Web bengali.cri.cn   
এলিয়েন বা ভিনগ্রহের মানুষ সম্পর্কে রহস্যময় গল্প
  2015-06-22 20:08:41  cri


পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনো গ্রহে অন্য কোনো প্রাণী আছে কিনা সেই তর্ক-বিতর্ক চলছে এখনও। সভ্যতার সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত ঐ মহাকাশ কিংবা রাতের তারাভরা আকাশ হাতছানি দিয়ে ডেকেছে মানুষকে নিরন্তর। মানুষও সাড়া দিয়েছে সেই ইশারায় যুগে যুগে। আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি যে, মানুষ সেই ইশারায় সারা দিয়ে প্রথম গিয়েছিল চাঁদে,সেই সাথে আমরা মনে করি পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো প্রাণী বা এলিয়েন নেই। কিন্তু আমাদের বিশ্বাসকে মাঝে শক্ত করে ঝাঁকুনি দেয় কিছু অমীমাংসিত রহস্য। আর সেই রহস্যগুলোর সৃষ্টি সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে, যখন কিনা আধুনিক বিজ্ঞানের আলো পৌঁছায় নি এই পৃথিবীতে ।

খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকে থেলাস নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ভিনগ্রহের প্রাণীর ধারণা পোষণ করেন। তার ধারণা মতে 'দৃশ্যমান গ্রহ ব্যবস্থা ছাড়াও অন্য কোনো জীবনবহুল জগত রয়েছে'। পুটার্চ নামের এক ব্যক্তি তার ধারণায় চাঁদে স্বর্গের অসুরদের আবাস ভূমিকে খুঁজে পেয়েছিলেন।

অনুরূপভাবে মধ্যযুগের জ্যোতির্বিদগণও পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে জীবনের কল্পনাই শুধু করতেন না, তারা কল্পিত জগতগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেরও নিরন্তর প্রয়াস ও ধ্যান ধারণার চিহ্ন রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।

বিখ্যাত গণিতবিদ সি এফ গাউস সাইবেরীয় জঙ্গলের বৃক্ষরাজিতে একটি অতিকায় ত্রিকোণ তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন যা অন্যান্য গ্রহের অধিবাসীগণকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে। জে জে ভন লিট্রো সাহারা মরুভূমিতে জ্যামিতির পদ্ধতি অনুসারে সুবৃহত আকৃতির নালা তৈরি করে তাতে কেরোসিন ঢেলে রাতের বেলায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব রাখেন। সি গ্রস দিনের সূর্যালোকে অতিকায় আয়না স্থাপন করে আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে ভিন গ্রহের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ পর্যন্ত দান করেছিলেন।

হ্যাঁ, এটা ছিলো প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দার্শনিকদের প্রচেষ্টা। আর আধুনিক যুগে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান।

পৃথিবীর অভিযানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এসইটিআই বা সার্চ ফর এক্সট্রাটেরিসট্রিয়াল ইন্টিলিজেন্স, যা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক। 'এসইটিআই' বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান করে পৃথিবী থেকেই।বর্তমানে ১০টিরও বেশি দেশ থেকে এসইটিআই এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে হয়তো বিভিন্ন সম্ভাবনাময় কারণেই গবেষকরা খুঁজে চলেছেন প্রাণের অস্তিত্ব। এই সন্ধান-কার্যক্রমে গবেষকরা একদিকে অতীতের ঐতিহাসিক উত্সে খোঁজ করছেন ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আর বিজ্ঞানীরা খোঁজ করছেন পৃথিবীর বাইরের গ্রহ কিংবা উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব।

ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে তীব্র আগ্রহ থেকেই নানান ধরনের কিছু কাজও হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে বই, প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার প্রতিবেদন, তৈরি হয়েছে গান, চলচ্চিত্র এবং এ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৯৭ সালের ১৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের আকাশে একটি বিমানপোত দেখা যায়। এ বিমানপোত পরে বিধ্বস্ত হয়। লোকেরা এর পরপরই বিমানপোতের ধ্বংসাবশেষ এবং একটি মৃতদেহ আবিষ্কার করেন, তবে মৃতদেহটি সনাক্ত করা যায়নি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তখন বিমানের উদ্ভব হয় নি। তাই এ ঘটনা বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। লোকজনের প্রশ্ন হল, এ বিমানপোত অনেক দূর অর্থাত্ অন্য গ্রহ থেকে এসেছে।

১৯৪৭ সালে গ্রীষ্মকালের এক রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যের রোসওয়েলে একটি জিনিস আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে। পরের দিন এক কৃষক তার কৃষি খামারে কিছু ভাঙা জিনিস দেখতে পান। এরপর মার্কিন বাহিনী এর তদন্তে যোগ দেয়। তখন তথ্য মাধ্যম প্রজাপতি আকারের ধ্বংসাবশেষে একটি এলিয়েন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এমন খবর প্রচার করে। তার দৈহিক উচ্চতা ১ মিটারের বেশি, ওজন দশ বারো কেজির মত। বড় মাথা, বড় চোখ এবং ছোট মুখ। গায়ে ছাই রং-এর টাইট কাড় পরা। তবে পরে সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করে জানায় যে, তা শুধু আবহাওয়া পূর্বাভাসের একটি বেলুন। এমন খবর শুনে জনগণ নিশ্চিত মোটামুটি নিশ্চিত হন যেন,এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো গোপন বিষয় রয়েছে যা উন্মোচন করা যাবেনা।

এর ঠিক কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই-এর এজেন্ট-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমান বাহিনী নিউ মেক্সিকো রাজ্যে এলিয়েনের লাশসহ কিছু জিনিস পাওয়া গেছে ।

লোকজন এ দু'টি ঘটনার কথা শুনে বিশ্বাস করা শুরু করে যে, নিউ মেক্সিকো রাজ্যে সত্যি এলিয়েন পাওয়া গেছে। তবে এ রিপোর্টে সময় এবং স্থানসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয় নি, তা শুধু বিমান বাহিনীর এক তদন্ত কর্মীর পাওয়া এক ফোন অনুযায়ী লেখা হয়েছে। তাই তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে রয়েছে নানান ধরনের সন্দেহ।

পরে সরকারের এক ফাইল থেকে জানা যায়,তখন যে ভাঙা কিছু জিনিস পাওয়া গেছে, তা নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিরঙ্কুশ গোপন পরীক্ষা। তার উদ্দেশ্য হল আকাশে ভেসে থাকা বেলুন দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরমাণু পরীক্ষায় সৃষ্ট করা শক ওয়েভের পরীক্ষা করা। আর যে লাশ পাওয়া গেছে, তা আসলে বেলুন পরীক্ষায় ব্যবহৃত নকল মানুষ।

আমরা জানি না কখন মানব জাতির এলিয়েন খোঁজার বিশাল অগ্রগতি অর্জিত হবে, তবে আমরা আশা করি এমন প্রচেষ্টা কখনই থেমে থাকবে না। কারণ অন্য ধরনের সংস্কৃতি এবং ভিন গ্রহের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হল মানব জাতির চিরদিনের আকাঙ্ক্ষা। হ্যাঁ, যদি আরো উন্নত সংস্কৃতি বা নতুন কোনো বিষয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, তাহলে মানব জাতির সংস্কৃতিও আরো উন্নত হবে এবং বিজ্ঞানের জগতে উন্মুক্ত হবে নতুন এক জানালা। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040