সুন্দর চেহারার কর্মীর সেবা উপভোগ করতে চান। তাই শিল্প-প্রতিষ্ঠান ভোক্তার এমন মানসিকতাকে বিবেচনা করে সুন্দর চেহারার কর্মীকে নিয়োগ দেয়।

অন্যদিকে আসলে অনেক কর্মীর অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, সব চাকরিতেই সুন্দর চেহারার মানুষ সুবিধা পেয়ে থাকেন তা নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্ম লিঙ্কডেন বিশ্বের ১৫ হাজার অফিস কর্মীদের সাক্ষাতকার নেয়। ফলাফল থেকে জানা যায়, পেশার ক্ষেত্রে ফ্যাশন ও বিলাসসামগ্রীর কর্মীদের জন্য সুন্দর চেহারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। থাইল্যান্ডের একজন মেয়ে মনে করেন, সুন্দর চেহারা সত্যি কর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে তা একজনের চাকরির ভবিষ্যত্ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র উপাদান নয়। যদি কারো চেহারা ততটা সুন্দর নয়, তবে তিনি যদি খুব ভদ্র, কাজের ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রমী হন তাহলে এ মানুষ অবশ্যই কোম্পানির আস্থা অর্জন করতে পারেন।

কেউ কেউ ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য চেহারার শ্রীবৃদ্ধিসাধন করে থাকেন। থাইল্যান্ডের এক মেয়ে তা মানতে পারেন না। কাজের ক্ষেত্রে চেহারা সত্যি গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিজের জীবনকে চমত্কার করা এবং নিজের মূলনীতি মেনে নেওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ। ভুলে যাবেন না, শরীর সৃষ্টিকর্তার দেওয়া। তবে সাফল্য অর্জন করতে চাইলে নিজের সামর্থ্য বাড়াতেই হবে।

আসলে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বা মহান ব্যক্তিরও চেহারা ততটা সুন্দর নয়। যেমন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন।যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জর্জ সাংবাদিককে এমন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা এবং সরকারি সংস্থায় কাজ করেছিলেন। তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সুন্দর চেহারা একজনের কাজের ওপর তত বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। ভবিষ্যতের দিক থেকে বিবেচনা করলে, একজনের ভিতরের গুণাবলী কাজের ক্ষেত্রে তার সাফল্যের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। আপনার মূল্যের ৮৫ শতাংশই নির্ভর করে আপনার চরিত্র, যোগাযোগের সামর্থ্য, আলোচনার সামর্থ্য এবং নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্যের ওপরে। আপনি হয়তো কল্পনা করতে পারেন না, শুধু ১৫ শতাংশই নির্ভর করে আপনার চেহারার ওপর।

কিছু উন্নত দেশের লোকেরা কাজের ক্ষেত্রে চেহারার প্রভাব অস্বীকার করেন না। ন্যায়সঙ্গত মর্যাদা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা এবং নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চেহারা পরিচালনা আস্তে আস্তে দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। ওয়াশিংটনে লেখাপড়া করা মিস সিয়াও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে মাধ্যমিক স্কুল থেকে চেহারার প্রতি যত্ন নেওয়া একটি প্রয়োজনীয় কোর্সে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার প্রথম দু'মাসে সহপাঠীর কাপড়-চোপড় গবেষণা করা সিয়াও-এর স্কুল জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর একটি অংশে পরিণত হয়। চেহারা ছাড়া চুলের স্টাইল, মুখের প্রসাধন, মুখের ভাব, কাপড়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাপানে এসব উপাদানের ওপর বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

জাপানিরা প্রসাধনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেন, তারা মনে করেন প্রসাধন যেন কাপড় বাছাই করার মত। তা কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিফলন। তাই জাপানে চাকরি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রসাধন ও কাপড় পরার কোর্স অনেক জনপ্রিয়।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জীবনবৃত্তান্তে ছবি লাগানো নিষিদ্ধ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মনে করেন, জীবনবৃত্তান্তের ছবি বৈষম্য সৃষ্টি করবে। তাই দেশটি এমন নিয়মের মাধ্যমে সবাইকে একটি সমান সুযোগ দিতে পারে।

আসলে যারা ততটা সুন্দর নয় অথবা যারা নিজের চেহারা সম্বন্ধে ততটা সন্তুষ্ট নয় তারা নিজের আচরণ, নিজের গুণাবলীর ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে পারেন। কর্মের সুষ্ঠু গুণাবলী, যোগাযোগের ভালো সামর্থ্য দ্বারা একজন নিজের মূল্য সৃষ্টি করতে পারেন। এসব বিষয় একজনের কর্ম জীবনে আরো বড় এবং আরো দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব ফেলে। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040