0612yin
|
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এক বছর পার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। গত ২৬ মে ছিল তার ১ম বর্ষপূর্তি। ২৫ মে তিনি দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় উত্তর প্রদেশে বিজেপি'র সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত এক বছরে বিজেপি ভারতের জন্য পরিবর্তন ডেকে এনেছে। বিজেপির সংস্কার ব্যবস্থার কারণে জনসাধারণের জীবনযাপন উন্নত হয়েছে। মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার অব্যাহতভাবে ভারতের গরীবদের জন্য ব্যাপক কল্যাণ বয়ে আনবে। ক্ষমতাসীন হবার পর এক বছরে মোদি জনসাধারণের জন্য 'ভালো জীবন' উপহার দিতে কি পেরেছেন ? ভারতের জনমত 'মোদির নতুন নীতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করেছে ?
বিস্তারিত জানতে ভারতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতা সুন ইয়াংয়ের রিপোর্টটি শুনুন।
২৫ মে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে হিন্দু ধর্মের প্রাচীন নগর মাথুরায় মোদি প্রায় এক ঘণ্টা ভাষণ দিয়েছেন। লক্ষাধিক বিজেপি সদস্য এবং জনসাধারণের ব্যাপক করতালির মধ্যে মোদি তার বক্তব্য রাখেন। তাপমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে জনতার উত্সাহ।
গত বছরের কাজের মূল্যায়ন করে মোদি বলেছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর 'ছোট সরকার বড় প্রশাসন' প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন। বিজেপি সরকার ভারতের জন্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মোদি বলেছেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলো বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি ভারত অনেক বেশি আন্তর্জাতিক পুঁজি বিনিয়োগকারী সংস্থার আস্থা অর্জন করেছে। মোদি জোর দিয়ে বলেছেন, নতুন নীতির কারণে জনগণ আরো বেশি কল্যাণ উপভোগ করেছে। তিনি বলেন,
জনসাধারণের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আমরা নিম্নমূল্যের অবসর ভাতা পরিকল্পনা ব্যবস্থা করেছি। আমাদের দেশের কৃষকরা ৬০ বছরের পর অবসর ভাতা পাবে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় ভারতগামী পর্যটকের সংখ্যা ৬ লাখ বেড়েছে। এটা ভারতীয়দের জন্য আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
মোদি বলেন, দ্বিতীয় বছর অব্যাহতভাবে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকে উত্সাহ দেয়া উচিত। ঋণ সহায়তা বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া ভারত সরকার অব্যাহতভাবে 'পরিচ্ছন্ন ভারত' পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, প্রত্যেক গ্রামে পায়খানা নির্মাণের পাশাপাশি গঙ্গা নদীর দূষণ রোধ করবে। তিনি ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রত্যেক গরীব মানুষের 'থাকার ঘর' তৈরির প্রত্যাশা করেন। ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষকে তিনি বলেছেন, বিজেপি গরীবদের দারিদ্র্য মুক্তির চেষ্টা করবে, যাতে ভারতের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হয়।
২০১৪ সালের ২৬ মে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে। গত এক বছরে মোদি নির্মাণ শিল্প, কৃষি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নীতি তুলে ধরার চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করে বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য 'ভারত নির্মাণ' ও 'পরিষ্কার ভারত'সহ বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ শুরু করেছে। ভারত সরকারের কূটনৈতিক চাকাও জোর গতিতে ঘুরছে। এক বছরে মোদি ১৮টি দেশ সফর করেছেন। চার মহাদেশে তাঁর পদচিহ্ন পড়েছে।
'মোদির নতুন নীতি'তে ভারতের সরকারি বিভাগের কাজের দক্ষতা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হয়েছে। ঘন ঘন বৈদেশিক সফরের কারণে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ভারতের অর্থনীতিও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ভারতের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৭.৪ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মোদি সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে ভারতীয় জনসাধারণের মতামত বিভিন্ন রকমের।
মোদি সরকারের তত্পরতায় আমি সন্তুষ্ট। তিনি অনেক দেশ সফর করেছেন। ফলে ভারত আরো বেশি দেশের সমর্থন অর্জন করেছে।
কেউ কেউ বলেন,
আমি মনে করি ভারতের অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও এখনও তা অস্থিতিশীল এবং আরও উন্নয়ন দরকার। তবে, বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে।
আবার কেউ কেউ বলছেন,
মোদি সরকারের ওপর আমি অসন্তুষ্ট। কারণ তিনি জনগণকে অনেক বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করেননি।
জনমতের মিশ্র প্রতিক্রিয়াকে সামনে রেখে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এক বছরেই মোদির রাজনৈতিক অর্জন নিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব না। সংস্কার কার্যকর করে সুফল পেতে অনেক বেশি সময়ের দরকার। ভারতের 'আমার ওজালা' পত্রিকার এক প্রবীণ সম্পাদক বলেছেন,
এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, আরো বেশি সময় লাগবে। আমার মনে হয় কমপক্ষে দু'বছর পর কিছু ফলাফল দেখা যাবে। ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পর আমাদের প্রত্যাশা হলো, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিতে সংস্কার দেখতে চাই।
প্রেমা/তৌহিদ