Web bengali.cri.cn   
চীনের 'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা'র প্রশংসা করলেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা
  2015-06-19 15:09:41  cri

গত ৮ জুন পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় 'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা' নিয়ে আন্তর্জাতিক মতবিনিময় সভা। এতে দেশি-বিদেশি পরিবেশবাদীরা চীনের পানিদূষণসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় জাতিসংঘ পরিবেশ কার্যক্রমের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পানীয় জলের গুণগত মান রক্ষা ও সরবরাহের বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে চীন সরকার পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সময়োপযোগী।

চলতি বছরের এপ্রিলে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ 'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা' প্রকাশ করে। ৮ জুনের সভায় দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের মূল প্রশ্ন ছিল: কীভাবে চীন পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ করবে? সভায় চীনে জাতিসংঘ পরিবেশ কার্যক্রমের প্রতিনিধি জাং শিকাং বলেন, গত ১০ বছরে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল পানিসম্পদ ভোগের ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম এলাকায় পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পানীয় জলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহের প্রশ্নে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হয়। এ সময় চীন 'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা' গ্রহণ করেছে, যা খুবই যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন,

'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা' হলো ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রণীত 'বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা'র পর চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরিবেশ সংরক্ষণসংশ্লিষ্ট কর্ম-পরিকল্পনা। এতে মোট ১০টি অংশ এবং ৩৫টি অধ্যায় আছে। পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নয়ন, বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, সংশ্লিষ্ট পরিবেশ সংরক্ষণ আইন‌ আরও কার্যকর করার উপায়, পানি ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনার তুলনায় পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনার শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে, এতে প্রতিটি ইউনিটের অধিকার ও দায়িত্ব স্পষ্টতর করা হয়েছে এবং ইউনিটগুলোর মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে।"

'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা'য় তিনটি সময়পর্বের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে: ২০২০ সাল পর্যন্ত সারা দেশের পানির গুণগত মান উন্নত করা এবং গুরুতর দূষিত পানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমানো হবে; ২০৩০ সাল নাগাদ জাতীয় পর্যায়ের পানির গুণগত মান সামগ্রিকভাবে উন্নত হবে; এবং ২০৫০ সাল নাগাদ প্রাকৃতিক পরিবেশের গুণগত মান সার্বিকভাবে উন্নত করা হবে। চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পানীয় জল বিভাগের প্রধান শি সিয়াও চুয়ান জোর দিয়ে বলেন, পরিকল্পনাটিতে পানির গুণগত মান উন্নত করার ক্ষেত্রে একেক এলাকায় একেক ধরনের পদ্ধতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা'র আওতায় শুধু সরকারি বিভাগগুলো নয়, বরং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষকেও সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। পরিকল্পনায় বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া, আমরা শুধু বড় নদীর সমস্যা সমাধান করবো, তা নয়; আমরা ছোট খানা-খন্দ, খাল ইত্যাদিও দূষণমুক্ত করবো। কারণ, এগুলো সাধারণ মানুষের বাসস্থানের কাছাকাছি অবস্থিত। সাধারণ মানুষের পানীয় জলের সমস্যাও সমাধান করা হবে।"

'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা'য় কাজের মূল্যায়ণ, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং কাজের পরিমাণ সংখ্যায় বের করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর লক্ষ্য, পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করা। ছোং ছিং শহরের পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণকে নমুনা হিসেবে 'পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্ম-পরিকল্পনা'য় গ্রহণ করা হয়েছে। ছোংছিং শহরের পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান লিউ মিং চুন বলেন,

"প্রতি মাসে আমরা পানির গুণগত মান প্রকাশ করি। ফলে স্থানীয় সরকার জানতে পারে যে, পানির গুণগত মান ভাল হয়েছে, নাকি খারাপ হয়েছে, নাকি কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এ ছাড়া, আমরা আঞ্চলিক সীমিত অনুমোদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। যদি আপনার এলাকার পানির গুণগত মান ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে, তাহলে সেখানে সীমিত অনুমোদন দিব। আর আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছি। যেমন, আমাদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপনায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে, অবিলম্বে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নদীতে দূষণ ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দিলে, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য নদীর পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। আমরা নদীতে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। প্রতি মাসে পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগের কাছে উপস্থাপন করা হয়।"

বিশ্ব ব্যাংকের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের চীন বিষয়ক পরিসেবা পরিচালক পল প্রোসি বলেছেন, পরিবেশের দূষণ মোকাবিলায় জনসাধারণের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,

"আমি যুক্তরাষ্ট্রের গত শতাব্দর সত্তুরের দশকে প্রকাশিত 'দূষণমুক্ত বায়ু বিল' থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শিখেছি। আর সেটা হচ্ছে: দূষণ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাগুলোর অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত উন্মুক্ততা ও স্বচ্ছতা। জনসাধারণকে পরিবেশের সমস্যা সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবহিত করতে হবে। আমার মনে হয়, জনসাধারণ হচ্ছে সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সবচে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রশক্তি। আমাদের উচিত পরিবেশনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং তাদের কাছ থেকে ভালো প্রস্তাব নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক শক্তিকে কাজে লাগানো।"

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040