Web bengali.cri.cn   
'এক অঞ্চল এক পথ' বাস্তবায়িত হলে কল্যাণের আশা করছেন তুর্কি ব্যবসায়ীরা
  2015-07-10 20:16:28  cri

'সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্ট'-এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সিল্ক রোড বরাবর দেশগুলোর সঙ্গে চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন উষ্ণ হয়ে উঠছে। সিল্ক রোড বরাবর গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ও চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন দ্রুততর হচ্ছে। তুরস্কের ব্যবসায়ীক মহল 'এক অঞ্চল এক পথ' বাস্তবায়নে ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক কল্যাণের প্রত্যাশা করছেন।

সিন চিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী উরুমুচি'র এর দাও ছিয়াও নামে একটি বাজারে 'তুরস্কের বিখ্যাত পণ্যদ্রব্যের কেন্দ্র' রয়েছে। কেন্দ্রের আয়তন কয়েক হাজার বর্গমিটার এবং শতাধিক ব্যবসায়ী সেখানে দোকান দিয়েছেন। সাংবাদিকরা বাণিজ্য কেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখেছেন, সেখানে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিভিন্ন পোশাক-টুপি, জিনিসপত্র, খাবার ও ছোট পণ্যদ্রব্যের সমাহার সেখানে রয়েছে। খুব খেয়াল করে দেখলে দেখা যায়, দ্রব্যগুলোর উপরে একটি অভিন্ন লেখা আছে। আর তা হলো, 'মেড ইন তুর্কি'। সংবাদদাতা একটি খাবার দোকানের সামনে গিয়েছেন। সেখানে বিক্রি করা বিস্কুট, মধু ও মিছরিসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটে তুর্কি ভাষা ছাপা রয়েছে। দোকানের মালিক জানান, আমরা তুরস্কের খাবার উত্পাদনকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান--ইটিআই। বর্তমানে আমাদের ব্যবসা ভালো। তুরস্ক একটি কৃষি নির্ভর দেশ। তার কৃষিজ দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাও তুলনামূলক ভালো। বর্তমানে তুরস্কের খাবারের দাম এবং চীনের অভ্যন্তরে খাবারের দাম প্রায় সমান। সেজন্যই প্রতিযোগিতার পরিবেশ রয়েছে।

সেমিল কায়া হলেন একজন তুর্কি ব্যবসায়ী। চার বছর আগে তিনি বাণিজ্য কেন্দ্রে এসেছিলেন। তিনি প্রধানত তুরস্কের উত্পাদিত ব্র্যান্ড টুপি-পোশাক বিক্রি করেন। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন, চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনা মানুষ আরো বেশি কেনাকাটা করছে এবং জীবনমান উন্নত করার চাহিদা আরো বাড়ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের সচেতনতাও বাড়ছে। সুতরাং তুরস্কের উচ্চ মানের ব্র্যান্ড টুপি-পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য চীনা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। তিনি বলেছেন, বর্তমানে চীনা পর্যটকরা পণ্যের গুণগত মানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। মোজা ও আন্ডারওয়্যারের মতো ছোট জিনিসও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমার দোকানে ত্রুটিযুক্ত পণ্য নেই। সুতরাং পর্যটকরা আমার দোকানে আসে এবং বিভিন্ন জিনিস পেয়ে সন্তুষ্ট হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও তুরস্কের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের আদান-প্রদান ও সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বেড়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ধারাবাহিক তিন বছর ধরে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৪ সালে তা রেকর্ড পরিমাণ অর্থাত ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। জার্মানির পর তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারি দেশে পরিণত হয়েছে চীন। ঠিক এ প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালে তুরস্কের উইঘুর শিল্প ও বাণিজ্য শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান সাবির বগদা এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করেন এবং সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুচি শহরে তুরস্কের বিখ্যাত পণ্যদ্রব্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে বেশ দ্রুততার সঙ্গে স্থানীয় বিখ্যাত পর্যটন ও কেনাকাটার স্থানে পরিণত হয়েছে এটি।

তুরস্কের বিখ্যাত পণ্যদ্রব্যের কেন্দ্রের সাফল্য তুর্কি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এর্দোয়ান, উপ-প্রধানমন্ত্রী আলি বাবাকানসহ বিভিন্ন নেতারা বাণিজ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। বাণিজ্য কেন্দ্রের মহাপরিচালক সাবির বগদা সংবাদদাতাদের বলেছেন, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য হলো তুর্কি ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী পুঁজি বিনিয়োগের স্থান। প্রথমে অনেকেই মনে করেছিল, এখানে পুঁজি বিনিয়োগে লাভ হবে না। কিন্তু বর্তমানে তুরস্কের বিখ্যাত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ৬ হাজার বর্গমিটার থেকে ৮ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। ব্যবসায়ীর সংখ্যাও শতাধিক। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, শুরুতে চীনের সিনচিয়াংয়ে এসে পুঁজি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। বগদা বলেন, বাণিজ্য কেন্দ্রে বিক্রি হওয়া সবই সস্তা তুর্কি পণ্য। বর্তমানে বার্ষিক গড়পড়তা বিক্রয় পরিমাণ ৩ থেকে ৩.৫ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি বছর প্রায় ৩ বা ৪ মিলিয়ন দেশি-বিদেশি পর্যটক বাণিজ্য কেন্দ্রে আসে। পর্যটকরা সিনচিয়াং স্থানীয় পর্যটনের স্মারক সামগ্রী কেনার পাশাপাশি আমাদের এখানে বিদেশি স্বাদের তুর্কি পণ্য কিনতে পারবে।

চীন-তুরস্ক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিশেষ করে 'এক অঞ্চল এক পথ' বাস্তবায়নে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট সুযোগ রয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে 'এক অঞ্চল এক পথ বরাবর দেশগুলোর সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণের ২৬ শতাংশ। বগদা বলেন, 'এক অঞ্চল এক পথ' এবং চীন-তুরস্ক আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তিনি উরুমুচি'র বাইরে সিনচিয়াংয়ের অন্যান্য শহরে তুরস্কের বিখ্যাত পণ্যদ্রব্যের বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাই আগামীতে সিনচিয়াংয়ের হো থান ও কাশগরে দু'টো বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040